শ্রম আইন সংশোধন: কারখানা মালিকদের শাস্তি বাড়ছে

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৮ আগস্ট ২০২৫, ১৩:২৯

এখন অন্তত ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে
বাংলাদেশের শ্রম আইন সংশোধনের প্রস্তাবিত খসড়ায় কারখানা মালিকদের জন্য শাস্তি বাড়ানো হয়েছে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ঢাকায় অনুষ্ঠিত ত্রিপক্ষীয় পরামর্শ কমিটির-টিসিসি নিয়মিত সভায় সরকার, মালিকপক্ষ ও শ্রমিক প্রতিনিধি অংশগ্রহণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সংশোধিত শ্রম আইনে বলা হয়েছে, বর্তমানে শিশু শ্রম ব্যবহার করলে সর্বোচ্চ পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়, যা বাড়িয়ে ২৫ হাজার টাকা করা হবে। শ্রমিক মারা গেলে বা আহত হলে মালিকদের সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা জরিমানা বা সর্বোচ্চ চার বছরের কারাদণ্ড হতে পারে।
শ্রমিক সুরক্ষার ক্ষেত্রেও নতুন বিধান যুক্ত হয়েছে। বলা হয়েছে, যদি কোনো শ্রমিক জানান- কোনো কাজ জীবন বা স্বাস্থ্যের জন্য গুরুতর ঝুঁকিপূর্ণ, মালিক তাকে সেই কাজে বাধ্য করতে পারবেন না। একইসঙ্গে শ্রমিকদের কালো তালিকাভুক্ত করা নিষিদ্ধ করা হয়েছে এবং শ্রম আইন ও জাতীয় নিরাপত্তা নীতিমালার অধীনে সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিলে মালিকেরা তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবেন না।
সংশোধিত শ্রম আইনে আরও বলা হয়েছে, অন্তত ১০০ জন স্থায়ী শ্রমিক থাকা কারখানায় প্রভিডেন্ট ফান্ড গঠন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, যা আগে ঐচ্ছিক ছিল। মাতৃত্বকালীন ছুটির বিধান লঙ্ঘন করলে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা হতে পারে।
ছয় মাসে ছুটি বাড়ানো বা কর্মক্ষেত্রে দুর্ঘটনায় ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর দাবি মালিকেরা মেনে নেননি বলে সূত্র জানিয়েছে।
শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের প্রক্রিয়াও সহজ করা হয়েছে। বর্তমান আইনে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনে কোনো কারখানার ২০ শতাংশ শ্রমিকের সম্মতি প্রয়োজন হলেও সংশোধিত আইনে এ শর্ত আর থাকবে না। এখন অন্তত ২০ জন শ্রমিকের সম্মতিতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠন করা যাবে।
আন্তর্জাতিক মানের সঙ্গে বাংলাদেশের শ্রম আইন সমন্বয়ের জন্য আন্তর্জাতিক অংশীদারদের চাপের প্রেক্ষাপটে এ সংস্কার আনা হচ্ছে। গত ২৪ আগস্ট ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার শ্রম সচিবের সঙ্গে বৈঠকে এসব সংশোধনী দ্রুত বাস্তবায়নের আহ্বান জানান, যাতে বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধা ধরে রাখতে পারে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশন-বিইএফ সভাপতি ফজলে শামিম এহসান সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “আমরা সংশোধনী সমর্থন করি, তবে সরকার এ প্রক্রিয়ায় কিছুটা তাড়াহুড়া করছে।”
“এই সংশোধনীগুলো অনেকটা বিদেশি চাপের মুখে আনা হয়েছে, যা আমাদের কাছে অসম্মানজনক মনে হচ্ছে,” বলেন তিনি।
স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণের পর বাংলাদেশ জিএসপি প্লাস সুবিধার জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে প্রস্তুত পোশাক খাত নিরাপত্তা শর্তের কারণে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা হারাতে পারে, তাই আন্তর্জাতিক শ্রমমান পূরণ করা এখন আরও জরুরি হয়ে পড়েছে।