Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

বিয়ারিংয়ে ত্রুটির কারণে খুলে যায় উড়োজাহাজের চাকা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৯ মে ২০২৫, ১৬:২০

বিয়ারিংয়ে ত্রুটির কারণে খুলে যায় উড়োজাহাজের চাকা

ঢাকা খুলে যাওয়ার পরও নিরাপদে অবতরণ করে ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের বিমানটি।

কক্সবাজার থেকে ঢাকায় আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স বহরের ড্যাশ ৮-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজের চাকা খুলে যাওয়ার রহস্য উদঘাটিত হয়েছে।

বিয়ারিংয়ে ত্রুটির কারণে চাকা খুলে যায় বলে ওই ঘটনার তদন্তে গঠিত কমিটির তথ্যানুসন্ধানে উঠে এসেছে।

বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) রওশন কবীর তদন্ত কমিটির বরাত দিয়ে এই তথ্য জানিয়েছেন।

১৬ মে বিমানের ড্যাশ-৮৪০০ উড়োজাহাজের বাম দিকের ল্যান্ডিং গিয়ারের দুটি চাকার একটি উড্ডয়নের কিছুক্ষণ পরই খুলে যায়। পরবর্তীতে পাইলটের দক্ষতায় ঢাকায় নিরাপদে অবতরণ করে উড়োজাহাজটি।

বিমানের ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান কানাডার ডি-হেভিল্যান্ড এয়ারক্রাফট কোম্পানি।

শুক্রবার ঘটে যাওয়া ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখতে পায় যে, ডি-হেভিল্যান্ড কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ম্যানুয়ালে চাকার বিয়ারিং ক্রুটি দেখা দিলে সংশ্লিষ্ট চাকা অথবা টায়ার বিচ্যুত হতে পারে, যা সেদিনের ক্ষেত্রে ঘটেছে। ফ্লাইট নং বিজি-৪৩৬ উড়োজাহাজটি (S2-AJW) দুপুর ১টা ২১ মিনিটে কক্সবাজার বিমানবন্দর থেকে উড্ডয়নের পর উড়োজাহাজের একটি চাকা খুলে যায়।

পরবর্তীতে এই খবর কক্সবাজার কন্ট্রোল টাওয়ার থেকে বিজি-৪৩৬ ফ্লাইটের বৈমানিককে জানানো হয়। পরে উড়োজাহাজের বৈমানিক কক্সবাজার থেকে ঢাকা অভিমুখে যাত্রা অব্যাহত রাখেন এবং জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে নিরাপদে অবতরণ করাতে সক্ষম হন।

উড়োজাহাজটি নির্দিষ্ট পার্কিং বে-তে পোঁছানোর পর প্রকৌশলীরা বাম দিকের ল্যান্ডিং গিয়ারের একটি চাকা (২ নং) না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণে প্রতীয়মান হয় যে, চাকাটি ‘বিয়ারিং ফেইলরের’ কারণে আলাদা হয়।

উড়োজাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান ডি-হ্যাভিল্যান্ড কানাডার প্রণীত রক্ষণাবেক্ষণ ম্যানুয়ালের টাস্ক সূত্র ০৫-৫০-১৭-২১০-৮০১ অনুযায়ী চাকার ‘বিয়ারিং ফেইলর’ হলে সম্পূর্ণ চাকা আলাদা হতে পারে বলে উল্লেখ আছে।

‘বিয়ারিং ফেইলরের’ সঠিক কারণ তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন দেওয়ার পর জানা যাবে। পরবর্তীতে বিমান প্রকৌশল বিভাগের তাৎক্ষণিক সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে ঢাকায় অবস্থানরত সব ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজের চাকা পর্যবেক্ষণ করা হয়।

এরই মধ্যে ডি-হ্যাভিল্যান্ড কানাডার সঙ্গে যোগাযোগ করে অবিলম্বে টেকনিক্যাল স্টাফ পাঠানোর ব্যাপারে অনুরোধ করা হয়। ডি-হ্যাভিল্যান্ড কানাডা স্পেশালাইজড টিম পাঠাতে রাজি হয়।

এ ঘটনায় দুটি কমিটি গঠন করা হয়। চিফ অব ফ্লাইট সেফটির নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট সেফটি ইনভেস্টিগেশন কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া প্রকৌশল ও ম্যাটেরিয়াল ম্যানেজমেন্ট পরিদপ্তরের আওতায় অপর একটি তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।

এই কমিটি ঘটনার মূল কারণ অনুসন্ধান, এ সম্পর্কিত মেইন্ট্যানেন্সের শর্ত ও রেকর্ড পরীক্ষা এবং এমন ঘটনা পুনঃসংঘটন রোধে পরামর্শ দেবে। তিন কর্মদিবসের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়। উড়োজাহাজটিকে আবার যাত্রীসেবায় ফিরিয়ে নিয়ে আসতে কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করে বিমান কর্তৃপক্ষ।

উড়োজাহাজটির প্রস্তুতকারকের কাছে ঘটনাটি রিপোর্ট করে রক্ষণাবেক্ষণের জন্য পরামর্শ গ্রহণ করা হচ্ছে। উড়োজাহাজ নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের নির্দেশনা মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের পর বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ কর্তৃক পরীক্ষা-নিরীক্ষা পূর্বক উড্ডয়নের জন্য উড়োজাহাজটিকে যাত্রীসেবার জন্য উপযুক্ত বলে ঘোষণা করা হবে।

এ ধরনের অপ্রত্যাশিত ঘটনা মোকাবেলার জন্য বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃক আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বৈমানিকদের নিয়মিত সিমুলেটর প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। ফ্লাইট ক্রু ট্রেনিং/টেকনিক ম্যানুয়াল ৮.২৯ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, এহেন পরিস্থিতির উদ্ভব হলে টেকঅফকৃত বিমানবন্দরে পুনরায় অবতরণ না করে গন্তব্যের বিমানবন্দরে অবতরণের বিষয়ে বৈমানিককে সিদ্ধান্ত গ্রহণের দিকনির্দেশনা রয়েছে, যা ক্যাপ্টেন জামিল বিল্লাহ সম্পূর্ণভাবে পালন করে ঢাকায় অবতরণ করেছেন। ক্যাপ্টেন বিল্লাহ সর্বোচ্চ দক্ষতার সঙ্গে প্রাপ্ত প্রশিক্ষণের সফল প্রয়োগ প্রদর্শন করেছেন।

বিশ্বজুড়ে এমন ঘটনা নতুন নয়

ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজের অন্যতম প্রধান ব্যবহারকারী বিমান সংস্থা ইথিওপিয়ান এয়ারলাইন্সে বর্তমানে ৩১টি ড্যাশ-৮ উড়োজাহাজ আছে। গত তিন বছরে শুক্রবারের মতো চারটি ঘটনা ওই বিমান সংস্থায় সংঘটিত হয়েছে।

ডি-হ্যাভিল্যান্ড কানাডার তথ্য অনুযায়ী, ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ মডেলের উড়োজাহাজে ২০১৩ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত চাকা সংশ্লিষ্ট মোট ৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ এয়ারক্রাফট একটি অত্যন্ত নিরাপদ উড়োজাহাজ। এই উড়োজাহাজটির ল্যান্ডিং গিয়ার সিস্টেমে রিডান্ডেন্সি আছে। কাজেই একটি চাকা অপ্রত্যাশিতভাবে অকেজো থাকলে তা ফ্লাইট সুরক্ষাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে না।

সাধারণত যেকোনো বাণিজ্যিক বিমানের নকশার সময় ফ্লাইট সেফটি সম্পর্কিত প্রতিটি যন্ত্রাংশ বা সিস্টেমের নিরাপদ অপারেশন নিশ্চিতকল্পে রিডান্ডেন্সি বা ব্যাক-আপ থাকে। একইভাবে ড্যাশ-৮ কিউ-৪০০ উড়োজাহাজের প্রতিটি ল্যান্ডিং গিয়ারে দুইটি করে চাকা থাকে যাতে কোনো কারণে একটি চাকা বিকল হয় বা একটি চাকার সমস্যা হয় তাহলেও ইমার্জেন্সিতে উড়োজাহাজটি নিরাপদে অবতরণ করতে পারে।

বিমানের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বিমান সম্মানিত যাত্রীদের এবং উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণে অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও পেশাদারত্বের প্রদর্শন করে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে বিমান ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষ জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুযায়ী যাত্রীসেবা প্রদান এবং উড়োজাহাজের রক্ষণাবেক্ষণের স্বীকৃতি স্বরূপ বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের রয়েছে সিভিল এভিয়েশন পার্ট-১৪৫ সার্টিফিকেশন, বিমানের ইঞ্জিনিয়ারিং ট্রেনিং বিভাগের রয়েছে ইউরোপীয় বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ EASA পার্ট-১৪৭ সার্টিফিকেশন।

এছাড়াও বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের রয়েছে অপারেশনাল রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কিত আইওএসএ সার্টিফিকেশন এবং গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সম্পর্কিত আইএসএজিও সার্টিফিকেশন।

এসব সার্টিফিকেটের নিয়মিত অডিট সম্পন্ন করে থাকে নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষ ও বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ।





Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫