Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

চট্টগ্রাম বন্দরে ‘বিদেশি কোম্পানি’: সরকারের আগ্রহের কারণ কী?

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ মে ২০২৫, ১৬:১১

চট্টগ্রাম বন্দরে ‘বিদেশি কোম্পানি’: সরকারের আগ্রহের কারণ কী?

রবিবার পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা সাংবাদিকদের সংগঠন সিএমজেএফর এক আয়োজনে বক্তব্য রাখেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে প্রতিবাদ এবং এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলার পরও অন্তর্বর্তী সরকার যে চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে দেওয়ার প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছে, তা উঠে এলো প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলমের বক্তব্যে। কেন সরকার এই কাজ করতে আগ্রহী সেটিও জানিয়েছেন তিনি।

তার মতে, এতে বন্দরের ব্যবস্থাপনা ভালো হবে এবং এর প্রভাবে বাংলাদেশে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ বাড়বে এবং বাংলাদেশ একটি উৎপাদনে হাবে পরিণত হবে।

শফিকুলের মতে, এটি বন্দরকে কারও হাতে তুলে দেওয়া নয়, বরং বড় ধরনের সংস্কার।

রবিবার দুপুরে রাজধানীর পল্টনে পুঁজিবাজার নিয়ে কাজ করা প্রতিবেদকদের সংগঠন ক্যাপিটাল মার্কেট জার্নালিস্ট ফোরাম কার্যালয়ে আয়োজিত সিএমজেএফ টক অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রেস সচিব।

তিনি বলেন, “আমরা চট্টগ্রাম বন্দরের ‘বড় সংস্কার’ করতে চাচ্ছি যাতে বিশ্বের সবচেয়ে বড় কোম্পানি এর পরিচালনা করতে পারে।”

চট্টগ্রাম বন্দরের দক্ষতার মাত্রা দ্রুত এগিয়ে নিতে পারলে তার বহুমাত্রিক প্রভাব অর্থনীতিতে পড়বে বলেও দাবি করেন তিনি।

২০২৪ সালের ৮ আগস্ট ক্ষমতায় আসা অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি সিদ্ধান্ত নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা ও সমালোচনা তুঙ্গে। এর একটি হলো চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং টার্মিনালের ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত।

অনির্বাচিত সরকারের এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার আছে কি না, এ নিয়েও প্রশ্ন তুলছে বিএনপি থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল।

রবিবার জামায়াতের আমির শফিকুর রহমানও এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার দায়িত্ব নির্বাচিত সরকারের হাতে ছেড়ে দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এর আগে বিএনপিও বন্দর ব্যবস্থাপনা বিদেশিদের হাতে ছাড়ার বিরোধিতা করেছে। বন্দরের শ্রমিক সংগঠনগুলোও এ নিয়ে প্রতিবাদ জানাচ্ছে।

কেন এই আগ্রহ সরকারের

প্রেস সচিব দাবি করেন, বিশ্বের সবচেয়ে সস্তা শ্রমের কারণে বাংলাদেশ বিশ্বের উৎপাদনের হাব হবে। তিনি বলেন, “ম্যানুফ্যাকচারিং হাব তৈরি করার মূল শর্ত হচ্ছে বন্দরকে দক্ষ করতে হবে, এই দক্ষতা অন্য মাত্রায় নিতে হবে।”

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের দাবি, চট্টগ্রাম বন্দরের টার্মিনাল ব্যবস্থাপনা বিদেশি কোম্পানির হাতে গেলে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়বে পুরো অর্থনীতিতে।

বন্দর ব্যবস্থাপনার এই প্রযুক্তি দেশে নেই বলে মন্তব্য করে শফিকুল বলেন, “ব্যবস্থাপনার দক্ষতাও আমাদের তৈরি হয়নি। এটার জন্য আমরা বিদেশের সবচেয়ে বড় বড় কোম্পানির সাথে কথা বলছি।”

দুবাই পোর্ট ডিপি ওয়ার্ল্ড ছাড়াও এপি মূলার মার্কস ও সিঙ্গাপুরের পোর্ট অফ সিঙ্গাপুর অথরিটির সঙ্গে সরকার কথা বলেছে জানিয়ে তিনি বলেন, “ওরা যদি পরিচালনা করে, তাহলে আমাদের বন্দরের দক্ষতা বাড়বে। আর বন্দরের দক্ষতার দিকে তাকিয়ে থাকে বিশ্বের বড় বড় কোম্পানিগুলো।

“যারা উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করে, তারা তখন চিন্তা করবে যে, ওকে দিস ইজ হাই টাইম টু ইনভেস্ট ইন বাংলাদেশ।”

‘দুই কারণে বিদেশি বিনিয়োগ আসবে’

বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগের বড় ধরনের প্রবৃদ্ধির আশা করছেন প্রেস সচিব। তার বিবেচনায় এর কারণ দুটি।

বিশ্বে এখন বাণিজ্যের সংরক্ষণ চলছে। সেখানে বাংলাদেশ একটি সুবিধাজনক অবস্থানে আছে- দাবি তার।

এর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, “বড় বড় দেশ একে অপরের বিপরীতে শুল্ক আরোপ করছে। এর কারণে ‘লো কস্ট ম্যানুফ্যাকচারিং; কারখানাগুলো খুঁজছে কোন দেশে গেলে তাদের এই ধরনের শুল্ক দিতে হবে না, কোন দেশে গেলে কম খরচে শ্রমিক পাওয়া যাবে।

“তো বাংলাদেশের চেয়ে ভালো গন্তব্য পুরো বিশ্বে এখন নাই। তো সেই আলোকেই আমাদের প্রধান উপদেষ্টা চাচ্ছিলেন বাংলাদেশকে একটা উৎপাদনের হাব তৈরি করা।”

আগামী জুনে চীনের বাণিজ্য মন্ত্রীর নেতৃত্ব ১৫০ জনের মতো বিনিয়োগকারী আসবেন জানিয়ে তিনি বলেন, “চীনারা যদি বাংলাদেশে আসে, আমরা যে জব গ্রোথটা চাচ্ছি, এটা খুব দ্রুত হবে।”

‘এনবিআর বিলুপ্তি বাড়াবে রাজস্ব’

জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে বিলুপ্ত করে দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠান সরকার কেন করতে গেল, এ নিয়েও কথা বলেন প্রেস সচিব।

প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিবের দাবি এনবিআরের বিলুপ্তি রাজস্ব বাড়াবে।

তিনি বলেন, “আমাদের রাজস্ব আদায়টা সব সময় কম ছিল। এটার কারণ আমরা প্রচুর করছাড় দিয়েছি এবং কর আদায়ের পদ্ধতিটি খুব অদক্ষ ছিল। সরকার এই জায়গাটায় গুরুত্ব দিয়েছে। সেই আলোকেই কিন্তু এনবিআরকে দুভাগ করা হয়েছে। এটার ফলে আমরা মনে করি যে কর আদায় বাড়বে।”

বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার পর টাকার অবমূল্যায়ন হয়নি বলে দাবি করে প্রেস সচিব বলেন, “এটা নির্দেশ করে যে, সংস্কার ভালো সংকেত দিচ্ছে।”

নতুন উচ্চতায় যাবে পুঁজিবাজার

পুঁজিবাজার নিয়ে প্রধান উপদেষ্টার পরিকল্পনা তুলে ধরেন শফিকুল আলম।

তিনি বলেন, “অধ্যাপক ইউনূস বলছেন, এখানে খুব শক্তিশালী এবং খুব গভীর সংস্কার করতে হবে। এই সংস্কার যে করবে, তারা হচ্ছে এই গোষ্ঠী স্বার্থের অনেক দূরের লোক। তারা নির্মোহভাবে সংস্কার করবে।”

তিন মাসের মধ্যে বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে সংস্কারের কথা জানিয়ে প্রেস সচিব বলেন, “পুঁজিবাজার কোনো গোষ্ঠীর কাছে জিম্মি থাকবে না। কোনো গোষ্ঠী যেন মনে না করেন যে, এখান থেকে আমি আমার মতো করে টাকা বানাব।“

পুঁজিবাজার ‘ডাকাতদের আড্ডা’ হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করে তিনি আরও বলেন, “অতীতে যারাই পুঁজিবাজারের সংস্কারে দায়িত্ব নিয়েছেন, তারাই বিভিন্ন গোষ্ঠীর তাঁবেদারি করেছে।

“এই গোষ্ঠীটা একটা উদ্দেশ্য সাধন করছে, ওই গোষ্ঠীর প্রতিপক্ষ এসে আরেকটা করেছে। ফলে দেখা গেছে যে, যারা বড় বড় ‘খেলোয়াড়’, তারা সবসময় সুবিধাপ্রাপ্ত হয়েছে।”

সার্বিক অর্থনীতির সংস্কার হলে পুঁজিবাজার খুব দ্রুতেই নতুন উচ্চতায় উঠবে বলেও আশা করেন তিনি। বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে পারলে তারও ইতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য বলে মনে করেন তিনি।

মূল্যস্ফীতি ‘এক শতাংশের নিচে নামবে’

মূল্যস্ফীতি কমানো সরকারের একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ ছিল বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “নীতি সুদহার বাড়াতে বাড়াতে এখন ১০ শতাংশের বেশি, ওটা করার পরে মূল্যস্ফীতি কমা শুরু হয়েছে।

“আমাদের সেন্ট্রাল ব্যাংকের গভর্নর বলেছেন, এই বছরের শেষে মূল্যস্ফীতি ১ শতাংশের নিচে আনবে।

নির্বাচন প্রসঙ্গ

অনুষ্ঠানে প্রেস সচিব কথা বলেন জাতীয় নির্বাচন নিয়েও। তিনি বলেন, “আগামী বছরের ৩০ জুনের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হবে, এর বাইরে যাবেন না প্রধান উপদেষ্টা।”

“আগের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব ছিল কেবল নির্বাচন করা কিন্তু বর্তমান সরকারের দায়িত্ব সংস্কার, বিচার ও নির্বাচন”, বলেন তিনি।












Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫