
সোমবার গুলশানে নবায়ণযোগ্য জ্বালানি নিয়ে আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়
নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে হলে ‘এক জায়গায় সব সেবা’র ব্যবস্থা এবং অনুমোদন প্রক্রিয়া সহজ করতে সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন উদ্যোক্তারা।
তারা বলছেন, একাধিক ওয়েবসাইটে ঘুরে তথ্য নেওয়া, নানা অফিসে ঘুরে অনুমোদনের কাগজপত্র জমা দেওয়া-এসব প্রশাসনিক জটিলতা বিনিয়োগকারীদের নিরুৎসাহিত করছে। বিনিয়োগে দীর্ঘসূত্রিতা, জমি বরাদ্দে অস্পষ্টতা এবং আইনি স্বচ্ছতার অভাব বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সোমবার রাজধানীর গুলশানে এক আলোচনায় এ সব তথ্য উঠে আসে।
‘বাংলাদেশের নবায়নযোগ্য শক্তি খাতে চীনের বিদেশি বিনিয়োগের সাম্প্রতিক চ্যালেঞ্জ: অগ্রগতির পথ’ শীর্ষক আলোচনার আয়োজন করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও বাংলাদেশ-চীন নবায়নযোগ্য শক্তি ফোরাম।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিপিডির গবেষক আবরার আহমেদ। তিনি বলেন, “নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের জন্য এখনও কোনো একক অনলাইন প্ল্যাটফর্ম নেই। বিনিয়োগের জন্য একাধিক দপ্তরে যেতে হয়, যা হতাশাজনক।”
তিনি জানান, অনেক প্রস্তাব প্রথমে প্রযুক্তিগত মূল্যায়নের পর পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট বোর্ড (বিপিডিবি), বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয় এবং সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির কাছে যায়। এই অনুমোদন প্রক্রিয়ায় এক বছর লেগে যায়, যেখানে ভারতের মতো দেশে সময় লাগে মাত্র তিন-চার মাস।
আবরার বলেন, “এ ধরনের দীর্ঘসূত্রতা বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আর্থিক ঝুঁকি তৈরি করে। উপরন্তু, অনুমোদনের জন্য বিভিন্ন ধরনের লাইসেন্স, সার্টিফিকেট ও তথ্যের প্রয়োজন হয়, যা জোগাড় করা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।”
প্রবন্ধে বলা হয়, “বর্তমানে বাংলাদেশে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে যত বিদেশি বিনিয়োগ রয়েছে, তার ৫০ শতাংশই এসেছে চীন থেকে। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ৩১টি নবায়নযোগ্য প্রকল্প বাতিল করেছে, যার মধ্যে ১৫টি কোম্পানি আগে থেকেই জমি কিনে রেখেছিল এবং করও পরিশোধ করেছিল।”
সরকার এসব বাতিল প্রকল্প পর্যালোচনায় একটি কমিটি গঠন করলেও ‘কমিটির কর্তৃত্ব ও নিরপেক্ষতা’ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন উদ্যোক্তারা।
গবেষণায় আরও প্রস্তাব করা হয়—নবায়নযোগ্য খাতে ডিজিটাল প্রক্রিয়া নিশ্চিত করা, নীতিমালায় ঘনঘন পরিবর্তন না আনা, আইনগত স্বচ্ছতা বৃদ্ধি করা এবং বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি নির্দিষ্ট গাইডলাইন তৈরি করতে হবে।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, “এই পুরো প্রক্রিয়ায় বিডাকে (বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ) সমন্বয়কের ভূমিকা নিতে হবে। একইসাথে একাধিক লাইসেন্স ও অনুমোদনের জটিলতা কমাতে হবে।”
তিনি বলেন, “আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ বললেও বাস্তবে এখনো প্রক্রিয়ার অর্ধেকই ডিজিটাল হয়েছে। পুরোপুরি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ছাড়া বিনিয়োগ সহজ হবে না।”
অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান জালাল আহমেদ, বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা উদ্যোক্তাদের সংগঠন চাইনিজ এন্টারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি হান কুনসহ অন্যরা।