Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

‘মালিকানা পরিবর্তন হলেও নোভার্টিসের মান বজায় রাখবে নেভিয়ান’

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৩:১৩

‘মালিকানা পরিবর্তন হলেও নোভার্টিসের মান বজায় রাখবে নেভিয়ান’

মুসাওয়াত শামস জাহেদী।

নোভার্টিস বাংলাদেশ লিমিটেডের নাম পরিবর্তন করে সম্প্রতি নেভিয়ান লাইফসায়েন্স পিএলসি করা হয়েছে। তবে নাম ও মালিকানা পরিবর্তন হলেও জনস্বার্থে ওষুধের গুণমান বা উৎপাদন প্রক্রিয়ায় কোনো পরিবর্তন আনছে না প্রতিষ্ঠানটি। পুরোনো কারখানা, পদ্ধতি, জনবল ও কাঁচামাল ব্যবহার করে আগের মতোই ওষুধ উৎপাদন চলবে, এবং নতুন ওষুধ বাজারে আসলে সেগুলো নেভিয়ান ব্র্যান্ডের নামে পরিচিত হবে। এসব বিষয়ে জাতীয় দৈনিক যুগান্তরকে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন প্রতিষ্ঠানটির নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুসাওয়াত শামস্ জাহেদী, যিনি গত ২৪ জুলাই দায়িত্ব নেন।

নোভার্টিস বাংলাদেশ লিমিটেডের ব্যবসা অধিগ্রহণে আগ্রহের কারণ জানাতে গিয়ে মুসাওয়াত শামস্ জাহেদী বলেন, “জীবনরক্ষাকারী ওষুধের গবেষণা ও উৎপাদনে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানি নোভার্টিসের ইতিহাস ২৫০ বছরেরও বেশি পুরোনো। পাঁচ দশকের বেশি সময় ধরে বাংলাদেশের রোগীরাও এসব ওষুধের সুফল সরাসরি পেয়ে আসছেন।

“কৌশলগত কারণে বাংলাদেশে নোভার্টিস মালিকানা ছাড়লে এদেশের রোগী ও চিকিৎসকদের নির্ভরতার জায়গায় এক ধরনের শূন্যতা সৃষ্টি হতো, এমন আশঙ্কা সবদিক থেকেই ছিল। সেই শূন্যতা পূরণে কেবলমাত্র ব্যবসা সম্প্রসারণ বা নোভার্টিসের স্থায়ী সম্পদ নয়, কাঁচামাল থেকে শুরু করে উৎপাদন কৌশল, এমনকি এর দক্ষ জনবলের সবটাই সঙ্গে নিয়ে নোভার্টিসের ওষুধগুলো একই নামে ও একই মানে এদেশের রোগীদের স্বার্থেই অধিগ্রহণ করা হয়েছে।”

ওষুধ উৎপাদনের ক্ষেত্রে আগে থেকেই সুইস জায়ান্ট রোশ-এর ওষুধ উৎপাদন করার অভিজ্ঞতা আছে রেডিয়েন্টের। রেডিয়েন্টের পূর্ব অভিজ্ঞতা নেভিয়ান কীভাবে কাজে লাগবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “নোভার্টিস বাংলাদেশের মেজরিটি শেয়ারহোল্ডার রেডিয়েন্ট এদেশে যাত্রাই শুরু করেছিল রোশ-এর ওষুধ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণের মধ্য দিয়ে। সে সময়ও উদ্দেশ্য ছিল বিশ্বমানের ওষুধগুলোর প্রাপ্যতা এদেশের রোগীদের জন্য নিশ্চিত করা।

“অল্প সময়ের মধ্যেই শীর্ষ দশে স্থান করে নেওয়া কোম্পানিটি গত এক দশকে আরও অন্তত এক ডজন বিশ্বখ্যাত বহুজাতিক ফার্মা কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত হয়েছে। যার মধ্যে আমেরিকার ফাইজার, জার্মানির বোরিংগার ও ফ্রেসেনিয়াস, জাপানের ইজাই উল্লেখযোগ্য; অধিগ্রহণ করেছে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জুলফার ফার্মার বাংলাদেশের ব্যবসাও। এক্ষেত্রে বিশ্বমানের কমপ্লায়েন্স নিশ্চিত করার মাধ্যমে বহুজাতিক ওষুধ কোম্পানিগুলোর জন্য বাংলাদেশের বাজারে আস্থার আরেক নাম হয়ে উঠেছে রেডিয়েন্ট। নোভার্টিসের ক্ষেত্রেও এসব অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো হবে। ”বাংলাদেশে নোভার্টিসের ওষুধ পাওয়া যাবে কিনা এ সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, “নেভিয়ান মূলত বাংলাদেশে নোভার্টিসের লাইসেন্সি উৎপাদক ও আমদানিকারক হিসাবে কাজ করবে। এর আওতায় দেশের বাজারে থাকা নোভার্টিসের সব ওষুধই আগের নামেই পাওয়া যাবে। নোভার্টিসের সুপরিচিত ব্র্যান্ডগুলো একই নামে, একই উপাদানে, একই প্রক্রিয়ায় এবং একই ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টে নেভিয়ান লাইসেন্সভিত্তিক উৎপাদন করবে।

“এর পাশাপাশি নোভার্টিসের ওষুধ আমদানির মাধ্যমে নেভিয়ান এদেশের রোগীদের চাহিদা মেটাবে। এক্ষেত্রে নেভিয়ানের ব্যানারেও নোভার্টিসের ওষুধগুলোর গুণগত মান ও কার্যকারিতা নিশ্চিতভাবেই অপরিবর্তিত থাকবে-এ ব্যাপারে নেভিয়ান অঙ্গীকারবদ্ধ।”

নেভিয়ান নামকরণের কারণ জানাতে গিয়ে মুসাওয়াত শামস্ জাহেদী বলেন, “নামকরণে দুটি ল্যাটিন শব্দ থেকে অনুপ্রেরণা নিয়েছি। ল্যাটিন শব্দ ‘নেভিও’ অর্থ উজ্জ্বল কিরণ, আর আরেক ল্যাটিন শব্দ ‘নেভিয়াস’-এর মানে আরেকবার নতুন করে শুরু করা। সেখান থেকেই নেভিয়ান-অনেকটা যেন নোভার্টিস শতবর্ষী ঐতিহ্যের শেকড়ে দাঁড়িয়ে নতুন করে শুরু করা, উজ্জ্বল কিরণে আগামী দিনগুলোকে আলোকিত করা। এমন চিন্তা থেকেই এই নামকরণ।

দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও ক্যান্সারসহ জটিল রোগের চিকিৎসায় ভাবনা সম্পর্কে জানাতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে নেভিয়ান একদিকে নোভার্টিসের সুপরিচিত ব্র্যান্ডগুলো, যেমন বর্তমান রোগীদের নির্ভরতার জায়গাটি ধরে রাখবে, অন্যদিকে তেমনি সর্বাধুনিক গবেষণা ও উন্নয়নের সুফল এদেশের রোগীদের নতুন ও দূরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসায় নিশ্চিত করতে নানামুখী অংশীদারিত্বের মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী যুক্ত থাকবে। নতুন ধরনের ওষুধ ও চিকিৎসাপদ্ধতি যেমন বায়োটেক, জিন থেরাপি, প্রিসিশন মেডিসিন ইত্যাদি নিয়ে আমরা খুব দ্রুত কাজ শুরু করব।

নোভার্টিসের উত্তরসূরি হিসাবে নেভিয়ানের সম্ভাবনা কতটুকু এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “টঙ্গীতে অবস্থিত নোভার্টিসের ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্টটি শেয়ার অধিগ্রহণের মধ্য দিয়ে নেভিয়ানের সঙ্গেই থাকছে। এটি ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস (ইইউ-জিমএমপি) সনদপ্রাপ্ত। তিনবারের জাতীয় রপ্তানি ট্রফি জয়ী নোভার্টিস বাংলাদেশের এই প্ল্যান্ট থেকে ইউরোপ, কানাডা ও দক্ষিণ আমেরিকাসহ বিশ্বের ৫০টিরও অধিক দেশের জন্য বহু বছর থেকেই আরেক সুইস বহুজাতিক স্যান্ডোজ ওষুধ আমদানি করে আসছে। নতুন নামে নেভিয়ানের সঙ্গেও সেই সম্পর্ক অব্যাহত থাকছে।

১৪ জুলাই কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় মুসাওয়াত শামস জাহেদীকে নোভার্টিস বাংলাদেশের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হিসেবে নিযুক্ত হকরা হয়।রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস নোভার্টিস বাংলাদেশের ৬০ শতাংশ শেয়ার অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া সম্পন্ন হওয়ার পর তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ১০ দিন পর ২৪ জুলাই তিনি দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি।

মুসাওয়াত শামস জাহেদী রেডিয়েন্ট ফার্মাসিউটিক্যালস এবং সহযোগী অন্যান্য কোম্পানি সমূহের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

তিনি যুক্তরাজ্যের ক্যাস বিজনেস স্কুল থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মুসাওয়াত জাহেদী একজন একজন দক্ষ গলফার। দেশের ক্রীড়ার উন্নয়নে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখে চলেছেন।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫