Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

স্বর্ণের দরপতন, বিটকয়েনের দাম কি আরও বাড়বে?

Icon

অর্থনীতি ডেস্ক

প্রকাশ: ০১ নভেম্বর ২০২৫, ১৭:৩৩

স্বর্ণের দরপতন, বিটকয়েনের দাম কি আরও বাড়বে?

স্বর্ণের দাম কমলে বিটকয়েনের দর বাড়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

একটা পুরোনো প্রবাদ আছে একজনের সর্বনাশ, অন্যের পৌষ মাস। বিনিয়োগের বাজারে যেন ঠিক সেই চিত্রই ফুটে উঠছে। একদিকে যখন স্বর্ণের দামের পতনে বিনিয়োগকারীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ, অন্যদিকে ক্রিপ্টো দুনিয়ায় বইছে এক চাপা উত্তেজনা। বাণিজ্য যুদ্ধের দুই মহারথীর এই বিপরীতমুখী যাত্রাপথ এক নতুন প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। আর তা হলো, স্বর্ণ কি জৌলুস হারাচ্ছে, আর সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে কি এগিয়ে আসছে বিটকয়েন? এই প্রশ্নেরই উত্তর নিয়ে সম্প্রতি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে ইয়াহু ফাইনান্স। 

এই সপ্তাহের বাজারচিত্র যেন প্রশ্নটিকেই আরও জোরালো করেছে। মাত্র ছয় দিনের ব্যবধানে নিরাপদ বিনিয়োগের প্রতীক স্বর্ণের দাম সর্বোচ্চ শিখর থেকে প্রায় ১০ শতাংশ কমে মুখ থুবড়ে পড়েছে। দীর্ঘ সময় ধরে ঊর্ধ্বগতির পর এই তীব্র পতন বিনিয়োগকারীদের মধ্যে রীতিমতো আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ঠিক এর বিপরীত মেরুতে অবস্থান করছে ডিজিটাল মুদ্রা বিটকয়েন।

ক্রিপ্টোকারেন্সি ডেটা অ্যাগ্রিগেটর এবং মার্কেট ট্র্যাকিং প্ল্যাটফর্ম কয়েনগেকোর তথ্য অনুযায়ী, বাজারের এই টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্যেও সপ্তাহজুড়ে বিটকয়েন প্রায় ২ শতাংশ লাভে থেকে নিজের শক্তি জাহির করেছে।

দুই সম্পদের পারফরম্যান্সের এই বৈপরীত্য নিয়ে মুখ খুলেছেন বিশেষজ্ঞরা। হ্যাশকি গ্রুপের সিনিয়র রিসার্চার টিম সান ‘ডিক্রিপ্ট’কে বলেন, “স্বর্ণের সাম্প্রতিক পতনের পেছনে ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও বাণিজ্যিক দ্বন্দ্বের কিছুটা প্রশমন এবং বিনিয়োগকারীদের মুনাফা তুলে নেওয়ার প্রবণতা কাজ করেছে।”

স্বর্ণের এই হোঁচট খাওয়া দেখে অনেকেই মনে করছেন, এবার হয়তো বিটকয়েনের ঘুরে দাঁড়ানোর পালা।

ক্রিপ্টো ফান্ড ম্যানেজার মার্কল ট্রি ক্যাপিটাল-এর প্রধান বিনিয়োগ কর্মকর্তা রায়ান ম্যাকমিলিন এই সম্ভাবনাকে সমর্থন করে বলেন, “স্বর্ণের গতি থেমে যাওয়া বিটকয়েনের জন্য একধরনের ‘ক্যাচ-আপ ট্রেড’-এর সুযোগ তৈরি করতে পারে।”

অর্থাৎ, বুলিয়নের বাজার থেকে সরে আসা পুঁজির একটি অংশ বিটকয়েনের দিকে ঝুঁকতে পারে। তবে তিনি এও মনে করিয়ে দেন, “স্বর্ণের সাম্প্রতিক দৌড় বিবেচনায় এর দ্রুত পুনরুদ্ধারের আশা করা বাস্তবসম্মত নয়।”

ঐতিহাসিক তথ্যও একটি মিশ্র ইঙ্গিত দিচ্ছে। গত ৪৫ বছরের পরিসংখ্যান বলছে, এমন ১০টি ঘটনা ঘটেছে যেখানে ছয় দিনের মধ্যে স্বর্ণের দাম ১০ শতাংশ কমেছে। প্রতিবারই হারানো মূল্য ফিরে পেতে প্রায় দুই মাস সময় নিয়েছে মূল্যবান ধাতুটি। পরে গড়ে ৮.৩৯ শতাংশ লাভ করেছে স্বর্ণ।

তবে সোজা কথায় পুঁজি স্থানান্তর হবে, এমনটা মানতে নারাজ টিম সান। তিনি মনে করেন, দুই সম্পদের চাহিদা প্রকৃতিগতভাবে ভিন্ন।

টিম সান বলেন, “স্বর্ণের চাহিদা মূলত সার্বভৌম সম্পদ তহবিল, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও রক্ষণশীল সম্পদ ব্যবস্থাপকদের কাছ থেকে আসে। বিপরীতে বিটকয়েনের প্রবাহ এখনো প্রধানত ইটিএফ ও ঝুঁকিপ্রবণ বিনিয়োগকারীদের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।”

বর্তমান পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, দুই বিশেষজ্ঞই স্বল্পমেয়াদে বিটকয়েন নিয়ে আশাবাদী। ম্যাকমিলিনের মতে, বিটকয়েন বর্তমানে এমন এক পর্যায়ে প্রবেশ করছে যেখানে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগ ও তারল্য বৃদ্ধি এর পরবর্তী উত্থানকে ত্বরান্বিত করতে পারে।

অন্যদিকে টিম সান মনে করেন, বিশ্বব্যাপী বাজেট ঘাটতি বৃদ্ধি এবং ধারাবাহিক ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনাবলীর কারণে স্বর্ণের গতি হবে বিক্ষিপ্ত কিন্তু ঊর্ধ্বমুখী। বিটকয়েনের জন্যও তিনি ধীরে ধীরে ঊর্ধ্বমুখী গতিপথেরই পূর্বাভাস দিচ্ছেন।

আপাতত, বিনিয়োগ বিশ্ব এক রুদ্ধশ্বাস অধ্যায়ের সামনে দাঁড়িয়ে। বাজারের এই দ্বৈরথে শেষ হাসি কে হাসবে—হাজার বছরের ঐতিহ্য, নাকি ডিজিটাল যুগের নতুন বিপ্লব? উত্তর দেবে কেবল সময়। তবে এটুকু বলে রাখা ভালো, স্বর্ণের দাম কমলে বিটকয়েনের দর বাড়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫