Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা ২৮ শতাংশ বেড়েছে, খাবারের পেছনে খরচ ৫৫ শতাংশ

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১৩:৩২

দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা ২৮ শতাংশ বেড়েছে, খাবারের পেছনে খরচ ৫৫ শতাংশ

প্রতীকী ছবি

তিন বছরের ব্যবধানে দেশে গরিব মানুষের হার কমেনি বরং বেড়েছে। সরকারি হিসাব অনুযায়ী ২০২২ সালে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ, যা ২০২৫ সালে দাঁড়িয়েছে ২৭ দশমিক ৯৩ শতাংশে। একই সময়ে অতি দারিদ্র্যের হারও বেড়ে ৫ দশমিক ৬ থেকে ৯ দশমিক ৩৫ শতাংশে পৌঁছেছে।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) মিলনায়তনে বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টারের (পিপিআরসি) গবেষণা প্রতিবেদন ‘ইকনোমিক ডায়নামিকস অ্যান্ড মুড অ্যাট হাউজহোল্ড লেভেল ইন মিড ২০২৫’ প্রকাশ অনুষ্ঠানে এ তথ্য তুলে ধরা হয়।

পিপিআরসি বলছে, দারিদ্র্য বৃদ্ধির পেছনে মূলত তিন ধরনের সংকট প্রভাব ফেলছে, কোভিড-১৯ মহামারি (২০২০-২২), বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা।

গবেষণায় দেখা গেছে, শহরের পরিবারের গড় আয় কমলেও খরচ বেড়েছে। বর্তমানে শহরে একটি পরিবারের মাসিক গড় আয় ৪০ হাজার ৫৭৮ টাকা, কিন্তু খরচ ৪৪ হাজার ৯৬১ টাকা। অন্যদিকে গ্রামে আয় কিছুটা বেড়েছে, তবে জাতীয় পর্যায়ে সঞ্চয় প্রায় শূন্যের কোঠায়।

একই গবেষণায় বলা হয়, পরিবারের মাসিক খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশই চলে যাচ্ছে খাবার কেনায়। চিকিৎসা, শিক্ষা ও যাতায়াত খাতে ব্যয়ও উল্লেখযোগ্য।

আগস্টের পর ঘুষ নেওয়া কমেছে

গবেষণায় আরও উঠে এসেছে, গত বছরের আগস্টের পর ঘুষ কমলেও পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। আগস্টের আগে ৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ সেবা নিতে ঘুষ দিয়েছেন; আগস্টের পরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশে। সবচেয়ে বেশি ঘুষ দিতে হয়েছে সরকারি অফিসে, এরপর পুলিশ ও রাজনৈতিক নেতাদের।

গবেষণা ফলাফল উপস্থাপনকালে পিপিআরসির নির্বাহী চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারও সঙ্গত কারণে ক্ষুদ্র অর্থনীতির তুলনায় সামষ্টিক অর্থনীতিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। তবে অর্থনীতির পরিকল্পনায় এখন জনমুখী দৃষ্টি রাখা অত্যন্ত জরুরি হয়ে পড়েছে। শুধু জিডিপি নিয়ে আলোচনা না করে সমতা, ন্যায়বিচার, বৈষম্যহীনতা ও নাগরিক কল্যাণকে আলোচনায় আনতে হবে।”

হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, বর্তমান বাস্তবতায় পাঁচটি নতুন ঝুঁকিপূর্ণ ক্ষেত্র আমাদের বিশেষভাবে মনে রাখা দরকার। প্রথমত, আমাদের মাঝে দীর্ঘস্থায়ী রোগের বোঝা ক্রমেই বাড়ছে। ক্রনিক রোগ মোকাবিলার জন্য একটি নতুন ধরনের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি প্রয়োজন। দ্বিতীয়ত, নারীপ্রধান পরিবারগুলো সমাজের সবচেয়ে নিচের স্তরে পড়ে আছে, তাই এদের বিশেষ সহায়তা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, ঋণের বোঝা বাড়ছে, যা একটি বড় ধরনের সমস্যা হয়ে উঠছে। চতুর্থত, ক্রমবর্ধমান খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা। এটি এখনো ব্যাপক আকারে হয়নি, তবে ধীরে ধীরে বাড়ছে এবং যা উদ্বেগজনক। পঞ্চমত, স্যানিটেশন সংকট উত্তরণ করে এসডিজি অর্জনের জন্য আমাদের হাতে মাত্র পাঁচ বছর আছে, কিন্তু এখনো প্রায় ৩৬ শতাংশ মানুষ নন-স্যানিটারি টয়লেট ব্যবহার করছে। ফলে নিরাপদ স্যানিটেশন নিশ্চিত করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ধারাবাহিক সংকট ও কর্মসংস্থানে জরুরি পরিস্থিতি

কর্মসংস্থান প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা এখন কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতির মুখোমুখি। অন্তত ৩৮ শতাংশ মানুষ বলছেন তারা কাজ করছেন, কিন্তু বাস্তবে তারা ছদ্মবেশী বেকার। নারীদের অংশগ্রহণ ২৬ শতাংশে সীমিত। তাই কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ধরনের ভাবনা এবং জরুরি পদক্ষেপ এখন সময়ের দাবি।”

নিজের উপস্থাপনায় হোসেন জিল্লুর আরও বলেন, “বাংলাদেশ গত কয়েক বছরে ধারাবাহিক সংকটের মধ্যে দিয়ে গেছে, ২০২২ সালে করোনাভাইরাস, ২০২৩ সালে বৈশ্বিক মূল্যস্ফীতি এবং ২০২৪ সালে রাজনৈতিক পরিবর্তন। এতে সম্ভাবনার পাশাপাশি অনিশ্চয়তাও তৈরি হয়েছে।”

তিনি জানান, বর্তমানে প্রায় ১৮ শতাংশ পরিবার দারিদ্র্যসীমার ওপরে থাকলেও যেকোনো সময় নিচে নেমে যেতে পারে। এদেরকে আলোচনায় আনা প্রয়োজন। 

তিনি বলেন, “টিসিবি থেকে যারা কেনাকাটা করে তাদের ভিজ্যুয়াল ডায়েরি করলে বোঝা যাবে ধীরে ধীরে বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ সেখানে আসছে।”

কর্মসংস্থান নিয়ে হোসেন জিল্লুর রহমান আরও বলেন, আমাদের মাঝে এখন কর্মসংস্থানের জরুরি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। বেকারত্বের দুর্যোগের বাস্তবতার মধ্যে আমরা অবস্থান করছি। কর্মসংস্থান নিয়ে বড় ধরনের ভাবনা এবং জরুরি উদ্যোগ প্রয়োজন। এ বিষয়ে এখনই আমাদের আলোচনা এবং কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

আশার দিকও আছে

তবে সবকিছুতে হতাশার ছবি নয়। হোসেন জিল্লুর উল্লেখ করেন, রেমিট্যান্স, পারিবারিক ভোগের বাজার, ডিজিটাল ডিভাইসের ব্যবহার ও জ্বালানির স্মার্ট ব্যবহারের মতো খাতে ইতিবাচক দিক রয়েছে। বর্তমানে ৭৪ শতাংশ পরিবার স্মার্টফোন ব্যবহার করে, আর তরুণ প্রজন্ম থাকলে সেই হার ৮০ শতাংশে পৌঁছেছে।

তবুও তিনি সতর্ক করে বলেন, দারিদ্র্য বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে সমাজে শ্রেণি বৈষম্য ও আশাবাদ–নৈরাশ্যের বিভাজন বাড়ছে। দরিদ্র মানুষের মধ্যে নৈরাশ্যবাদের হার বেশি, উচ্চবিত্তের মধ্যে তা তুলনামূলকভাবে কম।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫