বাংলাদেশে বিদেশি বিনিয়োগে প্রধান বাধা দুর্নীতি ও প্রশাসনিক জটিলতা: মার্কিন প্রতিবেদন

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৮:১৩

প্রতীকী ছবি
বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর অসম করের বোঝা, দুর্নীতি, প্রশাসনিক জটিলতা, অপর্যাপ্ত অবকাঠামো ও অর্থায়নের সীমিত সুযোগ বাংলাদেশে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ আকর্ষণে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।
সম্প্রতি ইউএস স্টেট ডিপার্টমেন্টের ‘২০২৫ বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ক্লাইমেট স্টেটমেন্ট’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে এ বিষয়গুলো উল্লেখ করে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে বাংলাদেশ বিনিয়োগের প্রতিবন্ধকতা দূর করতে উদ্যোগগুলো ধীরগতিতে হলেও অগ্রগতি হয়েছে। নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করার উদ্যোগ এগুলোর অন্যতম।
মার্কিন প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, “বিদেশি বিনিয়োগ এখনও নানাবিধ স্থায়ী সমস্যার কারণে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। যেমন অপর্যাপ্ত অবকাঠামো, সীমিত অর্থায়নের সুযোগ, প্রশাসনিক বিলম্ব, বিদেশি প্রতিষ্ঠানের ওপর অসম কর ভার এবং দুর্নীতি।”
সরকারের বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশ তৈরির সংস্কারমূলক কার্যক্রম এখনও প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে।
প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, “ধীরগতির এবং দুর্নীতিগ্রস্ত বিচারব্যবস্থা, যা বর্তমানে সংস্কারের আওতায় রয়েছে। বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি প্রক্রিয়ার সীমাবদ্ধতা, সময়মতো চুক্তি বাস্তবায়ন ও ব্যবসায়িক বিরোধের ন্যায়সঙ্গত নিষ্পত্তিকে ব্যাহত করছে।”
প্রতিবেদনে মেধাস্বত্ব এবং শ্রম অধিকার সুরক্ষায় সরকারের কার্যক্রমকে ‘অকার্যকর’ হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। বলা হয়েছে, মেধাস্বত্ব সুরক্ষায় সরকার পর্যাপ্ত সম্পদ বরাদ্দ দেয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের কোম্পানিগুলো তৈরি পোশাক, ভোগ্যপণ্য, সিনেমা, ওষুধ এবং সফটওয়্যার খাতে মেধাস্বত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে।
অন্যদিকে, গত এক দশকে রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্পে অগ্নি ও ভবন নিরাপত্তা মানের উন্নয়নে বাংলাদেশ অগ্রগতি করলেও শ্রমিকদের সংগঠন গঠন ও যৌথ দর-কষাকষির অধিকার চর্চার ক্ষেত্রে এখনও গুরুত্বপূর্ণ আইনি বাধা বিদ্যমান।
দুর্নীতিকে বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির জন্য একটি গুরুতর বাধা হিসেবে চিহ্নিত করে স্টেট ডিপার্টমেন্ট বলেছে, জাতিসংঘের দুর্নীতিবিরোধী কনভেনশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশে ঘুষ ও দুর্নীতি মোকাবিলায় আইন থাকলেও তার প্রয়োগ ‘অনিয়মিত’।
দুর্নীতি প্রতিরোধে সরকারের প্রচেষ্টা থাকা সত্ত্বেও এটি এখনও সরকারি ক্রয়-বিক্রয়, কর ও শুল্ক সংগ্রহ এবং নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের মধ্যে ব্যাপকভাবে বিদ্যমান।
প্রতিবেদনে একটি অনুমানের কথা উল্লেখ করে বলা হয়, ব্যবসায়ীদের ‘গোপন লেনদেনের’ কারণে বাংলাদেশের জিডিপি দুই থেকে তিন শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়।
নিষিদ্ধ ঘোষিত আওয়ামী লীগ সরকারের দুর্নীতিবিরোধী প্রতিশ্রুতির কথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়, বিরোধী দলগুলো তখন দুর্নীতি দমন কমিশনকে (দুদক) রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে হয়রানির অভিযোগ করেছিল।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বৈদেশিক মুদ্রা পরিশোধে বিলম্ব এবং দেশের বাইরে অর্থ স্থানান্তরে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনের বাধ্যবাধকতার মতো বিষয়গুলো বৈদেশিক বিনিয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে।
শাসক দলের সঙ্গে সম্পৃক্ত কোম্পানিগুলোকে কিছু বড় ব্যাংকের নিয়মবহির্ভূত ঋণ প্রদানের ফলে দেশে বৈদেশিক মুদ্রার ঘাটতি তৈরি হয়েছিল এবং পরে সেই ঋণগুলো খেলাপি হয়ে পড়ে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশে কু-ঋণের (খেলাপি ঋণ) পরিমাণ বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৮ দশমিক ৫৭ বিলিয়ন ডলারে অর্থাৎ দুই হাজার ৮৫৭ কোটি ডলার।
ব্যাংকিং খাতকে আন্তর্জাতিক সেরা অনুশীলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করতে সরকার সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়েছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।