Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

নির্দিষ্ট সংস্কারে ইউনূসের প্রভাব খাটানো উচিত ছিল: রেহমান সোবহান

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ১৬:১৮

নির্দিষ্ট সংস্কারে ইউনূসের প্রভাব খাটানো উচিত ছিল: রেহমান সোবহান

সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান।

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের উচিত ছিল নির্দিষ্ট কিছু সংস্কার এজেন্ডায় তাঁর প্রভাব খাটানো, বলেছেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান। তার মতে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ব্যক্তিগত স্বীকৃতির কারণে সংস্কার প্রক্রিয়ায় যথেষ্ট প্রভাব বিস্তারের সুযোগ থাকলেও মুহাম্মদ ইউনূস বা তার সরকার তা করেনি।

শনিবার রাতে সেন্টার ফর সোশ্যাল রিসার্চ আয়োজিত ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি অব ইকোনমিক রিফর্মস: প্রমিসেস, অবস্ট্যাকলস, রিয়েলিটি’ শীর্ষক এক ওয়েবিনারে তিনি এ কথা বলেন।

আলোচনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সেলিম রায়হান।

রেহমান সোবহান বলেন, “সংস্কারের এই দায়িত্ব এসে পড়েছে নাগরিক সমাজের (সিভিল সোসাইটি) একটি ছোট দলের ওপর। নাগরিক সমাজ এখন কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে ১০টি ভিন্ন কমিশনের প্রস্তাবিত সংস্কারকে একত্রিত করার। অথচ এসব কমিশনেরই কোনো সুস্পষ্ট দায়িত্ব বা ম্যান্ডেট ছিল না। ফলে সংস্কার প্রক্রিয়ায় সমন্বয়ের ঘাটতি ছিল, অগ্রাধিকারের ভিত্তি বা আদর্শিক দিকনির্দেশও ছিল না।”

তিনি আরও বলেন, “প্রতিটি কমিশনের কাজ ছিল নিজ নিজ খাত নিয়ে আলাদাভাবে ভাবা। কিন্তু বড় রাজনৈতিক কাজের দায়িত্ব পড়ে গেল একটি তুলনামূলক ছোট দলের ওপর, যাদের ১০০ রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বসে সংস্কার বিষয়ে একমত হতে হয়েছে।”

অন্তর্বর্তী সরকারের হাতে থাকা সময় প্রসঙ্গে রেহমান সোবহান বলেন, “এখন কাজ চলছে এক ধরনের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রেক্ষাপটে, যাদের হাতে হয়তো আরও ছয় মাস সময় আছে। এরপর তারা নির্বাচন আয়োজন করে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। এখন আলোচনার বিষয় হওয়া উচিত এই ছয় মাসে তারা কী করবে এবং এর থেকে কী ধরনের ফলাফল পাওয়া সম্ভব।”

‘সংস্কারে ক্ষমতাবানদের আগ্রহ কম’

মূল প্রবন্ধে অধ্যাপক সেলিম রায়হান বলেন, “সংস্কারে ক্ষমতাবানদের আগ্রহ কম। যারা সংস্কার চায়, তাদের হাতে শক্তি নেই। অন্যদিকে শক্তিশালী এক সংস্কার-বিরোধী (অ্যান্টি-রিফর্ম) চক্র রয়েছে। এটি বিশেষ করে ব্যাংক ও রাজস্ব খাতে স্পষ্ট হয়েছে।”

তিনি মন্তব্য করেন, “বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর অর্থনৈতিক সংস্কারের ব্যাপারে বড় আশা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু সাফল্যের জন্য পরিস্থিতি ভঙ্গুর। এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সংস্কার হয়েছে ব্যাংক খাতে। তবে এগুলো ভবিষ্যতে চলমান থাকবে কি না, তা অনিশ্চিত।”

ভবিষ্যতের করণীয় হিসেবে তিনি বলেন, “অতীতে স্বজনতন্ত্রভিত্তিক পুঁজিবাদের (ক্রোনি ক্যাপিটালিজম) কারণে রাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসন কমে গিয়েছিল। ক্ষমতার কেন্দ্রে চলে এসেছিল প্রভাবশালী ব্যবসায়ী ও আমলারা। তাই ভবিষ্যতে সংস্কার বাস্তবায়নের জন্য রাষ্ট্রের স্বায়ত্তশাসন বাড়াতে হবে। রাজনৈতিক দলগুলোকে সংস্কারে আগ্রহী হতে হবে। আমলাতন্ত্রকে পেশাদার করতে হবে।”

‘ব্যবসায়ী-আমলা-রাজনীতিকদের যোগসাজশ’

পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী পরিচালক ও ব্র্যাকের চেয়ারপারসন ড. হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “সংস্কার শব্দের আড়ালে অনেক কিছু চাপা পড়ে যাচ্ছে। আমলারা ঠিক করে দিচ্ছে কী করা যাবে, কী করা যাবে না। এখন বড় বিষয় হলো ব্যবসায়ী, রাজনৈতিক নেতা ও আমলাদের যোগসাজশ; নাগরিক সমাজও এর সঙ্গে যুক্ত।”

তিনি আরও বলেন, “আমাদের ভবিষ্যত নির্ভর করছে দক্ষ মানবসম্পদ, প্রবৃদ্ধির নতুন চালক এবং প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কৃতির ওপর। আমাদের দেশ এগোবে, কিন্তু কত দ্রুত এগোবে তা এসবের ওপর নির্ভর করছে।”

‘সংস্কার মানে বৈষম্য কমানো’

বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) সাবেক গবেষণা পরিচালক রুশিদান ইসলাম রহমান বলেন, “অর্থনৈতিক সূচকের উন্নতি সংস্কার নয়, এটি শুধু সামষ্টিক অর্থনীতির ব্যবস্থাপনা; রিজার্ভ হয়তো এতে বাড়বে। সংস্কার মানে বৈষম্য কমানো ও কর্মসংস্থান বাড়ানো; নইলে এটিকে পূর্ণ সংস্কার বলা যাবে না।”

তিনি বলেন, “গত এক বছরে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান বা মজুরি কোনো কিছুই বাড়েনি। তাই সংস্কার করতে হলে কৃষি ও শিল্পের মতো খাতভিত্তিক সংস্কার করতে হবে।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকোনমিক রিসার্চ ব্যুরোর চেয়ারম্যান অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, “সংস্কারের জন্য শক্ত কোনো পদক্ষেপ নেই। বর্তমান পদক্ষেপগুলো ভবিষ্যতে চলবে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ আছে। ব্যবসায়ী, আমলা ও রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে এক ধরনের বোঝাপড়া রয়েছে।”

তিনি মনে করেন, “বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা হলো শিক্ষায় গুরুত্ব না দেওয়া। তবে পরবর্তী নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হলে সংস্কারের পথ তৈরি হবে।”

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় (অনারারি) ফেলো নজরুল ইসলাম। আলোচনায় আরও বক্তব্য রাখেন বিশ্বব্যাংক ও আইএফসির সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ আখতার মাহমুদ এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ বিরুপাক্ষ পাল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫