
কারওয়ানবাজারে মসলা নিয়ে বসে আছেন দোকানি
কোরবানি ঈদের বাকি সাতদিন। এই ঈদে রন্ধনশীল্পে মশলা জাতীয় পণ্যের প্রয়োজন বেশি। তাই তো মসলার বাজারে গিয়ে ঈদ ঘনিয়ে আসার আঁচ পাওয়া গেছে।
দোকানিরা বাহারি মশলার পসরা সাজিয়ে বসে আছেন। ক্রেতা তেমন না ভেড়ায় আগের চেয়ে কম দামে মসলা বেচাকেনা চলছে। অন্যদিকে, কিছু সবজির দাম বাড়লেও মুরগি ও ডিমের বাজারে স্বস্তি মিলছে ক্রেতাদের।
শুক্রবার রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও তেজকুনিপাড়া বাজার ঘুরে এসব চিত্র দেখা গেছে।
কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটে পাইকারি দামে প্রতি কেজি দারুচিনি বিক্রি হচ্ছে ৫২০ টাকা, লবঙ্গ এক হাজার ৬০০, এলাচ চার হাজার ৭০০ থেকে পাঁচ হাজার ৭০০ ও কালো গোল মরিচ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ২০০ টাকা কেজি দরে।
পাইকারি মশলা বিক্রেতা মো. আনোয়ার বলেন, “এখন বেচাকেনা নেই। দামও নেই। কাস্টমার যদি বেশি থাকত, তাহলে দাম কিন্তু আগুন হইত।”
ঈদের আগে মসলার দামে নড়চড় হতে পারে বলে জানান বিক্রেতার। তিনি বলেন, “ঈদের আগ মুহূর্তে এখনও মশলার দাম খুব বেশি বাড়েনি। তবে অনেক ব্যবসায়ী দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করছেন। কাস্টমার যখন পুরোপুরি ভিড়বে, তখনই মশলার দাম বাড়িয়ে দেবে।”
বছরখানেক আগে এলাচের দাম বর্তমান বাজারের চেয়ে কিছুটা বেশিই ছিল দাবি করে এই বিক্রেতা বলেন, “গতবছর এলাচ ছয় হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেছি। ঈদকে কেন্দ্র করে মশলার বাজারে এখনও অস্থিরতা নেই।”
কিচেন মার্কেটের নিচতলায় খুচরায় মশলা বিক্রি হয়। সেখানে প্রতি কেজি এলাচ মান ভেদে চার হাজার ২০০ টাকা থেকে সাত হাজার পর্যন্ত দাম চাইছেন বিক্রেতারা, লবঙ্গ চার হাজার ও দারুচিনির দাম হাঁকছেন ৬০০ টাকা কেজি।
মায়ের দোয়া জেনারেল স্টোরের বিক্রেতা বলেন, “কোনো মশলার দামই এখনও বাড়েনি। দেখেন না কাস্টমার কম। কাস্টমার যদি ভিড় জমায় তখন দাম বাড়বে।”
মশলা ক্রেতা রোকসানা খানম বলেন, “দাম মনে হয় না বাড়ছে। এখন আধা কেজি করে বিভিন্ন মশলা কিনলাম। আমার দাম ঠিক লেগেছে। পরিচিত এক পাইকারি দোকান থেকেই সবসময় নেই। খুচরাতে দাম বেশি চায়।”
কারওয়ান বাজারে পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা। তবে পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। আলু বিক্রি হচ্ছে আগের দর ২০ টাকা কেজিতেই। আর পাড়া-মহল্লার দোকানে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়।
প্রতি কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। আর দেশি রসুন ১০ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি ১৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। থাইল্যান্ডের আদা ২০ থেকে বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়, চায়না আদা ১৮০ ও ভারতীয় আদা ১২০ টাকা।
বিক্রেতা ওয়াকিল মিয়া বলেন, “সামনে কোরবানির ঈদ না? দাম না বাড়লে ব্যবসা চলব?”
সবজির বাজারে দরদাম
সপ্তাহের ব্যবধানে ১০ টাকা বেড়ে উচ্ছে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা কেজি দরে, ঢ্যাঁড়স, করলা ও চিচিঙ্গা আগের দর ৩০ টাকা কেজিতেই বিক্রি হতে দেখা গেছে।
বাজারে বরবটি ও বেগুন পাওয়া যাচ্ছে ৪০ টাকায়, প্রতিটি চাল কুমড়া পাওয়া যাচ্ছে আগের দর ৩০ টাকায়। বিক্রেতারা প্রতিটি লাউ বিক্রি করছেন ৪০ টাকায় ও প্রতি কেজি টমেটো ক্রেতাদের কিনতে হচ্ছে ৬০ টাকায়। অথচ সপ্তাহ খানেক আগে টমেটোর দর ছিল ৪০ টাকা।
পাঁচ টাকা কমে হাইব্রিড জাতের প্রতি কেজি শসা ৩৫ টাকায়, আর দেশি শসা ১০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে। প্রতি কেজি কচুর লতিতে কমেছে ১০ টাকা, বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা দরে, আর পটল ১০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়, বরবটি ৪০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে সবচেয়ে দামি সবজিটি হচ্ছে সজনে ডাটা, ক্রেতাদের প্রতি কেজি সজনে ডাটা কিনতে হচ্ছে ১০০ টাকা দরে।
তেজকুনিপাড়া বাজারে আসা ক্রেতা নাজমুল আলম বলেন, “আমি সপ্তাহের বাজার সবসময় কারওয়ান বাজার থেকে কিনি। কিন্তু আজ (শুক্রবার) বৃষ্টি থাকায় এখান থেকে নিচ্ছি। কিন্তু এখানে দাম একটু বেশি।”
কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা জুয়েল আহমেদ বলেন, “এখন বৃষ্টি যে হারে পড়তেছে বাজার এখনও নিয়ন্ত্রণে। যদি বন্যা হয়, তাহলে বাজার কোন দিকে যায় কেউ অনুমানও করতে পারবে না। আর টমেটোর দাম বেশি বাড়ছে কারণ সরবরাহ কমে গেছে। খেতে খুব বেশি নাই।”
‘কিছু মাছের দাম কমছে, কিছু বাড়ছে’
বাজারে তেলাপিয়া মাছের দাম কমেছে প্রতি কেজিতে অন্তত ২০ টাকা, ক্রেতারা কিনতে পারছেন ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা কেজিতে। আর একই দরে বিক্রি হচ্ছে গরিবের মাছ নামে খ্যাত পাঙাস।
দাম বেড়েছে রুই মাছের, প্রতি কেজিতে বেড়েছে ২০ টাকা। দাম বেড়ে এক কেজি ওজনের রুই বিক্রি হচ্ছে ৩০০ টাকায়, আর দেড় কেজির রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩২০ টাকায়। এরচেয়ে বেশি ওজনের রুই ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ক্রেতাদের এক কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে হচ্ছে এক হাজার ৮০০ টাকা দরে, এক কেজি ১০০ গ্রাম দুই হাজার টাকা, আর দেড় কেজি ওজনের ইলিশ কিনতে হচ্ছে দুই হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
মাছ বিক্রেতা মো. সেলিম বলেন, “গত সপ্তাহের তুলনায় কিছু মাছে দাম কমছে, আবার কিছু মাছে বাড়ছে।”
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে মুরগি কেনার পর প্রস্তুত করে নিচ্ছেন এক তরুণী। শুক্রবার সকালে। ছবি: দেশকাল নিউজ ডটকম
মুরগি ও ডিমের বাজারে স্বস্তি
বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ১৬০ টাকা দরে, সোনালি ২৫০ ও হাইব্রিড সোনালি পাওয়া যাচ্ছে ২১০ টাকা কেজিতে।
স্থিতিশীল রয়েছে ডিমের বাজার। প্রতি হালি লাল ডিম আগের মতোই ৪৫ টাকা, সাদা ডিম ৪০ টাকা হালি, আর হাঁসের ডিম বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা হালিতে।
এছাড়াও খাসির মাংস এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা ও গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৮০ টাকা কেজি দরে।