পায়রা বন্দর: ‘অর্থনীতির বিষফোড়া’ বলেও ব্যয় বাড়ল ৯১১ কোটি টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ মার্চ ২০২৫, ২২:৪৭

পায়রা বন্দর। ছবি- সংগৃহীত
আওয়ামী লীগ শাসনামলে পটুয়াখালীতে স্থাপিত পায়রা সমুদ্র বন্দরকে ‘অর্থনীতির জন্য বিষফোড়া’ বলে মূল্যায়ন করছেন অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।
তবে এই মূল্যায়ন করেও জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা-একনেকে বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা বিষয়ে একটি প্রকল্পের ব্যয় বাড়ানো হয়েছে ৯১১ কোটি টাকা; এও জানানো হয়েছে, বন্দরটি ভবিষ্যতে বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে।
রবিবার রাজধানীর শেরে বাংলানগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে সভাটি হয় প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে। সভা শেষে সাংবাদিকদেরকে সিদ্ধান্ত জানান পরিকল্পনা উপদেষ্টা।
ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বলেন, “পায়রা সমুদ্রবন্দর বলা হলেও মূলত একটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা আনতে এ বন্দর করা হচ্ছে। এটা সমুদ্র বন্দর তো দূরের কথা নৌ-বন্দরও হবে না। পায়রা বন্দর দেশের অর্থনীতির জন্য একটা বিষফোড়া হবে।”
একনেক সভায় বন্দরের প্রথম টার্মিনাল এবং আনুষঙ্গিক সুবিধা শীর্ষক একটি সংশোধিত প্রকল্প শর্তসাপেক্ষে অনুমোদন দেওয়া হয়। সংশোধিত প্রস্তাবে প্রকল্পের ব্যয় ৯১১ কোটি টাকা বাড়িয়ে ৫ হাজার ২২৮ কোটি টাকা করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ শাসনামলের সবশেষ সিদ্ধান্তে ৪ হাজার ৫১৬ কোটি টাকায় এই প্রকল্পটি শেষ করার কথা ছিল।
২০১৩ সালের ১৮ নভেম্বর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার টিয়াখালী ইউনিয়নে রামনাবাদ চ্যানেলের পশ্চিম তীরে ১৬ একর জমির উপর পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণের কাজ শুরু হয়।
এক হাজার ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ২০১৮ সালের মধ্যে এই সমুদ্র বন্দর নির্মাণের পুরো কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ২০১৬ সালের ১৩ আগস্ট বন্দরে পণ্য খালাসের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।
বন্দরের পাশাপাশি ওই অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র, নৌবাহিনীর ঘাঁটি ও সেনানিবাস স্থাপন করা হয়। রেল যোগাযোগও পায়রা পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার উদ্যোগ আছে।
এই সমুদ্র বন্দরটি ব্যবহারে প্রতিবেশী দেশ ভারতেরও আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
বন্দরটিকে নিয়ে আওয়ামী লীগ সরকারের উচ্ছ্বাস ছিল। বলা হচ্ছিল পদ্মা সেতু নির্মাণের পর এই সমুদ্র বন্দরটি দক্ষিণ জনপদের অর্থনীতির চিত্র বদলে দেবে।
তবে বিপরীত মূল্যায়ন করে অন্তর্বর্তী সরকারের পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, “পায়রা বন্দরের নাব্যতা ঠিক রাখতে বছরে দুই বার ড্রেজিং করতে হবে। প্রতি বছরে জ্রেডিং করে এবং আমদানি করা কয়লা পরিবহন করে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কতটুকু সুফল আসবে, তা দেখতে হবে।
“ক্ষতির পরিমাণ যদি বেশি হয়, তাহলে এই প্রকল্প রেখে লাভ হবে না। পায়রা নৌবন্দর তো দূরের কথা বড়জোর একটি ঘাট হতে পারে, ছোট ছোট নৌযান চলাচলের উপযোগী বন্দর।“
উপদেষ্টা আরও বলেন, “প্রকল্পে অনেক অর্থ খরচ হয়ে গেছে। মাঝপথে এসে প্রকল্প বন্ধ করে দেওয়া হবে কি না, তা বিবেচনার বিষয়। খরচ শুরুর আগে বা প্রকল্প নেওয়ার আগে থাকলে এই প্রকল্প নিতাম না।”
উপদেষ্টা জানান, ইতিমধ্যে পায়রা বন্দর প্রকল্পের ৭২ শতাংশ বাহ্যিক অগ্রগতি হয়েছে। প্রকল্পের অর্ধেক টাকা খরচ হয়ে গেছে।
পায়রার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত জানিয়ে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, “প্রকল্পটি শর্ত সাপেক্ষ অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। কারণ, এই প্রকল্পটি বাতিল হয়ে যেতে পারে। তবে বন্ধ করে দেওয়ার আগে ওইখানে বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য কয়লা পরিবহনের সুবিধার্থে কিছু প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণের জন্য আপাতত সেটি চালু থাকবে।”
পরিদর্শন শেষে এই প্রকল্পটি বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। পরিকল্পনা উপদেষ্টা নিজেই প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে এ সময়ে জানান তিনি।
পায়রা বন্দরের পরিবর্তে বিমানে কয়লা পরিবহনের প্রস্তাবও দিয়েছেন উপদেষ্টা।
একনেক সভায় ২১ হাজার ১৩৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকার মোট ১৫টি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়।
এর মধ্যে সরকারি তহবিলের ১৪ হাজার ১৯৩ কোটি, বৈদেশিক ঋণের ৬ হাজার ৫৩৯ কোটি ২৯ লাখ ও সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ৪০৬ কোটি ৫৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।