শিল্পে জ্বালানি সংকট: কাঁচা তুলার বিকল্পে বাড়ছে সুতা আমদানি

জান্নাতুল ফেরদৌসী
প্রকাশ: ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৭:৪৬

প্রতীকী ছবি
তীব্র বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংকটে দেশের টেক্সটাইল খাতের স্পিনিং মিলগুলোর উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। কারখানায় উৎপাদন চালু রাখতে না পারায় বিপাকে পড়েছেন ব্যবসায়ীরা। এজন্য তারা এখন কাঁচা তুলা আমদানি কমিয়ে, সরাসরি সুতা আমদানির দিকে ঝুঁকছেন, যা দেশের বস্ত্র খাতের জন্য অশনি সংকেত বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম মাস জুলাইয়ে কাঁচা তুলা আমদানির পরিমাণ কমে দাঁড়িয়েছে ২৭৫ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারে, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৩২০ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে, একই সময়ে তৈরি সুতার আমদানি ২৭৯ দশমিক ৩ মিলিয়ন ডলার থেকে বেড়ে ৩২৬ দশমিক ৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে, জ্বালানি সংকটের কারণে স্থানীয় মিলগুলো চাহিদা অনুযায়ী সুতা উৎপাদন করতে পারছে না। ফলে তৈরি পোশাকসহ অন্যান্য খাতের উৎপাদকরা আন্তর্জাতিক বাজার থেকে সুতা আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছেন।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ কারখানায় উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। শুধুমাত্র নীতিগত সহায়তা দিয়ে এই শিল্পকে বাঁচানো সম্ভব নয়, প্রয়োজন নিরবচ্ছিন্ন জ্বালানি সরবরাহ।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিটিএমএ) সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনসুর হোসেন বলেন, “বিদ্যুৎ ও গ্যাসের অভাবে শিল্প আজ ধ্বংসের পথে। এই অন্তর্বর্তী সরকারও কারখানায় বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হয়েছে।”
তিনি আরও বলেন, “তারা নীতি পর্যায়ে সংস্কারের কথা বলছে, কিন্তু আমাদের বেঁচে থাকার জন্য দরকার জ্বালানি। আমাদের সব পণ্যই আমদানিনির্ভর। সরকার এখনও ডলারের দাম নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি। আমাদের সংস্কার নয়, আমাদের একটি শক্তিশালী জ্বালানি নীতি প্রয়োজন।”
অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতার কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “স্থানীয় মুদ্রার মান অনেক কমে গেছে। ব্যাংক ঋণের সুদও আকাশছোঁয়া। এমন একটি অস্থিতিশীল পরিবেশে সরকার প্রণোদনা দিলেও আমাদের পক্ষে টিকে থাকা সম্ভব হবে না।”
সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সরকারের তুলা আমদানির চুক্তি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন মনসুর হোসেন বলেন, “আমেরিকার তুলার মান ভালো হলেও এর দাম অনেক বেশি এবং শিপমেন্টে দীর্ঘ সময় লাগে, যা আমাদের জন্য মোটেই লাভজনক নয়। এই চুক্তি ব্যবসায়ীদের জন্য নতুন সমস্যা তৈরি করবে।”
ভবিষ্যৎ পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে এই ব্যবসায়ী নেতা বলেন, “আমি মনে করি, নির্বাচনের পর পরিস্থিতি আরও ঝুঁকিপূর্ণ হবে। কারণ দেশে পর্যাপ্ত কর্মসংস্থান নেই, বিনিয়োগ নেই এবং নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। পরবর্তী সরকারের জন্য পরিস্থিতি মোকাবেলা করা অত্যন্ত কঠিন হবে।”
তিনি ব্যাংক ঋণের পুনঃতফসিল সুবিধারও কড়া সমালোচনা করে জানান, মাত্র ২ শতাংশ সুদে ঋণ পরিশোধের সুযোগ দেওয়ার এই সংস্কৃতি নির্বাচিত সরকারের জন্য ‘বুমেরাং’ হবে। এতে দলের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা একই ধরনের সুবিধা দাবি করবে, যা দেশের অর্থনীতি ও ব্যাংকিং খাতের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করবে।
এদিকে, রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, আগস্ট মাসে পণ্য রপ্তানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩ শতাংশ কমে ৩ দশমিক ৯১ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে, যা সার্বিক অর্থনৈতিক সংকটের চিত্রকে আরও স্পষ্ট করে তুলেছে।