Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

গাজায় বেসামরিকদের হত্যা করা হতো সেনাদের মর্জিমতো

Icon

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২৫, ১১:১৫

গাজায় বেসামরিকদের হত্যা করা হতো সেনাদের মর্জিমতো

ইসরায়েলের কর্মকর্তাদের মর্জি অনুযায়ী গাজায় বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করা হতো, কোনো ধরনের নিয়ম-কানুন মানা হতো না এবং হত্যাযজ্ঞ চালানো সবার জন্য উন্মুক্ত ছিল। এক টিভি ডকুমেন্টারিতে সেনারা এসব কথা বলেছেন। ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেসের (আইডিএফ) ট্যাংক ইউনিটের এই কমান্ডার বলেন, সেনারা গাজায় কোনো বাধা ছাড়াই গুলি চালাতে পারেন। ‘ব্রেকিং র‌্যাঙ্কস : ইনসাইড ইসরায়েল’স ওয়ার’ নামের তথ্যচিত্রটি যুক্তরাজ্যের আইটিভিতে ১০ নভেম্বর প্রচারিত হয়। 

অনুষ্ঠানে কথা বলা আইডিএফ সেনাদের কেউ কেউ নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ করেন, অন্যরা প্রকাশ্যেই কথা বলেছেন। তবে সবার বক্তব্যেই বেসামরিক নাগরিকদের প্রতি যুদ্ধের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টিই ইঙ্গিত করে। যারা কথা বলেছেন, তারা গাজার বেসামরিক নাগরিকদের আইডিএফের নিয়মিত মানব ঢাল হিসেবে ব্যবহারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। এসব বিষয়ে ইসরায়েল সরকারের বক্তব্যের বিরোধিতা করেছেন এই সেনারা। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েল সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটেরিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) স্থাপিত ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে খাবারের জন্য আসা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর ইসরায়েলি সেনাদের বিনা উসকানিতে গুলি চালানোর বিবরণ দিয়েছেন।

আইডিএফের সাঁজোয়া বাহিনীর একজন কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন ইয়োটাম ভিল্ক বলেন, “সেনাবাহিনীর মৌলিক প্রশিক্ষণের সময় আমরা সবাই-‘অজুহাত, উদ্দেশ্য ও সামর্থ্য’ বলে কোরাস করতাম।” আইডিএফের সরকারি প্রশিক্ষণ নির্দেশিকা অনুসারে, একজন সৈনিক কেবল তখনই গুলি চালাতে পারেন যখন ‘লক্ষ্যবস্তুর কোনো অজুহাত থাকে, উদ্দেশ্য দেখায় এবং ক্ষতি করার সামর্থ্য থাকে।’ ভিল্ক বলেন, গাজায় ‘অজুহাত, উদ্দেশ্য ও সামর্থ্য’ বলে কিছু নেই। সেখানে কোনো সৈনিক কখনো এর উল্লেখও করেন না। 

এলি নামের আরেক সেনা বলেন, গাজায় জীবন ও মৃত্যু কোনো পদ্ধতি বা গুলি চালানোর নিয়ম দ্বারা নির্ধারিত হয় না। এটি যুদ্ধক্ষেত্রের কমান্ডারের সিদ্ধান্তে নির্ধারিত হয়। এমন পরিস্থিতিতে কে শত্রু বা সন্ত্রাসী তা নির্ধারিত হয় কমান্ডারের ইচ্ছায়। তিনি আরো বলেন, ‘যদি তারা দ্রুত হাঁটে, তারা সন্দেহজনক। যদি তারা আস্তে হাঁটে, সেটিও সন্দেহজনক-যেন তারা কোনো ষড়যন্ত্র করছে।’  

এলি একটি ঘটনার বিবরণ দিয়ে বলেন, বেসামরিক নাগরিকদের জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে চিহ্নিত একটি ভবন ট্যাংক দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন একজন সিনিয়র কর্মকর্তা। কারণ এক ব্যক্তি ছাদে কাপড় শুকাতে দিয়ে দাঁড়িয়েছিল এবং ওই কর্মকর্তা তাকে পর্যবেক্ষক (স্পটার) বলে চিহ্নিত করেন। কিন্তু ওই ব্যক্তি স্পটার ছিল না; সে তার কাপড় শুকাতে দিচ্ছিল। স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছিল যে, সে কাপড় শুকাতে দিচ্ছে। এরপর ওই ভবনে ট্যাংক থেকে শেল ছোড়া হয়। এতে ওই ভবন অর্ধেক ধসে পড়ে এবং বহু হতাহতের ঘটনা ঘটে।

আইডিএফের আগস্ট মাসের গোয়েন্দা তথ্যের বিশ্লেষণে সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান দেখেছে, ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তাদের হিসাব অনুসারে গাজায় নিহতদের ৮৩ শতাংশই বেসামরিক নাগরিক। যদিও আইডিএফ এই বিশ্লেষণের বিরোধিতা করেছে। যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে ৬৯ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে এবং এক মাস আগে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতি সত্ত্বেও প্রতিদিনই ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনি মারা যাচ্ছে।

এই তথ্যচিত্রে কয়েকজন ইসরায়েলি সেনা বলেছেন, হামাসের ৭ অক্টোবরের হামলার পর তারা রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা এবং ধর্মীয় নেতাদের তাগিদে প্রভাবিত হয়েছিলেন যে, প্রত্যেক ফিলিস্তিনিই বৈধ লক্ষ্যবস্তু। ড্যানিয়েল নামে এক ট্যাংক ইউনিট কমান্ডার তথ্যচিত্রটিতে বলেছেন, ‘গাজায় কোনো নির্দোষ ব্যক্তি নেই’ বলে ঘোষণা করা বাগাড়ম্বর সেনাবাহিনীর মধ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। আর আপনি যদি সব সময় এটি শুনতে পান, তখন এটি বিশ্বাস করতে শুরু করবেন।

ব্রেকিং র‌্যাঙ্কসের নির্মাতারা স্যাম নামে একজন ঠিকাদারের সঙ্গে কথা বলেছেন, যিনি জিএইচএফ পরিচালিত খাদ্য বিতরণ কেন্দ্রে কাজ করতেন, তিনি আইডিএফকে নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের হত্যা করতে দেখেছেন।

গাজায় যুদ্ধক্ষেত্রের অন্তত কয়েকজন সেনা তাদের মানসিক সমস্যার কথা তথ্যচিত্রে তুলে ধরেছেন। ড্যানিয়েল বলেন, ‘একজন ইসরায়েলি ও একজন আইডিএফ কর্মকর্তা হিসেবে তারা আমার গর্ব, আমার আত্মাভিমানকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এখন শুধু লজ্জাই অবশিষ্ট রয়েছে।’ 

সূত্র : গার্ডিয়ান

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫