Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

বিনিয়োগ সংস্কারে বড় অগ্রগতি, আসছে সমন্বিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম

Icon

জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১৪:১১

বিনিয়োগ সংস্কারে বড় অগ্রগতি, আসছে সমন্বিত ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম

পঞ্চম ইনভেস্টমেন্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির বৈঠক।

বাংলাদেশে বিনিয়োগ পরিবেশ সহজ ও উন্নত করার লক্ষ্যে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় এবং দপ্তরের নেওয়া উদ্যোগে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হয়েছে। পঞ্চম ইনভেস্টমেন্ট কোঅর্ডিনেশন কমিটির বৈঠকে এই অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হয়, যেখানে আমদানি নীতি, ডিজিটাল অবকাঠামো, বন্দর ও ব্যাংকিং খাতে একগুচ্ছ সংস্কারের কথা জানানো হয়েছে।

বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধান উপদেষ্টার আন্তর্জাতিক বিষয়ক বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী। তিনি বলেন, “আমরা এই বৈঠকে বাস্তবায়ন ও পারস্পরিক জবাবদিহিতার ওপর জোর দিচ্ছি। এটি প্রমাণ করে যে আমরা ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।”

তিনি আরও বলেন, “সামনে অনেক পথ বাকি, তবে আমরা স্পষ্ট উদ্দেশ্য, শৃঙ্খলা ও স্বচ্ছতা নিয়ে এগোচ্ছি।”

বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টার আইসিটি বিষয়ক বিশেষ সহকারী ফয়েজ আহমেদ তৈয়্যব, বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খানসহ বিভিন্ন সচিব ও বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিরা অংশ নেন।

‘ফ্রি অব চার্জ’ আমদানি নীতিতে আসছে পরিবর্তন

শতভাগ রপ্তানিমুখী কোম্পানির জন্য কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ‘ফ্রি অব চার্জ’ (এফওসি) আমদানির সুযোগ দিতে নীতিগতভাবে সম্মতি দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে আমদানি নীতি আদেশ সংশোধন করা হবে। এই সংস্কার বাস্তবায়িত হলে রপ্তানিমুখী শিল্পের ইনভেন্টরি খরচ কমে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়বে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিজিএমইএর মতে, এই নীতি নিঃশর্তভাবে বাস্তবায়িত হলে রপ্তানি আয়ে কয়েক বিলিয়ন ডলারের ইতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

ডিজিটাল অবকাঠামোতে বড় অগ্রগতি

বিনিয়োগকারীদের জন্য একক ডিজিটাল প্রবেশদ্বার হিসেবে ‘বাংলাদেশ বিজনেস পোর্টালে’র প্রথম ধাপ ২০২৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে চালু হয়েছে। এর দ্বিতীয় ধাপ একই বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে, যেখানে ‘বিজনেস স্টার্টার প্যাকেজ’ এবং ‘সিঙ্গেল সাইন অন’ ফিচার যুক্ত হবে। এর মাধ্যমে ২৯টি সরকারি সেবা এক জায়গা থেকে পাওয়া যাবে।

এই সিস্টেমটি পরবর্তীতে বাংলাদেশ সিঙ্গেল উইন্ডো (বিএসডব্লিউ), অ্যাসাইকুডা এবং কাস্টমস বন্ড ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের (সিবিএমএস) সঙ্গে যুক্ত হবে, যা বিভিন্ন সরকারি সংস্থার মধ্যে তথ্যের সমন্বয় ঘটাবে। এই পদক্ষেপ প্রক্রিয়া দ্রুত করা এবং স্বচ্ছতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের দীর্ঘদিনের দাবি পূরণ করবে।

বন্দর ও কাস্টমস আধুনিকায়ন

চট্টগ্রাম বন্দরে বড় ধরনের সংস্কার কার্যক্রম চলছে, যার মধ্যে লালদিয়া ইয়ার্ড ও তালতলা কনটেইনার ইয়ার্ড নির্মাণ প্রকল্প অন্যতম। ৬.২৫ একর আয়তনের তালতলা ইয়ার্ড শিগগিরই চালু হলে কনটেইনার জট কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বন্দরে আটকে থাকা প্রায় ৬,০০০ কনটেইনারের ইনভেন্টরি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে এবং ৪০৩টি কনটেইনার নিলামে তোলা হয়েছে। বিপজ্জনক পণ্যের সুষ্ঠু নিষ্পত্তির জন্য সাত সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ কমিটিও কাজ করছে।

পাশাপাশি, স্বয়ংক্রিয় ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা সফটওয়্যারের এপিআই ইনস্টলেশন পর্যায়ে রয়েছে, যা তথ্যভিত্তিক ঝুঁকি বিশ্লেষণের মাধ্যমে পণ্য পরীক্ষণ প্রক্রিয়ায় গতি আনবে। বন্দর কর্তৃপক্ষ এখন সরাসরি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছে, যা দ্রুত সমাধান নিশ্চিত করছে।

ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতে সংস্কার

বেসরকারি খাতের অনুরোধে বাংলাদেশ ব্যাংক বন্দর এলাকার শাখাগুলোতে রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্ট (আরটিজিএস) সেবা চালু করেছে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে ২৪ ঘণ্টা সেবা চালুর উদ্যোগও নেওয়া হচ্ছে।

রপ্তানি আমদানি লেনদেনের প্রতিটি ধাপের ফ্লোচার্ট তৈরি করে তা ডিজিটাল মাধ্যমে প্রকাশ করা হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা প্রক্রিয়াটি সহজে বুঝতে পারেন। এছাড়া আমদানির অগ্রিম অর্থপ্রদানের সীমা, এক্সপোর্ট রিটেনশন কোটা (ইআরকিউ) নীতির নমনীয়তা এবং টাকায় রাখা অ্যাকাউন্ট থেকে ডলার স্থানান্তর পদ্ধতি সহজ করার বিষয়ে নীতিগত পর্যালোচনা চলছে।

ব্যবসা নিবন্ধন ও লাইসেন্স সরলীকরণ

ঢাকা দক্ষিণ, ঢাকা উত্তর, চট্টগ্রাম ও সিলেট সিটি করপোরেশনে উদ্যোক্তাদের জন্য একক প্রবেশপথ চালু হয়েছে। পর্যায়ক্রমে এই প্ল্যাটফর্ম সারাদেশে সম্প্রসারণ করা হবে।

এছাড়া, উদ্যোক্তাদের সুবিধার জন্য ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের মেয়াদ এক বছর থেকে বাড়িয়ে পাঁচ বছর করা হয়েছে।

অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ

পিপিপি কাঠামো: বড় অবকাঠামো প্রকল্পে ঝুঁকি বণ্টন ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) মডেল বাস্তবায়নের জন্য খসড়া জাতীয় কৌশল তৈরি হয়েছে, যা চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায়।

বিনিয়োগ পাইপলাইন: বিনিয়োগ সংস্থাগুলো এখন প্রতি মাসে তাদের পাইপলাইন প্রকল্পের তথ্য বিডায় জমা দিচ্ছে। এর মাধ্যমে মোট বিনিয়োগ আগ্রহ, বাস্তবায়নের হার এবং দেশভিত্তিক বিনিয়োগ প্রবণতা বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হচ্ছে।

পরিবেশ ও টেকসই বিনিয়োগ: কার্বন ট্রেডিং এবং বিনিয়োগ সহায়তার সমন্বয়ের লক্ষ্যে বিডা, পরিবেশ অধিদপ্তর ও বন বিভাগ যৌথভাবে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরে একটি কর্মশালার আয়োজন করবে।

এসএমই সহায়তা: ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের (এসএমই) জন্য মার্কেটপ্লেস উন্নয়ন, ব্যাংকের মাধ্যমে সরাসরি বৈদেশিক অর্থ প্রাপ্তির ব্যবস্থা এবং কাঠামোগত সহায়তা জোরদার করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সার্বিকভাবে, এসব সংস্কারের মূল লক্ষ্য হলো ডিজিটালাইজেশন ও প্রক্রিয়ার সরলীকরণ।

সাম্প্রতিক মাসগুলোতে এনবিআরের ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডোর (এনএসডব্লিউ) মাধ্যমে ৬ লাখের বেশি পারমিট ইস্যু করা হয়েছে, যার অধিকাংশই ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সম্পন্ন হয়েছে।

এর ফলে আনুমানিক ১২ লাখ বার সরকারি অফিসে সরাসরি যাওয়ার প্রয়োজনীয়তা কমেছে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫