৫৫ বছরের ইতিহাসে রেকর্ড ৯৩৭ কোটি টাকা মুনাফা বিমানের

বিশেষ প্রতিনিধি
প্রকাশ: ১৮ আগস্ট ২০২৫, ১৮:০৪

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ উড়োজাহাজ
প্রতিষ্ঠার ৫৫ বছরের ইতিহাসে সর্বোচ্চ মুনাফা অর্জন করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত উড়োজাহাজ সংস্থা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমান ৯৩৭ কোটি টাকা অনিরীক্ষিত মুনাফা করেছে, যা সংস্থাটির ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড। এর আগে বিমানের সর্বোচ্চ মুনাফা ছিল ২০২১-২২ অর্থবছরে, ৪৪০ কোটি টাকা।
সোমবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বিমান কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে তাদের মোট আয় হয়েছে ১১ হাজার ৬৩১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। এর আগের ২০২৩-২৪ অর্থবছরে বিমান প্রথমবারের মতো ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি আয়কারী কোম্পানিতে পরিণত হয়।
যাত্রী পরিবহন ও কার্গো উভয় খাতেই বিমান উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে বিমান ৩৪ লাখ যাত্রী পরিবহন করেছে। কার্গো পরিবহন হয়েছে ৪৩ হাজার ৯১৮ টন এবং কেবিন ফ্যাক্টর বা যাত্রী পরিবহনের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮২ শতাংশে। পাশাপাশি, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসে সংস্থাটি তাদের ইতিহাসে সর্বোচ্চ টিকিট বিক্রির রেকর্ডও গড়ে।
বিমানের মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) রওশন কবীর বলেন, “বাজারে বিমানের ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা ও যাত্রীদের আস্থার প্রতিফলন এটি।” তিনি আরও যোগ করেন, “দ্রুত লাগেজ সরবরাহ, উন্নত ইন-ফ্লাইট সেবা এবং বিমানবন্দর প্রক্রিয়ার আধুনিকায়ন যাত্রী সন্তুষ্টি বাড়িয়েছে। পাশাপাশি বিমান আন্তর্জাতিক নিরাপত্তা মান কঠোরভাবে অনুসরণ করে ধারাবাহিকভাবে প্রশংসনীয় সেফটি রেকর্ড বজায় রেখেছে।”
“জাতীয় সংবাদমাধ্যম ও এভিয়েশন বিশেষজ্ঞরা ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিমানের বহর আধুনিকায়ন, লাভজনক আন্তর্জাতিক রুট সম্প্রসারণ এবং উন্নত গ্রাহকসেবা প্রদানের প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে নতুন ব্যবস্থাপনা দক্ষ অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ, কার্যকর সম্পদ বণ্টন এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণের মাধ্যমে এই বছরের রেকর্ড মুনাফায় বড় ভূমিকা রেখেছে,” যোগ করেন রওশন কবীর।
১৯৭২ সালে মাত্র ১ কোটি ৯০ লাখ টাকা আয় দিয়ে যাত্রা শুরু করা বিমান এ পর্যন্ত মোট ২৬টি অর্থবছরে লাভের মুখ দেখেছে। ২০০৭ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তরিত হওয়ার পর গত ১৮ বছরে বিমানের পুঞ্জীভূত মুনাফার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫৮৯ কোটি টাকায়।
বর্তমানে বিমানের বহরে নিজস্ব মালিকানাধীন ১৯টি উড়োজাহাজ রয়েছে, যার মধ্যে অত্যাধুনিক ও জ্বালানি-সাশ্রয়ী চারটি বোয়িং ৭৮৭-৮ এবং দুটি বোয়িং ৭৮৭-৯ ড্রিমলাইনার আছে। নিজস্ব জনবল দিয়ে উড়োজাহাজের লাইন মেইনটেন্যান্স থেকে শুরু করে বড় ধরনের চেক সম্পন্ন করার সক্ষমতাকেও খরচ কমানোর অন্যতম কারণ হিসেবে উল্লেখ করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে রওশন কবীর বলেন, “বিমানের ভবিষ্যতের পরিকল্পনায় রয়েছে নতুন জনপ্রিয় গন্তব্যে রুট সম্প্রসারণ, যাত্রীসেবা ও পরিচালনায় ডিজিটাল রূপান্তর, এবং কার্গো সেবা শক্তিশালীকরণ। বিমানের লক্ষ্য হলো জাতীয় গৌরবকে ধারণ করে বিশ্বমানের সেবা, নির্ভরযোগ্যতা এবং সম্মানিত যাত্রীগণের সুরক্ষা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার একটি শীর্ষস্থানীয় এয়ারলাইন্সে পরিণত হওয়া।”