Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৯ শতাংশ

Icon

জান্নাতুল ফেরদৌসী

প্রকাশ: ১৯ আগস্ট ২০২৫, ১৬:৫২

মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমেছে ১৯ শতাংশ

প্রতীকী ছাবি

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ডলার সংকটের কারণে দেশে নতুন বিনিয়োগে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে। এ বছর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি কমে দাঁড়িয়েছে ১৯ শতাংশে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ পরিসংখ্যান অনুযায়ী, এই সময়ে এই যন্ত্রপাতি আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে দুই দশমিক ৮১ বিলিয়ন ডলার, যা আগের অর্থবছরের একই সময়ে ছিল তিন দশমিক ৪৮ বিলিয়ন।

অর্থনীতিবিদ এবং ব্যবসায়ীরা বলছেন, বিনিয়োগের এই মন্দা পরিস্থিতি দেশের শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির গতিকে আরও ধীর করে দিতে পারে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে উদ্যোক্তারা নতুন শিল্প স্থাপন বা বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণে ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ডলার সংকট, যা ঋণপত্র (এলসি) খোলায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে।

বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, “নতুন বিনিয়োগে অনীহার কারণে পুঁজি সরঞ্জাম আমদানিও প্রভাবিত হয়েছে। উদ্যোক্তারা নতুন শিল্প কারখানা স্থাপন ও বিদ্যমান ব্যবসা সম্প্রসারণে পিছিয়ে পড়ছেন।”

তিনি আরও বলেন, “ডলার সংকটের কারণে ব্যবসায়ীরা এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খুলতে পারছে না, এতে তারা যন্ত্রপাতি আমদানিতে বাধাগ্রস্ত হচ্ছেন। এলসি খোলার হার কমে গেছে, যা পণ্যের আমদানি ব্যাহত করছে। বিভিন্ন শিল্পে কাঁচামাল আমদানিতেও সমস্যা তৈরি হয়েছে। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও ডলার সংকট; এই দুইই বাংলাদেশের আমদানি বাণিজ্যে ক্ষতিকর প্রভাব ফেলছে।

এই পরিস্থিতিকে ‘ধীরে চলো’ নীতির প্রতিফলন হিসেবে দেখছেন ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সাবেক সভাপতি রিজওয়ান রহমান।

তিনি বলেন, “দেশের বেসরকারি খাত তাদের বিনিয়োগ সুরক্ষার জন্য ব্যবসার গতি কমিয়ে দিয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সংকটের কারণে দেশের সার্বিক কর্মপ্রবাহও ধীর হয়ে যাচ্ছে।”

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, শুধু কেবল মূলধনী যন্ত্রপাতিই নয়, অন্যান্য পুঁজি পণ্যের আমদানিও প্রায় ছয় শতাংশ হ্রাস পেয়ে ছয় দশমিক ৬৩ বিলিয়ন ডলারে নেমেছে, যা আগের বছর ছিল সাত দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলার।

পেট্রোলিয়াম পণ্যের আমদানি ১৬ দশমিক দুই শতাংশ কমে পাঁচ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানির চিত্র বেশ ওঠানামার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। ২০১৮ অর্থবছরে এই খাতের আমদানি সাম্প্রতিক সময়ের সর্বোচ্চ পাঁচ দশমিক ৪৬ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছিল। এরপর ২০১৯-২০ অর্থবছরে মহামারির প্রভাবে আমদানি প্রায় ৩৪ শতাংশ কমে তিন দশমিক ৫৮ বিলিয়ন ডলারে নেমে আসে, যা ছিল একটি বড় ধাক্কা।

বিশ্বব্যাংক ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের মতো সংস্থাগুলোও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়েছে, যার অন্যতম কারণ হিসেবে রাজনৈতিক অস্থিরতা ও বেসরকারি বিনিয়োগে ভাটার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

অর্থনীতিবিদরা সতর্ক করেছেন যে, বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নত করতে এবং নীতিগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করতে না পারলে এই সংকট আরও দীর্ঘায়িত হতে পারে, যা দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি অশনি সংকেত।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫