Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

বড় বিনিয়োগকারীরা পরের সরকারের অপেক্ষায়: গভর্নর

Icon

জেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১১ আগস্ট ২০২৫, ১৮:২৬

বড় বিনিয়োগকারীরা পরের সরকারের অপেক্ষায়: গভর্নর

সিপিডি আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক সংলাপে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর।

রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ছাড়া দেশে কাঙ্ক্ষিত বিদেশি ও স্থানীয় বিনিয়োগ প্রত্যাশা করা ‘বাস্তবসম্মত নয়’ বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর। তিনি বলেন, “সামনে নির্বাচন থাকায় বড় বিনিয়োগকারীরা পরবর্তী সরকারের জন্য অপেক্ষা করছেন এবং এটিই একটি স্বাভাবিক ‘পলিটিক্যাল প্রসেস’।”

রবিবার রাজধানীর গুলশানে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) আয়োজিত ‘অন্তর্বর্তী সরকারের ৩৬৫ দিন’ শীর্ষক এক সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

বিনিয়োগ পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে গভর্নর বলেন, “আমরা পাইপলাইনে বিনিয়োগ দেখতে পারছি... কিন্তু আরেকটু সময় লাগবে। সামনে নির্বাচন, এই মুহূর্তে হয়তো বড় কোনো বিনিয়োগকারী আসতে চাইবে না। বিদেশি বিনিয়োগকারীরাও আসতে চাইবে না; (তারা ভাবছে) পরবর্তী সরকার যদি সব চেঞ্জ করে ফেলে। লেটস টক টু দ্য নেক্সট গভর্মেন্ট, এটা খুব স্বাভাবিক পলিটিক্যাল প্রসেস।”

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করে তিনি বলেন, “৫ বিলিয়ন ডলার করে পণ্য আমদানি করছি। তাতে কী আমদানি কম হচ্ছে? বাজারে কী কোনো শর্টেজ আছে? হয়তো বলতে পারেন ক্যাপিটাল মেশিনারি ইমপোর্ট করছি না। লেজিটিমেট কোয়েশ্চেন? দ্য আনসার ইজ, হু ইজ গোয়িং টু ইনভেস্ট ইন দিস এনভায়রনমেন্ট (এখন এখানে কে বিনিয়োগ করবে)?”

অর্থনীতির চ্যালেঞ্জ প্রসঙ্গে তিনি যোগ করেন, “আমরা খাদের কিনারায় ছিলাম, সেখান থেকে যদি দ্রুত ফেরত আসতে না পারি তাহলে খাদে পড়ে যাওয়ার সম্ভাবনাটা অনেক বেশি।”

গভর্নর বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের দুটি প্রধান চ্যালেঞ্জ ছিল—সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা আনা এবং সংস্কার কার্যক্রমকে এগিয়ে নেওয়া, যাতে ভবিষ্যৎ সরকার এটিকে আরও সামনে এগিয়ে নিতে পারে।

‘মানি লন্ডারিং বন্ধ হওয়ায় রেমিট্যান্স বেড়েছে’

অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, “অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান দায়িত্ব জনগণের মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া। অর্থনীতি স্থিতিশীল করার ক্ষেত্রে এই সময়ে অনেক কাজ হয়েছে।”

তিনি দাবি করেন, “বড় বিষয় হচ্ছে, মানি লন্ডারিং বন্ধ হয়ে গেছে। যারা লন্ডারিং করত, তারা তো পালিয়ে গেছে। যারা দেশে আছে, তাদের হাতে টাকা নেই। মানি লন্ডারিং বন্ধ হওয়ার কারণে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি বৃদ্ধি পেয়েছে।”

তবে সরকারের বাজেট নীতির সমালোচনা করে তিনি বলেন, “আমাদের উচিত ছিল স্বৈরাচারের বাজেট চালিয়ে না যাওয়া। ওই বাজেট বাদ দিয়ে সামাজিক বিষয়টি প্রাধান্য দিয়ে নতুন বাজেট দিতে পারতাম। আমি মনে করি, এটা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল।”

‘৩৬৫ দিনে ম্যাজিক্যাল কিছু দেখিনি’

তবে সরকারের নীতি নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেন বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সভাপতি শওকত আজিজ রাসেল।

তিনি বলেন, “গভর্নর বলে গেলেন, বিপদের সময় জনশক্তি ও গার্মেন্টস খাত তাদের বিপর্যয় থেকে রক্ষা করেছে। কিন্তু আমার প্রশ্ন, গত ৩৬৫ দিনে আমাদের জন্য কী করেছেন? অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময়ে টেক্সটাইল খাতে করপোরেট কর ১৫ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি করে ৩৭ শতাংশ করা হয়েছে।”

তিনি আরও অভিযোগ করেন, “ফিনিশড প্রোডাক্ট আসবে শুল্ক ছাড়া, কিন্তু কাঁচামাল তুলায় ২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তার ওপর চাঁদাবাজ তো আছেই। গ্যাস ও বিদ্যুৎ নেই। গত ৩৬৫ দিনে ম্যাজিক্যাল আমি কিছু দেখতে পাইনি। আমি গঠনমূলক সমালোচনা করছি, এটাকে তিরস্কার ভাববেন না।”

জনশক্তি রপ্তানি নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন, “জনশক্তির জন্য কোনো ট্রেনিং সেন্টার করেছেন? মালয়েশিয়ায় দেখেছি, ভারতীয় দক্ষ শ্রমিক নিজের দেশ থেকে ট্রেনিং নিয়ে এসে বেশি বেতনে কাজ করছে। আর আমাদের শ্রমিক ঘরমোছার কাজ করে নিম্ন বেতনে।”

ব্যাংক খাতের সমালোচনা করে রাসেল বলেন, “লুটপাটে যে ব্যাংক নষ্ট হয়ে গেছে, তাকে আবার কেন টাকা দিচ্ছেন? আপনি গ্রাহককে টাকা দিয়ে ওই ব্যাংক বন্ধ করে দেন। চোরগুলোকে কেন টাকা দিচ্ছেন? চোরের মালিকানা কিন্তু কখনই নষ্ট হবে না, আবার ছোবল মারবে।”

তার মতে, “ছোট একটি দেশে এতগুলো ব্যাংক সত্যিই অবাক করার মতো। বাংলাদেশের মতো পারিবারিকভাবে ব্যাংক কোথাও দেওয়া হয় না। ক্রিকেটে ছক্কা মারতে পারলেই তাকে লাইসেন্স দেওয়া হয়।”

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকার যখন শাসনভার গ্রহণ করে, তখন আমাদের অর্থনীতি বেশ বিপদজনক অবস্থায় ছিল। রিজার্ভের ধারাবাহিক পতন হচ্ছিল, টাকার বিনিময় হারের অবনমন হচ্ছিল খুব দ্রুত। এখন এক বছর পর যখন ফিরে তাকাচ্ছি, তখন মূল্যায়নের একটা সময় এসেছে।”

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫