Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

ট্রাম্পের ৩৫% শুল্ক, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৮ জুলাই ২০২৫, ১৯:০৫

ট্রাম্পের ৩৫% শুল্ক, প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে পড়ার শঙ্কা

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প

সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন। তিন মাস আগে ঘোষিত প্রাথমিক হারের চেয়ে এটি ২ শতাংশ কম হলেও, তৈরি পোশাক খাতের (আরএমজি) প্রধান প্রতিযোগী ভিয়েতনামের চেয়ে অনেক বেশি। সম্প্রতি ভিয়েতনাম যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে একটি বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্ন করেছে, যার আওতায় তাদের পণ্যের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে।

ট্রাম্প তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ‘ট্রুথ সোশ্যাল’ অ্যাকাউন্টে এই বহু প্রতীক্ষিত ঘোষণা দেন। 

বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোর ২টা ৩৬ মিনিটে তিনি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে উদ্দেশ্য করে লেখা গত ৭ জুলাইয়ের একটি চিঠি প্রকাশ করেন। বিশ্বের অন্যান্য দেশের নেতাদের কাছেও তিনি নিজ নিজ দেশের শুল্কহার উল্লেখ করে একই ধরনের চিঠি দিয়েছেন। নতুন এই হার আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে বলে জানানো হয়েছে।

সোমবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ ছাড়াও মিয়ানমার ও লাওসের পণ্যের ওপর ৪০%, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬%, সার্বিয়ার ওপর ৩৫%, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২%, দক্ষিণ আফ্রিকা ও বসনিয়া হার্জেগোভিনার ওপর ৩০% এবং জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, কাজাখস্তান, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার ওপর ২৫% শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে আরও দেশের তালিকা আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

চিঠিতে ট্রাম্প সংশ্লিষ্ট দেশগুলোকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা যেন এর প্রতিক্রিয়ায় পাল্টা শুল্ক আরোপ না করে। তেমন কিছু করা হলে ট্রাম্প প্রশাসন শুল্কের হার আরও বাড়িয়ে দেবে।

ড. ইউনূসকে লেখা চিঠিতে ট্রাম্প বলেন, “যদি কোনো কারণে আপনারা আপনাদের শুল্ক বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেন, তাহলে আপনারা যে হারেই বাড়ান না কেন, তা আমরা যে ৩৫% শুল্ক আরোপ করছি, তার সঙ্গে যুক্ত হবে।”

এদিকে, একটি বাংলাদেশি প্রতিনিধিদল এখনও ওয়াশিংটনে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) দপ্তরের সঙ্গে শেষ মুহূর্তের আলোচনার জন্য অবস্থান করছে। তবে ট্রাম্পের ঘোষণাই আপাতত চূড়ান্ত বলে মনে করা হচ্ছে। অবশ্য চিঠিতে তিনি আলোচনার একটি রাস্তাও খোলা রেখেছেন। তিনি লিখেছেন, “আপনারা যদি যুক্তরাষ্ট্রের জন্য নিজেদের এতদিনকার বন্ধ বাণিজ্য বাজার খুলে দেন এবং আপনাদের শুল্ক ও অশুল্ক নীতি এবং বাণিজ্য বাধাগুলো দূর করেন, তাহলে আমরা হয়তো এই চিঠিতে দেওয়া হারের বিষয়ে পুনর্বিবেচনা করতে পারি।”


ইউনূসকে দেওয়া ট্রাম্পের চিঠি

বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, ট্রাম্প তার পুরনো রীতি মেনেই বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের কাছে পাঠানো চিঠিগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন এবং পরে সেগুলোর মূল কপি পাঠানো হবে। বাণিজ্য চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তার এই অনানুষ্ঠানিক পদ্ধতি পূর্ববর্তী সব মার্কিন প্রেসিডেন্টের চেয়ে সম্পূর্ণ ভিন্ন।

এপি’র মতে, এই চিঠিগুলো কোনো দ্বিপাক্ষিক সমঝোতার ফল নয়, বরং এগুলো ট্রাম্পের একতরফা সিদ্ধান্ত। এটি প্রমাণ করে যে, বিদেশি প্রতিনিধিদলগুলোর সঙ্গে রুদ্ধদ্বার বৈঠক কোনো পক্ষের জন্যই সন্তোষজনক ফল বয়ে আনেনি।

এখন পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ এবং চীনের সঙ্গে একটি আংশিক বাণিজ্য চুক্তি করতে পেরেছে। ভারতের সঙ্গেও একটি চুক্তি চূড়ান্ত হওয়ার পথে রয়েছে বলে জানা গেছে।

বাংলাদেশের জন্য ভিয়েতনাম ফ্যাক্টর

ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিটি বাংলাদেশের জন্য বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ লাভজনক পোশাকের বাজারে ভিয়েতনাম বাংলাদেশের সরাসরি প্রতিযোগী। ট্রাম্প গত বুধবার জানিয়েছেন, নতুন চুক্তির আওতায় ভিয়েতনামের পণ্যের ওপর ২০% শুল্ক আরোপ করা হবে। পূর্বে এই হার ৪৬% করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, যা ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। সেই তুলনায় এই হার অনেক কম।

তবে ৪৬% থেকে শুল্ক কমিয়ে ২০% করতে ভিয়েতনাম মার্কিন পণ্যের ওপর থেকে সব ধরনের শুল্ক তুলে নিতে সম্মত হয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানিকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করে প্রায় ১৫০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করেছিল।

শুল্কের প্রভাব

শুল্ক হলো আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ধার্য করা কর, যা আমদানিকারককে পরিশোধ করতে হয়। এর ফলে আমদানিকৃত পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং স্থানীয় বাজারে সেগুলোর প্রতিযোগিতা সক্ষমতা কমে যায়।

এই ক্ষেত্রে যদি মার্কিন ক্রেতারা বাংলাদেশি পোশাকের ওপর আরোপিত অতিরিক্ত শুল্কের ভার বহন করতে রাজি না হন, তবে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের পণ্যের দাম কমাতে হবে।

ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার আগে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫% শুল্ক প্রযোজ্য ছিল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫