Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

ক্যাশলেস কক্সবাজার :

গুগল পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

Icon

আদিল ইলাহি

প্রকাশ: ০২ আগস্ট ২০২৫, ১৫:৪০

গুগল পের সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ

২০২৫ সালের ২৪ জুন থেকে বাংলাদেশে গুগল পে চালু হয়েছে। এটি কেবল একটি ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাপ নয়, বরং এক নতুন প্রযুক্তিগত যাত্রার প্রতীক, যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে আরো সহজ, স্বচ্ছ ও ক্যাশলেস করে গড়ে তুলতে পারে। কক্সবাজারের মতো পর্যটননির্ভর অঞ্চলে গুগল পে ব্যবহার শুরু হওয়ায় এখানকার ব্যবসা, পর্যটন ও তরুণ উদ্যোক্তাদের জন্য এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। গুগল পে ব্যবহারে যেমন অনেক সুবিধা ও সুযোগ রয়েছে, তেমনি কিছু চ্যালেঞ্জ ও সীমাবদ্ধতাও রয়েছে, যেগুলো অতিক্রম করা জরুরি। 

পর্যটকদের জন্য সহজ ও দ্রুত পেমেন্টের সুযোগ

কক্সবাজারে প্রতিদিন প্রচুর পর্যটক আসেন দেশের নানা প্রান্ত থেকে। অনেকেই এখন নগদ টাকা না নিয়ে মোবাইল ফোনে পেমেন্ট করতে চান। গুগল পে চালু হওয়ার ফলে তারা রিকশাভাড়া, হোটেলভাড়া, খাওয়াদাওয়া কিংবা কেনাকাটার টাকা খুব সহজে ফোনের মাধ্যমে দিতে পারবেন। এতে পর্যটকদের জন্য ভ্রমণ আরো আরামদায়ক ও ঝামেলাহীন হবে। এ ছাড়া বিদেশি পর্যটকরাও গুগল পে ব্যবহার করে তাদের আন্তর্জাতিক কার্ড যুক্ত করে সহজে বাংলাদেশে লেনদেন করতে পারবেন। এতে কক্সবাজারে বিদেশি পর্যটনের সুবিধাও বাড়বে।

দোকানি ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জন্য বড় সুযোগ

কক্সবাজারে রয়েছে হাজার হাজার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, যেমন-ঝিনুক, চিপস, পানিপুরি, কক্সবাজারের জামদানি বা হস্তশিল্প বিক্রেতা। এই দোকানিদের যদি গুগল পে গ্রহণের ব্যবস্থা থাকে, তাহলে ক্রেতারা মোবাইল দিয়েই টাকা পরিশোধ করতে পারবেন।

এর ফলে : নগদ টাকার ওপর নির্ভরতা কমবে, টাকা হারানোর ভয় কমবে, টাকা পাওয়ার হিসাব মোবাইলেই থেকে যাবে, দোকানিদের বিক্রির গতি বাড়বে এবং গ্রাহক সন্তুষ্টিও বাড়বে।

সহজ ও নিরাপদ লেনদেন

বর্তমানে কক্সবাজারের অনেক তরুণ অনলাইনে কাজ করছেন বা নিজস্ব পণ্যের ছোট ব্যবসা করছেন। তারা গুগল পে ব্যবহার করে সহজেই পেমেন্ট গ্রহণ করতে পারবেন। বিশেষ করে বিদেশি ক্রেতা বা ক্লায়েন্টদের কাছ থেকে টাকা পাওয়া অনেক সহজ হবে। ব্যাংকে ঘোরাঘুরির দরকার হবে না, মোবাইলেই সব কাজ হয়ে যাবে। গুগল পে ব্যবহারে টাকা লেনদেন খুবই নিরাপদ। কারণ এতে কার্ডের আসল তথ্য প্রকাশ হয় না। মোবাইলে নিরাপদভাবে সংরক্ষিত থাকে। কোন দোকানে কত টাকা দিলেন, তার পুরো হিসাব থাকবে আপনার মোবাইলে। এ ছাড়া পিন বা ফিঙ্গারপ্রিন্ট দিয়ে অনুমোদন দিতে হয়, তাই টাকা চুরি হওয়ার আশঙ্কা অনেক কম।

উদ্যোগের প্রয়োজনীয়তা ও তরুণদের ভূমিকা

ডিজিটাল লেনদেনকে জনপ্রিয় করতে হলে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ উদ্যোগ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সরকার যদি স্মার্টফোন ও POS ডিভাইস সহজলভ্য করে এবং স্থানীয় প্রশাসন সচেতনতা বাড়ায়, তাহলে গুগল পে দ্রুত জনপ্রিয় হতে পারবে। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে গুগল পের ব্যবহার ছড়িয়ে দিতে পারলে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার ছড়িয়ে পড়বে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো কর্মশালার আয়োজন করে এই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে পারে, যাতে তরুণরাই প্রযুক্তির দূত হয়ে উঠতে পারে।

গুগল পে বনাম অন্যান্য ডিজিটাল পেমেন্ট অ্যাপ

বাংলাদেশে আগে থেকেই বিকাশ, নগদ, রকেট ইত্যাদি জনপ্রিয়। তবে গুগল পের অন্যতম সুবিধা হলো এটি বৈশ্বিকভাবে ব্যবহৃত ও নিরাপদ। Android ডিভাইসে ইনবিল্ট থাকা এবং গুগল অ্যাকাউন্টের সঙ্গে সংযুক্ত থাকায় এর ব্যবহার অনেক সহজ ও দ্রুত। ভবিষ্যতে এটি প্রতিযোগিতায় এগিয়ে যেতে পারে যদি অফার, ডিসকাউন্ট এবং স্থানভিত্তিক ফিচার যোগ করা হয়।

নারীদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতেও সহায়ক

কক্সবাজারে বহু নারী ঘরে বসে হস্তশিল্প, পিঠা-পুলি, আচার, জামাকাপড় কিংবা অন্যান্য হোমমেড পণ্য তৈরি করে স্থানীয়ভাবে কিংবা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিক্রি করেন। তবে অনেক ক্ষেত্রেই তারা আর্থিক লেনদেনে বাধার মুখে পড়েন, বিশেষ করে যদি তাদের নিজ নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট না থাকে কিংবা নিকটস্থ কোনো ব্যাংক শাখায় যাতায়াত কঠিন হয়। এই প্রেক্ষাপটে গুগল পে হতে পারে একটি কার্যকর সমাধান। গুগল পের মাধ্যমে তারা খুব সহজেই মোবাইল নম্বরভিত্তিক লেনদেন করতে পারবেন, যেটি ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ছাড়াও সম্ভব হতে পারে মোবাইল ওয়ালেট বা ইউপিআই (যদি বাংলাদেশে কার্যকর হয়) এর মাধ্যমে। এতে নারীরা ব্যাংকিং ব্যবস্থার বাইরে থেকেও ডিজিটাল অর্থনীতিতে যুক্ত হতে পারবেন। এটি কেবল তাদের অর্থ উপার্জনের পথকে সহজ করবে না, বরং তাদের আত্মবিশ্বাস, স্বাধীনতা এবং পরিবারে অর্থনৈতিক অবদান রাখার সুযোগও বাড়াবে। আর্থিক অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এই নারীরা ধীরে ধীরে উদ্যোক্তায় পরিণত হতে পারেন, যেটি কক্সবাজারের অর্থনীতিকেও এক নতুন মাত্রা দেবে। তাই নারী উদ্যোক্তাদের জন্য গুগল পের প্রসার ও সহজলভ্যতা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

যেসব চ্যালেঞ্জ রয়েছে

গুগল পে ব্যবহারের কিছু সীমাবদ্ধতা এখনো রয়েছে, যেমন-

* স্মার্টফোন থাকতে হবে : সাধারণ ফোনে গুগল পে চলে না

* সব দোকানে সেবা নেই : অনেক দোকানে এখনো ডিজিটাল পেমেন্ট নেওয়ার ব্যবস্থা নেই

* ব্যাংক সীমাবদ্ধতা : আপাতত শুধু সিটি ব্যাংকের কার্ড দিয়ে ব্যবহার করা যাচ্ছে

 * ইন্টারনেট দরকার : মোবাইলে ইন্টারনেট না থাকলে গুগল পে চালানো যাবে না

কী করা যেতে পারে?

* প্রশিক্ষণ ও সচেতনতা বৃদ্ধি : ব্যবসায়ীদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে

* স্থানীয় উদ্যোগ : উপজেলা প্রশাসন, চেম্বার অব কমার্স ও এনজিওগুলো মিলে কর্মশালা আয়োজন করতে পারে

* ডিভাইস সহজলভ্য করা : কম দামে স্মার্টফোন ও POS যন্ত্র সরকার সরবরাহ করতে পারে

* অন্য ব্যাংকগুলোর অংশগ্রহণ : সব ব্যাংক যুক্ত হলে ব্যবহার সহজ হবে

গুগল পে কেবল একটি পেমেন্ট অ্যাপ নয়, এটি আমাদের দৈনন্দিন জীবনকে সহজ ও ঝামেলামুক্ত করার এক নতুন পথ। কক্সবাজারের মতো পর্যটননির্ভর ও ব্যাবসায়িক এলাকাগুলোতে এটি শুধু ব্যবসায় লাভ বাড়াবে না, বরং পুরো অঞ্চলের ডিজিটাল উন্নয়নকে ত্বরান্বিত করবে। এই সুবিধা ব্যবহারে আমরা যত বেশি সচেতন হব এবং প্রযুক্তি গ্রহণে যতটা আগ্রহ দেখাব, তত দ্রুতই কক্সবাজার হয়ে উঠবে একটি আধুনিক, স্মার্ট ও ক্যাশলেস শহর, যেখানে টাকা পেমেন্ট হবে ঝটপট, নিরাপদ ও সহজভাবে।


লেখক : শিক্ষক, কক্সবাজার ইউনিভার্সিটি

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫