পৃথিবীর কোথাও ব্যাংকের টাকা এভাবে লুট হয়নি: অর্থ উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৩ আগস্ট ২০২৫, ১২:৫৭

অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে সংবাদ সম্মেলনে অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন।
বাংলাদেশের ব্যাংক খাত থেকে যেভাবে টাকা লুট করা হয়েছে, তা পৃথিবীর আর কোনো দেশে হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ।
মঙ্গলবার সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের মাল্টিপারপাস হলে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা বলেন।
সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, “আর্থিক খাতের বিশৃঙ্খলা, দুর্নীতি, সুশাসনের অভাব দেশের অর্থনীতি খাদের কিনারায় বা আইসিইউতে চলে গিয়েছিল। সেখান থেকে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। তবে আরও একটু দ্রুত এগোতে পারলে ভালো হতো।”
তিনি আরও বলেন, “পৃথিবীর কোনো দেশে এভাবে ব্যাংক খাতের লুটপাট করা হয়নি। একটি ব্যাংকের খেলাপি ঋণ আমি জানতে চাইলাম, সে বলছে স্যার ৯৫ শতাংশই খেলাপি। কে নিয়েছে টাকা? চেয়ারম্যান সাহেব, আর তার লোকজন। চিন্তা করতে পারেন। পৃথিবীর কোনো দেশে ব্যাংকের টাকা এভাবে নিয়ে যাওয়া হয়নি। এটা তো আপনার-আমার টাকা।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা একেবারে খারাপ অবস্থায় নেই। মূল্যস্ফীতি কমে ৮ শতাংশের ঘরে নেমে এসেছে। খারাপ খারাপ বললে তো খারাপই হয়ে যাব। গ্রোথ হচ্ছে না, কর্মসংস্থান হচ্ছে না, কিছুই হচ্ছে না, এভাবে বললে তো হবে না।”
তিনি প্রবৃদ্ধির বাড়ার আশা প্রকাশ করে বলেন, “গ্রোথ (জিডিপি প্রবৃদ্ধি) তো নেগেটিভ না। আনুমানিক একটা তথ্য গ্রোথ ৩ দশমিক ৯ শতাংশ, আমরা আশা করছি বছর শেষে ৫ থেকে ৫ দশমিক ৭ শতাংশ হবে।”
তবে তিনি স্বীকার করেন, প্রত্যাশার চেয়ে উন্নতির গতি ধীর। “আরও দ্রুত অগ্রগতি হলে ভালো হতো,” বলেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আনিসুজ্জামান চৌধুরী, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান, অর্থ সচিব খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শাহরিয়ার কাদের ছিদ্দিকী।
ব্যাংক মার্জ (একীভূতকরণ) করা হবে ও কবে নাগাদ করা হবে— সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “এটা নিয়ে বাংলাদেশ কাজ করছে। কতটা ব্যাংক হবে, তা আমি বলতে চাই না। তবে হবে।”
এ বিষয়ে নির্বাচিত সরকার ভিন্ন অবস্থান নিলে কী হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এগুলো নিয়ে মোটামুটি আলোচনা হয়েছে। এখন পুরোপুরি উল্টো গেলে তো কিছু করার নেই।”
টাকা পাচারের বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা একসঙ্গে ১২টি দেশের সঙ্গে আলোচনা করছি পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনতে। টাকা পাচার যারা করে তাদের সক্ষমতা আমার, আপনার চেয়ে দ্বিগুণ।”
তিনি আরও বলেন, “বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ চুরির ঘটনায় যে টাকা ফিলিপিন্সে গেছে, তা ফেরত আনতে জান বের হয়ে যাচ্ছে।”
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, “আমরা যেটা ইনিশিয়েট করেছি সেটা এগিয়ে নিতে হবে। কিছু প্রতিষ্ঠানের দুর্বলতা আছে। সেটাকে কাটানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এটাকে চলমান রাখতে হবে। বেসরকারি খাতে আস্থা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এখন তো সারাবিশ্বেই অনিশ্চয়তা চলছে, শুধু বাংলাদেশের নয়। ২-৩ মাস আগে ব্যবসায়ীরা হৈচৈ করতেন। এখনও অনেকেই করছেন। কিন্তু এখন সেটা কমেছে। আমরা ডলার রেটটা একটা জায়াগায় ধরে রাখতে পেরেছি। রিজার্ভ বাড়ছে। ফলে এলসি খোলার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা আর হচ্ছে না।”
তবে কিছুটা আস্থাহীনতা এখনও আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “আমরা সেটাকে ওভারকাম করার চেষ্টা করছি।”