ডলার শক্তিশালী হলে অন্যান্য মুদ্রার গ্রাহকদের জন্য সোনা কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, ফলে চাহিদা কমে যায়।
যারা সোনার বাজারের দিকে চোখ রাখেন, তাদের জন্য খবরটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ভাবছেন সোনা কিনবেন বা বিক্রি করবেন? তাহলে জেনে নিন, বিশ্ববাজারে টানা তৃতীয় দিনের মতো কমল এই মূল্যবান হলুদ ধাতুর দাম। সোমবারও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। কিন্তু কেন এই দরপতন? এই দরপতনের পেছনের কারণগুলো নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনবিসি।
এর পেছনে মূল কারণ হিসেবে কাজ করছে দুটি বিষয়। প্রথমত, মার্কিন ডলার গত ছয় মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে, যা সোনার ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করছে। দ্বিতীয়ত, বিনিয়োগকারীরা আমেরিকার সুদের হার নিয়ে ফেডারেল রিজার্ভের ভবিষ্যৎ পদক্ষেপ কী হবে, সে সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ইঙ্গিতের জন্য অপেক্ষা করছেন।
সোমবার আন্তর্জাতিক খোলা বাজারে (স্পট মার্কেট) সোনার দাম ০.৪ শতাংশ কমে প্রতি আউন্স ৪,০৫১.৩১ ডলারে নেমে আসে।
তবে ডিসেম্বরে সরবরাহের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্বর্ণের চুক্তির (গোল্ড ফিউচার্স) দাম ০.৮ শতাংশ বেড়ে প্রতি আউন্স ৪,০৪৭.৭০ ডলারে পৌঁছেছে।
রিলায়েন্স সিকিউরিটিজের জ্যেষ্ঠ গবেষণা বিশ্লেষক জিগার ত্রিবেদী বলেন, “ডলার সূচক এখন ছয় মাসের সর্বোচ্চ স্তরের কাছাকাছি, এটি ১০০-এর ওপরে অবস্থান করছে। যদি ডলারের এই দরই লেনদেন চালিয়ে যায়, তবে সোনার দামের ওপর আরও চাপ বাড়বে।”
মূলত, ডলার শক্তিশালী হলে অন্যান্য মুদ্রার গ্রাহকদের জন্য সোনা কেনা আরও ব্যয়বহুল হয়ে পড়ে, ফলে চাহিদা কমে যায়।
এদিকে, সুদের হার কমার সম্ভাবনাও ক্ষীণ হয়ে আসছে। সিএমই ফেডওয়াচ টুলের তথ্য অনুযায়ী, আগামী মাসে ফেডারেল রিজার্ভের সুদহার কমানোর সম্ভাবনা ৭৪ শতাংশ থেকে কমে ৬৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। যদিও গত শুক্রবার নিউইয়র্ক ফেডের প্রেসিডেন্ট জন উইলিয়ামসের কিছুটা শিথিল মন্তব্যের পর এই সম্ভাবনা ৪০ শতাংশ থেকে বেড়ে ৭৪ শতাংশে পৌঁছেছিল।
তবে ফেডারেল রিজার্ভের অন্য কর্মকর্তারা এখনো কঠোর অবস্থানেই রয়েছেন। ডালাস ফেডারেল রিজার্ভের প্রেসিডেন্ট লরি লোগান সুদের হার অপরিবর্তিত রাখার পক্ষে মত দিয়েছেন।
শিকাগো ও ক্লিভল্যান্ড ফেডের প্রেসিডেন্টরাও সতর্ক করে বলেছেন, এখনই সুদের হার কমানো হলে অর্থনীতিতে নতুন ঝুঁকি তৈরি হতে পারে। প্রসঙ্গত, সোনা এমন একটি সম্পদ যা থেকে কোনো সুদ আয় হয় না, তাই সুদের হার কম থাকলে সাধারণত সোনার বাজার চাঙ্গা থাকে।
ভবিষ্যৎ কেমন হতে পারে? জিগার ত্রিবেদীর মতে, “আগামী তিন থেকে পাঁচ সপ্তাহে সোনার বাজার স্থিতিশীল থেকে নিম্নমুখী ধারায় থাকতে পারে, কারণ বর্তমানে বড় কোনো ভূ-রাজনৈতিক উত্তেজনা নেই যা তেজি বিনিয়োগকারীদের উৎসাহিত করতে পারে।” জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতির জন্য একটি নতুন পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।
সোনার দাম কমলেও অন্যান্য মূল্যবান ধাতুর বাজারে মিশ্র প্রবণতা দেখা গেছে। আন্তর্জাতিক খোলা বাজারে রুপার দাম অপরিবর্তিত থেকে প্রতি আউন্স ৪৯.৯৮ ডলারে রয়েছে। অন্যদিকে, প্লাটিনামের দাম ১.৫ শতাংশ বেড়ে ১,৫৩৩.২০ ডলার এবং প্যালাডিয়ামের দাম ১.৩ শতাংশ বেড়ে ১,৩৯২.২১ ডলারে দাঁড়িয়েছে।
