
রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়ালেও তার সুফল মিলছে না ব্যবসা-বাণিজ্যে।
রেকর্ড রেমিট্যান্স আর আমদানি নিয়ন্ত্রণের সুবাদে বাংলাদেশের বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ ঘুরে দাঁড়ালেও তার সুফল মিলছে না ব্যবসা-বাণিজ্যে। উচ্চ সুদহার, তারল্য সংকট আর রপ্তানিতে ধীরগতির কারণে বেসরকারি খাতের কার্যক্রমে স্থবিরতা কাটছে না বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ীরা।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী, চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে দেশের মোট বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ২৬ থেকে ২৭ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে, যা গত বছরের শেষদিকে ২০ বিলিয়ন ডলারের নিচে নেমে গিয়েছিল।
তবে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) হিসাব পদ্ধতি বিপিএম-৬ অনুযায়ী, ব্যবহারযোগ্য রিজার্ভের পরিমাণ ২১ থেকে ২২ বিলিয়ন ডলারের কিছু বেশি।
মূলত প্রবাসী আয়ের জোয়ার, কঠোর আমদানি নিয়ন্ত্রণ এবং মুদ্রানীতিতে নেওয়া নানা পদক্ষেপ রিজার্ভ বাড়াতে সহায়তা করেছে। চলতি বছরের মার্চে রেমিট্যান্স ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার পাঠিয়েছেন, যা এ যাবতকালের সর্বোচ্চ। হুন্ডি প্রতিরোধে কঠোর অবস্থান এবং প্রবাসীদের জন্য প্রণোদনাও এতে ভূমিকা রেখেছে। এছাড়া, বাজারে ডলারের সরবরাহ বাড়াতে বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো থেকে নিয়মিত ডলার কিনছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
তবে রিজার্ভের এই ইতিবাচক ধারার সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না দেশের শিল্প ও বাণিজ্য খাত। ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদহার, ডলার সংকট পুরোপুরি না কাটা এবং রপ্তানিতে স্থবিরতা বিনিয়োগ ও উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
এ বিষয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি তাসকীন আহমেদ দেশকাল নিউজ ডটকমকে বলেন, “সরকার অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা আনার চেষ্টা করলেও ব্যাংক খাতে অস্থিরতা রয়ে গেছে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ অনেক বেশি, যা আস্থা ফেরাতে বাধা দিচ্ছে। সরকার ও ব্যবসায়ী মহলের মধ্যে এক ধরনের আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে।”
রপ্তানি আয়ের প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা বলছেন, প্রধান বাজার ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রে চাহিদা এখনও দুর্বল। মূল্যস্ফীতির কারণে পশ্চিমা ক্রেতারা কেনাকাটা কমিয়ে দেওয়ায় নতুন ক্রয়াদেশের পরিমাণ কমে গেছে।
অন্যদিকে, রিজার্ভ ধরে রাখতে আমদানি নিয়ন্ত্রণে কড়াকড়ি করায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিল্প উৎপাদন। অনেক কারখানা সময়মতো কাঁচামাল ও যন্ত্রপাতি আনতে না পারায় উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে, যা তাদের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় পিছিয়ে দিচ্ছে।
এর সঙ্গে যোগ হয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, যা সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে। এতে অভ্যন্তরীণ বাজারেও চাহিদায় ভাটা পড়েছে। আবার টাকার বিপরীতে ডলারের বিনিময় হারের অস্থিতিশীলতা ব্যবসায়িক পরিকল্পনাকে আরও অনিশ্চিত করে তুলেছে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, রিজার্ভের এই পুনরুদ্ধার অর্থনীতির বাহ্যিক খাতের স্থিতিশীলতার জন্য একটি ভালো লক্ষণ। তবে এটি সামগ্রিক অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর প্রতিফলন নয়। টেকসই প্রবৃদ্ধির জন্য ঋণের সুদহার যৌক্তিক পর্যায়ে আনা, শিল্প খাতে নীতি সহায়তা বাড়ানো এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফিরিয়ে আনার কোনো বিকল্প নেই।