Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

বায়ু বিদ্যুৎ সক্ষমতার শীর্ষে চীন, প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ

Icon

অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৬:৩৬

বায়ু বিদ্যুৎ সক্ষমতার শীর্ষে চীন, প্রাথমিক পর্যায়ে বাংলাদেশ

বৈশ্বিক বায়ু বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধি তালিকার শীর্ষে চীন।

বৈশ্বিক বায়ু বিদ্যুৎ খাতে ক্ষমতার ভারসাম্যে এক নাটকীয় পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। একদিকে চীন তার সক্ষমতা অভাবনীয়ভাবে বাড়িয়ে নিজেকে বিশ্বের শীর্ষে প্রতিষ্ঠিত করেছে, অন্যদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কয়েকটি প্রধান অর্থনীতিতে এই খাতে স্থবিরতা নেমে এসেছে।

এই বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশও নবায়নযোগ্য জ্বালানির পথে হাঁটছে, যদিও বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনে দেশটির অবস্থান এখনো একেবারেই প্রাথমিক পর্যায়ে।

সম্প্রতি বৈশ্বিক বায়ু বিদ্যুৎ খাতের কোন দেশের কেমন অবস্থান তা নিয়ে এনার্জি ইনস্টিটিউটের বিশ্ব জ্বালানি পরিসংখ্যান পর্যালোচনা রিপোর্টের ভিত্তিতে, সোমবার ভিজ্যুয়াল ক্যাপিটালিস্ট একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে দেখা যায়, নবায়নযোগ্য জ্বালানির দিকে বিশ্ব ঝুঁকলেও প্রধান অর্থনীতির দেশগুলোর মধ্যে বায়ু বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ ও প্রবৃদ্ধিতে বড় ধরনের পার্থক্য তৈরি হয়েছে।

তালিকায় সব থেকে এগিয়ে চীন। ২০২৪ সালে দেশটি ৫ লাখ ২১ হাজার ৭৪৬ মেগাওয়াট ইনস্টলকৃত বায়ু বিদ্যুৎ সক্ষমতা নিয়ে বিশ্বের শীর্ষে অবস্থান করছে, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ দশমিক ১ শতাংশ বেশি।

এই বিশাল প্রবৃদ্ধি চীনকে বৈশ্বিক পরিচ্ছন্ন জ্বালানি খাতে একচ্ছত্র আধিপত্যের সুযোগ করে দিয়েছে। চীন সরকারের উদ্ভাবনী নীতি ও বিপুল জাতীয় তহবিল সহায়তার কারণে এই খাতে বিশাল সাফল্য পেয়েছে। বড় আকারের টারবাইন স্থাপন এবং প্রযুক্তিগত অগ্রগতির মাধ্যমে দেশটি বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনকে আরও কার্যকর করে তুলেছে।

এর ফলে, চীন ২০৩০ সালের মধ্যে ১২০০ গিগাওয়াট বায়ু ও সৌর শক্তি উৎপাদনের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছিল, তা নির্ধারিত সময়ের ছয় বছর আগেই অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র ১ লাখ ৫৩ হাজার ১৫২ মেগাওয়াট সক্ষমতা নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকলেও গত এক বছরে তাদের কোনো নতুন সক্ষমতা যোগ হয়নি। একইভাবে নতুন কোন সক্ষমতা না বাড়িয়ে তৃতীয়, ষষ্ঠ ও সপ্তম স্থানে রয়েছে জার্মানি, স্পেন ও যুক্তরাজ্য ।

যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম বায়ু বিদ্যুৎ বাজার হওয়া সত্ত্বেও ২০২৪ সালে এই খাতে দেশটির প্রবৃদ্ধি থমকে গেছে। বিশ্লেষকরা এর কারণ হিসেবে প্রতিকূল বায়ু পরিস্থিতি এবং সরবরাহ শৃঙ্খলের সমস্যাকে দায়ী করছেন।

জার্মানিতেও একই ধরনের স্থবিরতা লক্ষ্য করা গেছে, যদিও দেশটির মোট বিদ্যুতের ২৩ দশমিক ১ শতাংশ এখন বায়ু শক্তি থেকে আসছে, যা তাদের জন্য পরিচ্ছন্ন জ্বালানির সবচেয়ে বড় উৎস।

তবে ছোট অর্থনীতির দেশগুলো বায়ু বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি দেখিয়েছে। ব্রাজিলের সক্ষমতা ১৩ দশমিক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে ৩২ হাজার ৯৫৯ মেগাওয়াটে দাঁড়িয়েছে।

অস্ট্রেলিয়া ১৮ দশমিক ৪ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে ১৫ হাজার ২৮৮ মেগাওয়াট এবং তুরস্ক ৯ দশমিক ৯ শতাংশ প্রবৃদ্ধিসহ ১২ হাজার ৯৭৩ মেগাওয়াট সক্ষমতা অর্জন করেছে।

এদিকে বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতও ৭ দাশমিক ৭ শতাংশ প্রবৃদ্ধি নিয়ে এই তালিকায় চতুর্থ স্থানে রয়েছে, যাদের মোট সক্ষমতা ৪৮ হাজার ১৬৩ মেগাওয়াট।

বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রযুক্তি জায়ান্ট কোম্পানিগুলোর ক্লিন এনার্জি খাতে বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ বায়ু ও সৌরশক্তির মতো নবায়নযোগ্য জ্বালানির চাহিদা বিশ্বব্যাপী বাড়িয়ে দিয়েছে। বড় টারবাইনের ব্যবহার এবং শিল্পের প্রসারের ফলে বায়ু বিদ্যুৎ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর ও সাশ্রয়ী হয়ে উঠেছে।

এদিকে বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের বায়ু বিদ্যুৎ সক্ষমতা এখনো খুবই নগণ্য। তবে সম্প্রতি এই খাতে একটি গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি হয়েছে। ২০২৪ সালের মার্চ মাসে কক্সবাজারে দেশের প্রথম বাণিজ্যিক ৬০ মেগাওয়াটের বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পূর্ণ উৎপাদনে গিয়েছে। ২২টি টারবাইন নিয়ে গঠিত এই কেন্দ্রটি দেশের নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। এটি পুরোদমে চালু হলে বছরে ১৪৫ মিলিয়ন কিলোওয়াট-ঘণ্টার বেশি সবুজ বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারবে, যা প্রায় এক লক্ষ পরিবারের বিদ্যুতের চাহিদা মেটাতে সক্ষম।

এর আগে ২০০৫ সালে ফেনীর সোনাগাজীতে এবং ২০০৮ সালে কুতুবদিয়ায় পরীক্ষামূলকভাবে দুটি ছোট বায়ু বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপিত হলেও রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে সেগুলো এখন বন্ধ। বর্তমানে সিরাজগঞ্জ, বাগেরহাট ও চুয়াডাঙ্গায় আরও তিনটি বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্পের কাজ চলছে, যেগুলোর সম্মিলিত উৎপাদন ক্ষমতা ১০২ মেগাওয়াট।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি ল্যাবরেটরির গবেষণা অনুযায়ী, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলে বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের বিপুল সম্ভাবনা রয়েছে এবং প্রায় ২০,০০০ বর্গকিলোমিটার এলাকা বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য উপযুক্ত। এই সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশ ৩০ গিগাওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে।

সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে স্থলভিত্তিক ও সমুদ্রভিত্তিক উভয় উৎস থেকে ৫ গিগাওয়াট বায়ু বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে।

তবে এই সম্ভাবনা কাজে লাগানোর পথে প্রযুক্তিগত জ্ঞান, বড় বিনিয়োগ এবং দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনার মতো চ্যালেঞ্জও রয়েছে। বৈশ্বিক শক্তিধর দেশগুলোর তুলনায় অনেক পিছিয়ে থাকলেও, কক্সবাজারের সফল বাণিজ্যিক উৎপাদন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচনা এবং ভবিষ্যতের জন্য সম্ভাবনার দ্বার উন্মুক্ত করেছে।

এছাড়া বিশ্বের শীর্ষ ১৫টি দেশের তালিকায় এর মধ্যে অষ্টম থেকে পনেরোতম স্থান পর্যাক্রমে দখল করে আছে ফ্রান্স, কানাডা, সুইডেন, ইতালি, নেদারল্যান্ডস ও পোল্যান্ডের মতো দেশগুলো, যারাও তাদের বায়ু বিদ্যুৎ সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করে যাচ্ছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫