Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

গ্রামে দুই টাকার তালের শাঁস ঢাকায় ৩০

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৫, ১৩:১১

গ্রামে দুই টাকার তালের শাঁস ঢাকায় ৩০
বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে থাকেন আসিফ আকবর। নিজ গ্রাম টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে যাওয়া হয় না খুব একটা। বাজার করতে কারওয়ান বাজারে গিয়ে তিনি প্রিয় তালের শাঁস দেখতে পেলেন। খাওয়ার ইচ্ছা থেকেই দাম জিজ্ঞেস করলেন। বিক্রেতা একটি তালের দাম চাইলেন ৩০ টাকা।

এই দাম শুনে আসিফের চোখ যেন কপালে উঠে এলো! কারণ, তার বাড়িতে থাকা চারটি গাছের তাল বিক্রি হয় ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। প্রতিটি তালের দাম পড়ে প্রায় দেড় থেকে ২ টাকা করে।

গাছ থেকে এত কম দামে তাল বিক্রি হয়ে ঢাকায় খুচরাতে এতো বেশি দামে কিনে খাওয়ার ইচ্ছা আর হলো না তার। পণ করলেন যে ঈদের ছুটিতে গ্রামে গিয়েই তাল খাবেন। শুধু তাল নয়, আরও অনেক জাতের ফলই গ্রামে কম দামে বিক্রি হলেও একই ফল ঢাকায় আকাশ ছোঁয়া দামে বিক্রি হচ্ছে।

খুচরা বিক্রেতারা ৪ থেকে ৫ টাকায় একটি তাল কিনে খুচরায় বিক্রি করছেন ৩০ টাকায়।

কারওয়ান বাজারে পাইকারি বাজারে দেখা গেল, খুচরা বিক্রেতারা ৪ থেকে ৫ টাকায় একটি তাল কিনে খুচরায় সেই একই তাল বিক্রি করছেন ৩০ টাকায়। এ নিয়ে ব্যাপক অসন্তোষ ক্রেতাদের মনে।

কারওয়ান বাজারের তালের পাইকারি বিক্রেতা জহির উদ্দিন বলেন, “আমার এখানে যে তাল আছে, সেগুলো আসছে যশোর থেকে। তালের তো দাম কমে-বাড়ে। যেমন বৃষ্টির দিন দাম অনেক কমে যায়। আবার রোদ উঠলে দাম কিছুটা বেড়ে যায়। মাঝেমধ্যে কমে গিয়ে ৫ টাকার নিচেও নামে, আর বেশি হইলে বড়জোর ৭-৮ টাকা দাম হয়।



কাঠালবাগানের বীর উত্তম সি আর দত্ত সড়কে ভ্যানে করে তাল বিক্রি করছেন মো. শাহজালাল। রাত ৮টায়ও বেশ ভিড় দেখা গেল। তিনি প্রতিটি তাল বিক্রি করছেন ৩০ টাকা করে।

কত টাকায় তাল কিনেছেন সে তথ্য জানতে চাইলে প্রথমে কথা বলতে রাজি হননি। পরে ক্রেতারা জোর করলে বলেন, “ভাই, আমার তো ব্যবসা এটা। ১০ টাকা করে কিনছি। এখন আমি যদি বেশি দামে না বেচি আমার তো পোষাবে না। আমি তো কেটে শ্বাস বের করে দিই।”

কারওয়ান বাজারে হিমসাগরের কেজি ৫০, বাইরে ১২০

এদিকে ফলের মাস খ্যাত জ্যৈষ্ঠের শুরু থেকেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে হরেক রকমের ফল। বিশেষ করে আম, জাম, কাঁঠাল, লিচু, তালের শাঁস ও করমচাসহ গ্রীষ্মের নানা ফল।

মৌসুমি এই ফলগুলো কিনতে ক্রেতারাও ঘুরছেন বাজারে বাজারে। তবে এখনও পুরোপুরি পরিপক্ব হয়ে সব ধরনের ফল বাজারে আসেনি, তাই উচ্চমূল্যেই ফল কিনছেন ক্রেতারা। আর আগাম যে-সব ফল বাজারে এসেছে সেগুলোর দামই মূলত বেশি হাঁকছেন বিক্রেতারা।


কারওয়ান বাজারে হিমসাগর আমের পাইকারি মূল্য ৫০ টাকা। কিন্তু মাত্র ১ কিলোমিটার দূরত্বে গিয়েই খুচরায় বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।

ফার্মগেট এলাকায় হিমসাগর আম বিক্রি করছেন জাহাঙ্গীর আলম। তিনি সাতক্ষীরা থেকে এই জাতের আম এনেছেন। ভাড়াসহ সব খরচ মিলিয়ে তার প্রতি কেজি আম কেনা পড়েছে ৮০ টাকা কেজি। আর বিক্রি করছেন ১২০ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজিতে তিনি লাভ করছেন ৪০ টাকা।

কেজি প্রতি এত লাভ করার কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলো তো মামা কাচা মাল। পইচা যাওয়ার সুযোগ থাকে, তাই না? এই যে মালগুলো নিয়া বইছি যে, সব কি বিক্রি হইব? কিছু মাল নষ্ট হইব। আরও আনার সময় কিছু মাল নষ্ট হইছে। আর লাভ না করলে তো ব্যবসা টিকব না আমার।”

বৃষ্টির দিনে কমে ফলের দাম

কারওয়ান বাজারে মিলন এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা মিজানুর রহমান বলেন, “আজ বৃষ্টি হচ্ছে। আবার বাজারে মাল বেশি। তাই দাম কমে গেছে দুই দিন ধরে।” হিমসাগরের মতো একই দরে বিক্রি হচ্ছে গোপালভোগ। বাজারে গোবিন্দভোগ আমও পাওয়া যাচ্ছে। তবে পাইকারিতে প্রতি কেজির দর পড়ছে ৭০ টাকা।

বাজারে মৌসুমি ফলের মধ্যে দাম বেশি কাঁঠাল, লিচু এবং জামের। মোটকথা আম ছাড়া সব ফলের দামই বেশি। এই বেশির কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা এই বছর ফলন কম হওয়ার কথা বলছেন।

এই বাজারের লিচু বিক্রেতা বিক্রেতা শাহ আলম বলেন, “এ বছর বাজারে লিচুর সরবরাহ কম, শুনতেছি ফলন-ই নাকি কম হইছে। এজন্য বাজারে আসতে না আসতেই লিচুর সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। কয়েকদিন পরে দেখবেন দাম আরও বাড়ব।”

শাহ আলম বিক্রি করছেন পাবনা জেলার ঈশ্বরদী ও দিনাজপুর থেকে আসা লিচু। তিনি এক শ বেলওয়ারি লিচু বিক্রি করছেন ৪০০ টাকায়, আর বোম্বাই লিচু বিক্রি করছেন ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়।

মগবাজার থেকে কারওয়ান বাজারে ছেলে-মেয়ের জন্য লিচু কিনতে এসেছেন জাহাদ আলী। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন।

১০০ বোম্বাই লিচু বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়
সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “বাচ্চারা লিচুর পাগল। কিন্তু লিচুর যে দাম। কেমনে কিনব। আমার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে গেলেই তো নিজেদের বাড়িতে প্রচুর লিচু খাওয়াইতে পারি। কিন্তু ব্যস্ততার কারণে যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছি না। তাই কয়েকদিন পর পর অল্প অল্প করে কিনি। কিন্তু দামটা এতো বেশি যে আমাদের আয়ত্বে নাই।”

বাজারে কাঁঠালের দর পড়ছে আকারভেদে প্রতিটি ১৫০ থেকে ২৫০ টাকা। সর্বোচ্চ ৩০০ টাকাতেও বিক্রি হচ্ছে কাঁঠাল।

কাঁঠাল বিক্রেতা মো. খোরশেদ বলেন, “এখন ভালো কাঁঠাল সব জায়গায় পাওয়া যাবে না। আর দামও কিন্তু অনেক বেশি। কয়েকদিন গেলে গাছপাকা বা পরিপক্ব কাঁঠালও পাওয়া যাবে। দামও কমে যাবে।”

জাম এখন দামি ফলের তালিকায়

দামি ফলের তালিকায় জামও রয়েছে। কারওয়ান বাজারে খুচরায় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে জাম।
কারওয়ান বাজারে জাম বিক্রেতা কাজল দাস বলেন, “জাম তো আর চাষ করা হয় না। আবার দিনদিন গাছ কাটা হলেও গাছ লাগানো হয় না। তাই উৎপাদন কমতেছে। এজন্য সরবরাহও কম। ফলে বিক্রিও হচ্ছে বেশি দামে।”


কারওয়ান বাজারে কাউফল পাওয়া যাচ্ছে, তবে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে। একই দরে বিক্রি হচ্ছে ডেউয়া।

বিক্রেতা মো. মোখলেস বলেন, “গাজীপুর-টাঙ্গাইল এলাকায় এই কাউফল হয়। আগে এই ফল আসে নাই। সপ্তাহখানেক ধরে ফলটা আসছে। কিন্তু সরবরাহ খুব বেশি না।”

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বিক্রেতারা আম, জাম, কাঁঠাল, লিচুসহ বিভিন্ন ফলের ডালা সাজিয়ে বসেছেন। ক্রেতারাও এসব ফলগুলো নেড়েচেড়ে দেখে দামদর জিজ্ঞেস করছেন। এসব ফল শুধু বাজারেই নয়, পাড়া-মহল্লাতেও পাওয়া যাচ্ছে।

ফার্মগেট ফুটওভার ব্রিজে জাম বিক্রি করছেন বাদল মিয়া। সর্বনিম্ন ২০ টাকায় বিক্রি করেন তিনি। দেশকাল নিউজ ডটকমকে বললেন, “কারওয়ান বাজার থেকে ১০০০ টাকা পাল্লা (৫ কেজি) হিসেবে কিনছি। ২০০ টাকা কেজি হিসেবে পড়ছে। আর বেচতাছি ৩০০ টাকা কেজি হিসেবে। বাজারে জামের আমদানি এখনও কম। দিন যত যাইব, দাম ততো কমব। সপ্তাহখানেক পরে আমদানি বাড়ব। জাম পাকে মূলত বৃষ্টিতে।”

বাদলের পাশেই করমচা ও গোলাপজাম বিক্রি করছেন আলাল মিয়া। ফল দুইটি ১০০ গ্রাম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। তিনি বলেন, “যেই দামে বেছি তার চাইতে কিছুডা কমে আমার কিনা হইছে। আমার ব্যবসা ছোড। একটু লাভ তো করন লাগেই।”

বাজারে করমচা ও গোলাপজাম এতোদিন খুব বেশি সরবরাহ না থাকলেও এখন পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতাদের মুখরোচক এই ফল দুইটি বাজারে প্রতি কেজি ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকায় পাওয়া গেলেও আলাল মিয়া বিক্রি করছেন ৬০০ টাকা কেজি হিসেবে।

আলাল মিয়ার কাছ থেকে মেয়ের জন্য ১০০ গ্রাম করমচা ও ১০০ গ্রাম গোলাপজাম কিনলেন তেজগাঁওয়ের বাসিন্দা কণিকা দাস।

সাম্প্রতিক দেশকালকে তিনি বলেন, “মৌসুমি দেশি জাতের ফল দেখলেই ভালো লাগে। তাই হাঁটাচলার মাঝেও যদি পাই কিনতে ইচ্ছে করে। আর আমার মেয়েরও বেশ প্রিয় এসব ফল। মমৌসুম শুরু হলেও এখনও দাম কম পাওয়া যাচ্ছে না। আরও দাম কমলে ভালো হয়।”

বৃষ্টিতে ক্রেতা সংকটে ব্যবসায়ীরা

কারওয়ান বাজারে ভ্যানে করে আম বিক্রি করেন আব্দুল লতিফ। তিনি বলেন, “আজ বৃষ্টির কারণে ক্রেতা নাই মামা। দিনডা খারাপ গেল। সকাল থেকে এই বিকাল পর্যন্ত মাত্র ৭-৮ কেজির মতো আম বেচছি। আর ভালো দিনে সর্বোচ্চ ৭০ কেজির মতোও বিক্রি হইছে।”

তিনি ছোট আকারের হিমসাগর বিক্রি করছেন ৭০ টাকা কেজি দরে, আর পাহাড়ি গুটি আম বিক্রি করছেন ৬০ টাকায়।

কাঠাঁল ও বেল নিয়ে বৃষ্টিতে ছাতা মাথায় নিয়ে বসে আছেন আকবর হোসেন। তিনি বলেন, “আজ বেচাবিক্রি নাই। কাস্টমার আহে না। বৃষ্টি বাড়লে মাল বেচতে হয় কমদামে। ওইযে কাস্টমার নাই। এমনে কইরা পোষায় না।”















Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫