Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ইতিহাসের ছোট বাজেট

Icon

আল আমিন

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২৫, ১৬:০০

৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ইতিহাসের ছোট বাজেট

আগের অর্থবছরের চেয়ে ৭ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকার বাজেট দিয়েছেন। এর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো আগের অর্থবছরের চেয়ে ছোট বাজেট প্রস্তাব করা হলো।

সোমবার অন্তর্বর্তী সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ২০২৫-২৬ অর্থবছরের জন্য যে বাজেট প্রস্তাব করেছেন, তার আকার রাখা হয়েছে ৭ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা।

গণঅভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৭ হাজার কোটি টাকার বাজেট প্রস্তাব করেছিল। অর্থাৎ কমেছে ৭ হাজার কোটি টাকা।

১৯৭২ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোনো বছরেই বাজেট কমানোর চিত্র দেখা যায়নি।

তবে বাজেটের যে দুটি ব্যয়, উন্নয়ন ও রাজস্ব, তার মধ্যে উন্নয়নে বরাদ্দ কমেছে, রাজস্বে বরাদ্দ বরং বেড়েছে।

চলতি অর্থবছরে উন্নয়নে বরাদ্দ যেখানে ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা ছিল, সেখানে অন্তর্বর্তী সরকার তা ২ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা রেখেছে, অর্থাৎ কমেছে ৩৫ হাজার কোটি টাকা।

এই হিসেবে রাজস্ব ব্যয় বেড়েছে ২৮ হাজার কোটি টাকা।

গত ১৮ মে উন্নয়ন বরাদ্দ চূড়ান্ত করার দিন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ সাংবাদিকদেরকে বলেছিলেন, “এটি একটি ‘শৃঙ্খলা পুনরুদ্ধারের বাজেট’। …বাজেটের আকার ছোট হলেও এটি বাস্তবসম্মত ও বাস্তবায়নযোগ্য হবে।”

উপদেষ্টা আরও বলেন, “বাজেট ব্যবস্থাপনা টেকসই করা এবং বাজেটের নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা হবে। বাজেটের টাকার অঙ্ক ছোট হলেও এটি বাস্তবসম্মত এবং কার্যকরী হবে।

সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭-০৮ এবং ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল একই। সে সময়ের অর্থ উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দুই বছরের জন্যই সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব ৯৯ হাজার ৯৬২ কোটি টাকা রেখেছিলেন।

বাজেটের অতীতের হিসাব

স্বাধীনতার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরে বাজেটের আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা। পরের অর্থবছরে তা ২৬ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়ে হয় ৯৯৫ কোটি টাকা।

পরের চার বছরে বাজেট বাড়ে যথাক্রমে ৮ দশমিক ৯ শতাংশ, ২ দশমিক ৯ শতাংশ, ৮ দশমিক ৪ শতাংশ এবং ৯ দশমিক ৮ শতাংশ।

১৯৭৮-৭৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার ১৪ শতাংশ এবং পরের বছর ৩২ দশমিক ৭ শতাংশ বাড়ানো হয়। ওই বছর বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩১৭ কোটি টাকা।

আশির দশকে ১৯৮৭-৮৮ সালের প্রলয়ংকরী বন্যার বছরে বাজেটের আকার সর্বনিম্ন ০ দশমিক ৩ শতাংশ বাড়ানো হয়।

ওই দশকে বাজেটের আকার ৪ হাজার ১০৮ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ১২ হাজার ৯৬০ কোটি টাকা।

৯০ দশকে ১৯৯৬-৯৭ অর্থবছরে বাজেট সবচেয়ে কম বাড়ানো হয় ৬ দশমিক ২ শতাংশ। এই দশকের শেষে ২০০০-০১ অর্থবছরে বাজেটের আকার দাঁড়ায় ৩৮ হাজার ৫২৪ কোটি টাকা।

২০০১ থেকে ২০১০-১১ অর্থবছরের মধ্যে কেবল ২০০৮-০৯ অর্থবছরে বাজেটের আকার একই থাকে।

এই দশকে বাজেট ৪২ হাজার ৩০৬ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ১ লাখ ৩২ হাজার ১৭০ কোটি টাকা।

২০১১-১২ অর্থবছর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছরের মধ্যে বাজেটের আকার বাড়ে সবচেয়ে দ্রুত। এই দশকের মধ্যে কেবল ২০২০-২১ অর্থবছরে বাজেটের আকার সবচেয়ে কম ৮ দশমিক ৬ শতাংশ বাড়ে।

এই সময়ে বাজেটের আকার ১ লাখ ৬১ হাজার ২১৪ কোটি টাকা থেকে বেড়ে হয় ৫ লাখ ৬৮ হাজার কোটি টাকা।

করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ২০২১-২২ অর্থবছরে বাজেট বাড়ে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ। পরের দুই বছরে ১২ শতাংশের বেশি এবং ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বাজেট বাড়ে সবচেয়ে কম ৪ দশমিক ৬ শতাংশ।

উন্নয়ন বাজেট আগেও কমেছে, তবে এত না

অর্থ উপদেষ্টা উন্নয়ন বাজেট আগের অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের তুলনায় কমিয়েছে ১৩ দশমিক ২ শতাংশ। উন্নয়ন বাজেট এত ছোট করার ঘটনা এর আগে ঘটেনি।

১৯৮২-৮৩ অর্থবছরে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ, ১৯৮৫-৮৬ অর্থবছরে ১ দশমিক ৮ শতাংশ, ১৯৯০-৯১ অর্থবছরে ২ দশমিক ৩ শতাংশ, ১৯৯৯-২০০০ সালে ৮ দশমিক ৩ শতাংশ, ২০০৭-০৮ অর্থবছরে ১ দশমিক ৫ শতাংশ, পরের অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট ০ দশমিক ৪ শতাংশ কমেছিল।

এর বাইরে ১৯৭৪-৭৫ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট আগের বছরের সমান ৫২৫ কোটি টাকা রাখা হয়। ২০০২-০৩ অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট বাড়ানো হয় ১ দশমিক ১ শতাংশ। চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন বাজেট ০ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়িয়ে প্রস্তাব করেছিল আওয়ামী লীগ সরকার।

তবে প্রস্তাবিত ২ লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা থেকে ৩৮ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা ছেঁটে ফেলেছে অন্তর্বর্তী সরকার। সংশোধিত উন্নয়ন বাজেট স্থির হয়েছে ২ লাখ ২৬ হাজার ১২৫ কোটি টাকা।

উন্নয়ন বাজেট শতকরা হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৪৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বেড়েছে ১৯৭৯-৮০ অর্থবছরে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫