Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

বিটকয়েন মাইনিং করবে পাকিস্তান

Icon

আমীমুল ইহসান

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৫, ১৯:১৮

বিটকয়েন মাইনিং করবে পাকিস্তান

বিট কয়েনের ছবি

অর্থনৈতিক সংকট মোকাবিলা, বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করা ও অর্থনীতির আধুনিকীকরণে ক্রিপ্টোকারেন্সি বিটকয়েন মাইনিং করতে যাচ্ছে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ পাকিস্তান।

রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ লক্ষ্যে দেশটি বিটকয়েন মাইনিং ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তথা এআই ডাটা সেন্টারগুলোকে বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য প্রাথমিকভাবে দুই হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বরাদ্দ দিয়েছে। এই উদ্যোগটি দেশটির অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন সরকার-সমর্থিত সংস্থা পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিল (পিসিসি) দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে। পিসিসিতে ব্যবহার হচ্ছে নাÑএমন বাড়তি বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ক্রিপ্টোকারেন্সি উৎপাদন করতে চায়। প্রতিষ্ঠার শুরু থেকে সংস্থাটির লক্ষ্য, একটি ক্রিপ্টোবান্ধব পরিবেশ তৈরি করে প্রযুক্তি খাতে বড় সংখ্যায় বৈদেশিক বিনিয়োগ পাকিস্তানে নিয়ে আসা। যেখানে উচ্চ বেতনে দেশটির তরুণদের কর্মসংস্থান হবে। 

পাশাপাশি মাইনিংয়ের মাধ্যমে বিটকয়েনের কৌশলগত রিজার্ভও তৈরি করতে পারবে। দেশটি ক্রিপ্টোকারেন্সিকে এতটাই গুরুত্ব দিয়েছে যে চলতি বছরে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ক্রিপ্টো বিনিময় প্ল্যাটফর্ম বাইন্যান্সের সহপ্রতিষ্ঠাতা চ্যাংপ্যাং ঝাওকে উপদেষ্টা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে পিসিসি। এই চীনা বংশোদ্ভূত কানাডীয় বিলিয়নেয়ার পিসিসিকে পরামর্শ দেবেন, আরো কীভাবে ও কার্যকর উপায়ে পাকিস্তান ক্রিপ্টোকারেন্সিকে গ্রহণ করতে পারে। তবে দক্ষিণ এশিয়ায় পাকিস্তানের আগে বিটকয়েন মাইনিংয়ের পথে হেঁটেছে ভুটান। নদীতে বাঁধ দিয়ে সস্তায় বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য পরিচিত দেশটি যদিও বিটকয়েনকে মুদ্রা হিসেবে আনুষ্ঠানিক বৈধতা দেয়নি; কিন্তু বিটকয়েন মাইনিং করে ঠিকই অর্থ উপার্জন করে নিয়েছে।

ক্রিপ্টোভিত্তিক সংবাদমাধ্যম কয়েন টেলিগ্রাফ বলছে, সম্প্রতি ভুটান দেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যে বেতন বৃদ্ধি করেছে, তাতে বড় অবদান রেখেছে বিটকয়েন মাইনিং থেকে প্রাপ্ত আয়। ভুটানের সফলতাই হয়তো পাকিস্তানকে অনুপ্রাণিত করে থাকতে পারে। পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এই বরাদ্দ একটি ‘বৃহত্তর ও বহু পর্যায়ের ডিজিটাল অবকাঠামো তৈরির দিকে যাওয়ার প্রথম পর্যায়।’ 

ডিজিটাল উদ্ভাবনে পাকিস্তানকে বিশ্বনেতা হিসেবে রূপান্তরিত করার লক্ষ্যে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বেশ কয়েকটি ক্রিপ্টোকারেন্সি-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক কোম্পানি এরই মধ্যে প্রাথমিক আলোচনার জন্য পাকিস্তান সফর করেছে। বিদ্যুৎ বরাদ্দের পর বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ আরো নাটকীয়ভাবে বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছে পিসিসি। পিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিলাল বিন সাকিব এই উদ্যোগের রূপান্তরমূলক প্রকৃতির ওপর জোর দিয়ে বলেন, ‘যথাযথ নিয়ন্ত্রণ, স্বচ্ছতা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে পাকিস্তান বিশ্বব্যাপী ক্রিপ্টো ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) পাওয়ার হাউস হয়ে উঠতে পারে।’ তার মতে, এই শক্তিসমর্থিত ডিজিটাল রূপান্তর কেবল উচ্চ মূল্যের বিনিয়োগই আনে না, বরং সরকারকে বিটকয়েন মাইনিংয়ের মাধ্যমে মার্কিন ডলারে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। এ ছাড়া নীতিমালা বাস্তবায়নের সঙ্গে সঙ্গে পাকিস্তান সরাসরি একটি জাতীয় ওয়ালেটে বিটকয়েন জমা করতে পারে বলেও জানান তিনি। এটি অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ডিজিটাল সম্পদের ব্যবহারের এক বিরাট পরিবর্তনের চিহ্ন। 

এর আগে দক্ষিণ আমেরিকার দেশ এল সালভাদরও বিটকয়েন সংরক্ষণ ও ব্যবহারের জন্য নিজেদের ওয়ালেট নিয়ে আসে। তবে দেশটি বিটকয়েনকে পুরোপুরি রাষ্ট্রীয় মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করেছে। শুরুতে এটি নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমালোচনা হলেও এখন এল সালভাদরের সাধারণ মানুষ এতে অভ্যস্ত হয়ে গেছে। পাকিস্তান এখনো বিটকয়েনকে বৈধ মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করবে কি না তা নিশ্চিত নয়। তবে ক্রিপ্টো বিশ্লেষকরা বলছেন, খুব সম্ভবত সে পথেই হাঁটছে পাকিস্তান। গত এপ্রিল মাসে পাকিস্তান ভার্চুয়াল সম্পদ এবং পরিষেবা প্রদানকারীদের নিয়ন্ত্রণের জন্য প্রথমবারের মতো নীতিগত কাঠামো চালু করে, যা বিশ্বব্যাপী আর্থিক কর্মকাণ্ডের টাস্কফোর্সের (এফএটিএফ) সম্মতি ও আর্থিক অখণ্ডতা নির্দেশিকাগুলোর সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। 

আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকে আকৃষ্ট করার লক্ষ্যে ক্রিপ্টোকারেন্সি ট্রেডিংয়ের জন্য একটি আইনি কাঠামো তৈরি করতে গত মার্চ মাসে পিসিসি প্রতিষ্ঠার পর এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়। পাকিস্তান আশা করছে, সঠিক প্রণোদনা, কৌশলগত বিনিয়োগ ও সহযোগিতামূলক অংশীদারির মাধ্যমে তারা বিশ্বব্যাপী ডিজিটাল অবকাঠামোর একটি সার্বভৌম অর্থনীতি হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে, যা ডিজিটাল সম্পদ সংগ্রহ, ডিজিটাল পরিষেবা রপ্তানি ও পরবর্তী প্রজন্মের প্রযুক্তিগত রূপান্তরে নেতৃত্ব দেবে। 

পাকিস্তানের অর্থ মন্ত্রণালয়ের মতে, ২৫ কোটিরও বেশি জনসংখ্যার দেশটিতে চার কোটিরও বেশি ক্রিপ্টো ব্যবহারকারী রয়েছে। ফলে পাকিস্তান ডিজিটাল পরিষেবায় আঞ্চলিক নেতা হিসেবে অপরিসীম সম্ভাবনার অধিকারী। এত বড় জনসংখ্যার দেশ যদি সম্পূর্ণভাবে বিটকয়েনকে প্রচলিত মুদ্রা হিসেবে গ্রহণ করে, তবে ক্রিপ্টো ইন্ডাস্ট্রিতে বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে। অনেক দেশই তখন সে পথে হাঁটতে পারে। ভারত এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রিপ্টোকারেন্সির বৈধতা দেয়নি। তবে নিষিদ্ধও করেনি। দেশটিতে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় মাইনিং না হলেও অনেক কোম্পানিই ব্যক্তিগত উদ্যোগে মাইনিং করে থাকে। এমনকি মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার না করলেও সম্পদ হিসেবে অনেকেই ক্রিপ্টোকারেন্সি মজুদ বা ট্রেডিং করে থাকে


Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫