মার্কিন ক্রেতাদের পণ্য শিপমেন্ট স্থগিতে দুশ্চিন্তায় পোশাক রপ্তানিকারকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৭ এপ্রিল ২০২৫, ১৫:২৩

ছবি- সংগৃহীত
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক (ট্যারিফ) বৃদ্ধির ঘোষণার পর থেকে দেশটির পোশাক রপ্তানি খাতে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে অনেক মার্কিন ক্রেতা বাংলাদেশ থেকে পোশাকের শিপমেন্ট আপাতত স্থগিত রেখেছে, আবার বেশ কিছু ক্রেতা উৎপাদিত পণ্যে ডিসকাউন্টও চাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন এদেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে নতুন শুল্ক আরোপের পর ক্রেতারা রপ্তানি পণ্যের শুল্ক পরিশোধের বিষয়টি নিয়ে সংশয়ে আছেন। কিছু ক্রেতা ইতোমধ্যে সরবরাহকারীদের অতিরিক্ত শুল্ক বহন করতে বলেছে, আর কিছু প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে ডিসকাউন্টের দাবি করা হচ্ছে। যদিও এখনও অনেক ক্রেতা প্রতিষ্ঠান কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি। সেক্ষেত্রে মার্কিন ক্রেতাদের কাছ থেকে মঙ্গলবার স্পষ্ট বার্তা আসতে পারে।
প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ এম তানভীর বলেন, “ওয়ালমার্টের সাপ্ল্যায়াররা তাদের শিপমেন্ট স্থগিত করছে কারণ গ্রাহক তাদের এমন নির্দেশনা দিয়েছে। তবে আমাদের কোনো ক্রেতা আমাদের থেকে উৎপাদন স্থগিত করতে বলেনি, আমরা শিপমেন্ট নির্দেশনা অনুযায়ী উৎপাদন করছি।”
বিজিএমইএ’র সাবেক পরিচালক মহিউদ্দিন রুবেল বলেন, “কিছু ক্রেতা ইতোমধ্যে অতিরিক্ত ট্যারিফ শেয়ার করতে বলেছেন, তবে এটি রপ্তানিকারকদের জন্য খুবই কঠিন হবে। কিছু ছোট ক্রেতা ৩৭ শতাংশ শুল্কের কিছু অংশ শেয়ার করার জন্য বলছেন, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের আরও কিছুটা অপেক্ষা করতে হবে।”
এদিকে, রপ্তানিকারকরা শিপিং এবং কনটেইনার ডিপো কর্তৃপক্ষকে ৯ এপ্রিলের মধ্যে মার্কিন শুল্ক বৃদ্ধির এড়াতে শিপমেন্টকে অগ্রাধিকার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের শুল্ক বৃদ্ধির সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পের ওপর ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে বিশ্লেষকরা আশঙ্কা প্রকাশ করছেন। তারা জানান, ৩৭ শতাংশ নতুন শুল্ক বাংলাদেশের পোশাক খাতের জন্য মারাত্মকভাবে ক্ষতিকর হতে পারে, যা বাণিজ্য ব্যাহত করবে এবং মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমিয়ে দেবে।
বিজিএমইএর সাবেক সহসভাপতি রকিবুল আলম চৌধুরী জানান, “কন্টেইনার বন্দরে আটকে রয়েছে, সেগুলোর জন্য কর্তৃপক্ষ এবং শিপিং লাইনগুলোকে ব্যবস্থা নিতে হবে যাতে আগামী তিন দিনের মধ্যে সেগুলোর শিপমেন্ট সম্পন্ন হয়।”
ডিজাইনটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা মার্কিন ক্রেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি, তবে তারা বলেছেন যে শুল্ক বৃদ্ধির বিষয়ে অফিস খুললে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করবেন। তবে সময়ের মধ্যে ক্রেতাদের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যাবে।”
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২৪ সালে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে ৭২০ কোটি ডলারের পোশাক রপ্তানি করেছে। অন্যান্য পণ্য মিলে গত বছর যুক্তরাষ্ট্রে মোট রপ্তানি হয় ৮৫০ কোটি ডলারের পণ্য। তৈরি পোশাকের বাইরে উল্লেখযোগ্য অন্য রপ্তানি পণ্যের মধ্য রয়েছে– চামড়াজাত পণ্য, টেক্সটাইল সামগ্রী, ওষুধ, ফার্নিচার, প্লাস্টিক পণ্য, সিরামিক ও বিভিন্ন ধরনের কৃষিপণ্য।
তবে নতুন শুল্কের কারণে দেশটির বাজারে বাংলাদেশের পোশাকের প্রতি ক্রেতাদের আগ্রহ কমে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্যোক্তারা।