নীতি সুদহার কমালো ফেডারেল রিজার্ভ, ঋণ চুক্তিতে স্বস্তির আশা বাংলাদেশের

জান্নাতুল ফেরদৌসী
প্রকাশ: ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:১২

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ।
যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ নীতি সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, যার ইতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশের বিদেশি ঋণের ওপর পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
ফেডারেল রিজার্ভের চেয়ারম্যান জেরোম পাওয়েল এক সংবাদ সম্মেলনে জানান, মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মূল ঋণের সুদ হার ০.২৫ শতাংশীয় পয়েন্ট কমানো হয়েছে। বিবিসি জানিয়েছে, এটি চলতি বছরে প্রথমবার হার কমানোর ঘটনা এবং এর ফলে প্রধান ঋণের সুদ হারের নতুন লক্ষ্যমাত্রা দাঁড়িয়েছে ৪ শতাংশ থেকে ৪.২৫ শতাংশে।
সাংবাদিকদের পাওয়েল বলেন, “ঝুঁকির ভারসাম্য এখন কর্মসংস্থানের দিকে সরে গেছে, যেখানে এর আগে তা মুদ্রাস্ফীতির দিকে বেশি ঝুঁকেছিল।”
ফেড কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন, এ বছর তারা সুদের হার আরও দুইবার কমাতে পারেন।
এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের সুবিধা হতে পারে বলে মনে করেন বিশ্বব্যাংকের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ সরকার টু সরকার ঋণে স্বস্তি পাবে, যেগুলো এসওএফআর (সিকিউরড ওভারনাইট ফাইন্যান্সিং রেট) এর সঙ্গে যুক্ত। সুদহার কমবে।”
তিনি মনে করেন, এর ফলে বাংলাদেশ বিলিয়ন ডলারের স্বস্তি পাবে।
জাহিদ হোসেন আরও বলেন, “বেসরকারি খাতও যেসব এলসি এসওএফআর এর সঙ্গে যুক্ত করে খুলেছিল, সেখানে সুবিধা পাবে।”
বিবিসির প্রতিবেদন অনুযায়ী, আগামী বছর ফেডারেল রিজার্ভ আরও পাঁচবার রেপো রেট কমাতে পারে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “মুদ্রাস্ফীতি বাড়ার সম্ভাবনা খুব কম। তবে মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল থাকলে এই পদক্ষেপ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে শান্ত করতে কাজ করবে।”
তবে ফিন্যান্সিয়াল এক্সিলেন্স লিমিটেডের চেয়ারম্যান মামুন রশীদ বলেছেন, বিদেশি মুদ্রা হিসাবের (এফসিওয়াই) সুদ, বিশেষত মার্কিন ডলারে, কমতে পারে। তবে স্থায়ী বা বিদ্যমান ঋণে খুব বেশি লাভ হবে না।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সুদের হার দ্রুত না কমানোর জন্য পাওয়েলের সমালোচনা করেছেন। তিনি পাওয়েলকে কখনও ‘খুব দেরি’ আবার কখনও ‘বুদ্ধুহীন’ বলেছেন।
সুদের হার কমানোর ঘোষণার পর ওয়াল স্ট্রিটে শেয়ারের দাম বাড়লেও পরে তাতে ওঠানামা দেখা যায়। ডলারের দর সামান্য বাড়লেও ট্রেজারি বন্ডের বিপরীতে ইল্ড প্রায় অপরিবর্তিত ছিল। অক্টোবরের বৈঠকেও সুদের হার কমানো হতে পারে বলে বাজার সংশ্লিষ্টরা ধারণা করছেন।
বিশ্লেষকদের মতে, ফেডারেল রিজার্ভের এই নীতিগত পরিবর্তন ইঙ্গিত দেয় যে এটি ধীরে ধীরে একটি ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থানের দিকে এগোচ্ছে। ২০২৬ সালের মধ্যে মুদ্রাস্ফীতি স্থিতিশীল হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
ট্রাম্পের হস্তক্ষেপের সমালোচনা সত্ত্বেও তার মনোনীত ফেড গভর্নর মিশেল বোম্যান ও ক্রিস্টোফার ওয়ালার শেষ পর্যন্ত মূল সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত হন।
তবে পাওয়েল স্পষ্ট করে দিয়েছেন, “আমাদের সংস্কৃতির মূল হলো তথ্যভিত্তিক সিদ্ধান্ত।”