
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুল রহমান
ধনীদের আয়কর বাড়ানোর পক্ষে এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুল রহমান। তিনি মনে করেন, ধনীদের কর বাড়ালে বৈষম্য কমবে।
মঙ্গলবার রাজস্ব ভবনে এক প্রাক বাজেট আলোচনায় এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
এনবিআর চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, “ব্যক্তির কর ৩০ শতাংশ করা উচিত। এটাকে আরও বাড়ানো উচিত। ভারতেও বেশি। উন্নত দেশে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ। এটাকে কমানো ঠিক হবে না। না হলে বৈষম্য কমবে না। তাহলে মানুষ হাতে কম টাকা রাখবে।”
প্রাক-বাজেট আলোচনায় ব্যক্তি পর্যায়ে করমুক্ত আয়সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে বাড়িয়ে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব দিয়েছে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই)। তার জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান এসব কথা বলেন।
বর্তমানে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর শূন্য, পরবর্তী এক লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর পাঁচ শতাংশ, পরবর্তী চার লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১০ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ১৫ শতাংশ, পরবর্তী পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত মোট আয়ের ওপর ২০ শতাংশ, অবশিষ্ট মোট আয়ের ওপর ২৫ শতাংশ আয়কর দিতে হয়।
আমদানি পর্যায়ে উৎপাদনকারীদের জন্য আগাম কর ধাপে ধাপে বিলুপ্তি ও বাণিজ্যিক আমদানিকারকদের জন্য আগাম কর কমানো ও সিংগেল ডিজিট ভ্যাট হারের প্রস্তাব করেছে ডিসিসিআই।
ডিসিসিআইয়ের সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, “বিদ্যমান উচ্চমূল্যস্ফীতির কথা বিবেচনা করে ব্যক্তিশ্রেণির করদাতাদের করমুক্ত আয়ের সীমা পাঁচ লাখ করা উচিত। ব্যক্তির সর্বোচ্চ কর কমানো উচিত।”
করজাল বাড়ানোর জন্য এনবিআরকে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। বাণিজ্যিক আমদানিতে আগাম কর কমানো, ভ্যাটের একক হার করারও প্রস্তাব দেন এই ব্যবসায়ী নেতা।
ডিসিসিআইয়ের বিভিন্ন প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালু, ব্যবসায়ীদের ওপর থেকে রিটার্ন জমার প্রমাণপত্র (পিএসআর) সংগ্রহে বাধ্যবাধকতা প্রত্যাহার করা, ভ্যাট ব্যবস্থা ডিজিটাল করতে ওয়েবসাইটের পাশাপাশি মোবাইল ফোন অ্যাপ তৈরি ও তা ব্যবসায়ীদের জন্য বাধ্যতামূলক করা এবং একক ভ্যাট হার ১০ শতাংশ করা।
করপোরেট কর রিটার্ন দেওয়ার সময় ম্যানুয়ালি জমা দিতে হয়। এতে বেশি সময় লাগে এবং ত্রুটিপূর্ণ বলে মন্তব্য করেন ডিসিসিআইয়ের সভাপতি। তিনি বলেন, “দ্রুত অটোমেটেড করপোরেট কর রিটার্ন চালু করা প্রয়োজন।”
কোম্পানির কর কম হওয়া উচিত বলে মনে করেন এনবিআর চেয়ারম্যান। তিনি বলেন, “ব্যবসায়ীদের তীব্র প্রতিরোধে ভ্যাটের একক হার হয়নি। তারাই এখন ভুগছে। সবাই একমত হলে, হার কিছুটা কমিয়ে হলেও একক হারে যাওয়া উচিত”
কোম্পানির কর কমানোর জন্য তিনি এফবিসিসিআইকে প্রস্তাব দিতে আহ্বান করেন।
বাজেট আলোচনায় বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন আলু কেনার ক্ষেত্রে ১ শতাংশ অগ্রিম আয়কর (এআইটি) হ্রাস করা, কোল্ড স্টোরেজের বিভিন্ন দ্রব্যাদি ক্রয়ের ক্ষেত্রে ভ্যাট ও এআইটি প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ ক্রপ প্রোটেকশন অ্যাসোসিয়েশন কীটনাশক, ছত্রাকনাশক, আগাছানাশক, মশার কয়েল, অ্যারোসেল, রিপিলেন্ট আমদানিতে করহার কমানোর প্রস্তাব দিয়েছে।
বাংলাদেশ অ্যাগ্রো প্রসেসর’স অ্যাসোসিয়েশন (বাপা) কৃষিজ পণ্য সরবরাহের বিপরীতে উৎসে কর কর্তনে অব্যাহতি, বিক্রয়ের ওপর ন্যূনতম আয়কর শূণ্য দশমিক ৬০ বাতিল করা, মূসকের আদর্শ হার হ্রাস করার প্রস্তাব দিয়েছে।
এসপিএফ বাগদা ও ভেনামি চিংড়ি আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ও আমদানি শুল্ক প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে শ্রিম্প হ্যাচারি অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ পেইন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন রঙ ও রঙ জাতীয় পণ্যকে অত্যাবশকীয় পণ্য হিসাবে বিবেচনা করে স্থানীয়ভাবে উৎপাদনের ক্ষেত্রে ১০ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে।
অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যান্যমুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ অর্জিত লভ্যাংশে ওপর প্রস্তাবিত করপোরেট কর হ্রাস করে ২০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
স্থানীয় বাজার থেকে চামড়া সংগ্রহকালে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফিনিশড লেদারগুডস অ্যান্ড ফুটওয়্যার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।