
রেমিট্যান্স সংগ্রহে তৃতীয় স্থানে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।
প্রবাসী আয় বা রেমিট্যান্সের নির্ভরযোগ্য গন্তব্যে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। অন্যান্য ব্যাংকের তুলনায় বেশ ‘এগিয়ে’ রয়েছে এটি। সম্প্রতি প্রকাশিত বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে, রেমিট্যান্স সংগ্রহে তৃতীয় স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক।
চলতি বছরের প্রথম আট মাসে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে প্রবাসী আয় এসেছে ১৯৭ দশমিক ৬২ কোটি মার্কিন ডলার। প্রতি ডলার ১২২ টাকা ধরে এর পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় ২৪ হাজার ১০৯ কোটি ৬৪ লাখ টাকা। যা দেশের মোট প্রবাসী আয়ের ৯ শতাংশেরও বেশি।
ব্যাংক সংশ্লিষ্টরা জানান, আকর্ষণীয় ডলার বিনিময় হার ও দ্রুত সেবার কারণে প্রবাসীরা এখন কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমে অর্থ পাঠাতে আগ্রহী হচ্ছেন। এতে হুন্ডির ওপর নির্ভরশীলতা কমছে উল্লেখযোগ্যভাবে।
কৃষি ব্যাংকের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা সাম্প্রতিক দেশকালকে জানান, গত নয় মাসে ব্যাংকের রেমিট্যান্স প্রবাহে আরও উন্নতি হয়েছে। তথ্য অনুযায়ী সেপ্টেম্বরের ২৭ তারিখ পর্যন্ত ব্যাংকটি রেমিট্যান্স সংগ্রহে দ্বিতীয় স্থানে ছিল।
যদিও এ সংক্রান্ত সর্বশেষ পরিসংখ্যান এখনও বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকাশ করেনি।
চলতি বছরের জানুয়ারিতে কৃষি ব্যাংক প্রবাসী আয়ে সংগ্রহ করেছিল ১১ দশমিক ৬০ কোটি ডলার, যা আগস্টে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩০ দশমিক ১৯ কোটি ডলারে। বর্তমানে ইসলামী ব্যাংক ও অগ্রণী ব্যাংক রেমিট্যান্স সংগ্রহে কৃষি ব্যাংকের চেয়ে এগিয়ে আছে। তবে মাত্র দুই বছরের ব্যবধানে কৃষি ব্যাংক এই খাতে ১২ ধাপ উন্নতি করেছে।
বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাহিদ হোসেন সাম্প্রতিক দেশকালকে বলেন, “কৃষি ঋণভিত্তিক ব্যাংক হয়েও আমরা এখন রেমিট্যান্স সংগ্রহে নেতৃত্ব দিচ্ছি। ২০১৮ সাল থেকে পরিকল্পিতভাবে আমরা এই খাতে কাজ শুরু করি, যার ফলাফল এখন দৃশ্যমান।”
তিনি বলেন, “২০১৮ সালে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন বড় প্রবাসী আয় সংগ্রহকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অংশীদারিত্ব গড়ে তুলি। শাখা ব্যবস্থাপক ও কর্মকর্তারাও রেমিট্যান্স সংগ্রহে বিশেষ উদ্যোগ নেন। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় কৃষি ব্যাংক আজ শীর্ষ পাঁচ ব্যাংকের একটিতে পরিণত হয়েছে।”
কৃষি ব্যাংকের কর্মকর্তারা রেমিট্যান্সের প্রবাহের কারণ জানিয়ে বলেন, “দেশের প্রত্যন্ত গ্রামীণ অঞ্চলেও তাদের শাখা রয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রবাসী বাংলাদেশিদের কাছেও কৃষি ব্যাংক একটি পরিচিত নাম। ফলে অনেকেই এখন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে ব্যাংকটির মাধ্যমে অর্থ পাঠাচ্ছেন।”
এদিকে ২০২৪ সালে রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্টস রিসার্চ ইউনিটের (আরএমএমআরইউ) এক গবেষণায় বলা হয়, দেশের মোট রেমিট্যান্সের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ এখনও হুন্ডির মাধ্যমে আসে।
পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)-এর তথ্য অনুযায়ী, বিভিন্ন মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)-এর অন্তত পাঁচ হাজার এজেন্ট হুন্ডি লেনদেনে জড়িত। তাদের কারণে প্রতিবছর বাংলাদেশ ৭ থেকে ৮ বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা হারায়।
বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ও বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দেশকাল নিউজকে বলেন, “কৃষি ও কৃষকের উন্নয়নে কৃষি ব্যাংকের অবদান অনস্বীকার্য। পাশাপাশি রেমিট্যান্স সংগ্রহেও তারা ধারাবাহিকভাবে ভালো করছে। এ উদ্যোগ যদি তারা অব্যাহত রাখতে পারে, তাহলে এটি ব্যাংক ও দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত ইতিবাচক হবে।”
তিনি বলেন, “কয়েক বছর আগেও প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেলের বাইরে হুন্ডির মাধ্যমে টাকা পাঠাতেন। কিন্তু এখন ব্যাংকগুলো ভালো ডলার রেট দেওয়ায় প্রবাসীরা ব্যাংকিং চ্যানেল ব্যবহার করছেন। এর একটি বড় অংশ কৃষি ব্যাংকের মাধ্যমেও আসছে।”
কৃষি ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০০১ সাল থেকেই ব্যাংকটি রেমিট্যান্স সেবা প্রদান করছে। প্রথমে আন্তর্জাতিক বিভাগ, পরে আন্তর্জাতিক বিভাগ (রেমিট্যান্স) এবং বর্তমানে বিদেশি রেমিট্যান্স ব্যবস্থাপনা বিভাগ এই কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
২০১৪ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কৃষি ব্যাংক ওয়েবভিত্তিক সফটওয়্যার ব্যবহার করে অনলাইনে বিদেশি রেমিট্যান্স সেবা চালু করে। বর্তমানে দেশের এক হাজার ৩৮টি শাখা থেকে পাঠানো রেমিট্যান্স তাৎক্ষণিকভাবে প্রধান কার্যালয়ে পৌঁছায়।
অন্য ব্যাংকের গ্রাহকদের জন্য পাঠানো রেমিট্যান্স ইএফটিএন এর মাধ্যমে একই দিনে সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে দেওয়া হয়।