
করোনাভাইরাসের কারণে পৃথিবী জুড়ে অর্থনৈতিক সংকট তৈরি হয়েছে। এই সংকটের মুখে পড়েছে বাংলাদেশও। এই সংকট কাটিয়ে ওঠতে আরো বছর দুএক লাগতে পারে বলে মনে করছে বিশ্লেষকরা। আগামী দুবছর ব্যবসায়ীদের আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ কম হবে এবং মুনাফা কম হবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা। সামনের দিনগুলোতে পণ্যেও চাহিদা কমে যেতে পারে।
তারা বলছেন, করোনাভাইরাসের কারণে জরুরি ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া অন্য খাতে উৎপাদন কমে গেছে। কমে গেছে রপ্তানিও। তবে তারা এও বলছেন, স্বাস্থ্যখাতে বিনিয়োগ আসতে পারে এবং নতুন কিছু সুযোগ তৈর করে বিনিয়োগ বাড়ানোর চেষ্টা করা যেতে পারে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য মতে, সর্বশেষ ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে বিনিয়োগ হয়েছে ৮ লাখ কোটি টাকার কিছু বেশি (চলতি মূল্যে), যা আগের বছরের চেয়ে প্রায় ১৪ শতাংশ বাড়তি। এর মধ্যে সরকারি বিনিয়োগ মোটামুটি ২ লাখ কোটি ও বেসরকারি বিনিয়োগ ৬ লাখ কোটি টাকা।
জাতিসংঘের বাণিজ্য ও উন্নয়ন সংস্থার (আঙ্কটাড) ‘ইনভেস্টমেন্ট ট্রেন্ড মনিটর’ শীর্ষক এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৯ সালে বাংলাদেশে মোট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে ৩৪০ কোটি মার্কিন ডলার, যা আগের বছরের চেয়ে ৬ শতাংশের মতো কম। বিদেশি বিনিয়োগ নিয়ে গত মার্চে প্রকাশিত আঙ্কটাডের আরেকটি পর্যবেক্ষণে বলা হয়, বিশ্বব্যাপী বিদেশি বিনিয়োগ ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ কমার আশঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বিনিয়োগের জন্য একটা পরিবেশ লাগে। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেখানে আগেই নানা সমস্যা ছিলো। এখন যে পরিস্থিতি, তাতে আগামী এক বছর বা তার কিছু বেশি সময় নতুন বিনিয়োগ খুব বেশি হবে বলে আমার মনে হয় না। বিদেশি বিনিয়োগ আসবে, যদি আমরা পরিবর্তিত বৈশ্বিক ব্যবস্থায় বড় ভূমিকা রাখতে পারি। বিশেষ করে, চীনা বিনিয়োগ আমরা আকৃষ্ট করতে পারলে বিদেশি বিনিয়োগ বাড়বে। এর সঙ্গে জাপানি ও অন্যান্য দেশের বিনিয়োগ রয়েছে। সবকিছু নির্ভর করছে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আমরা কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি, তার ওপর। আমাদের মনে রাখতে হবে, এটা আলাদা কোনো বিষয় নয়, এর সঙ্গে অর্থনীতি ও ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ জড়িত। স্বাস্থ্য ঝুঁকি না কমাতে পারলে নিজেদের লোকই পাব না, বিদেশিরা কেন আসবে?
সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, সামনের দিনগুলোতে অনেকেই চাকুরি হারানোর ঝুঁকিতে রয়েছে। অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এখন সবাই সঞ্চয় ধরে রাখতে চাইবে। জরুরি ছাড়া অন্য ক্ষেত্রে ব্যয় কমিয়ে দেবে। রপ্তানি খাতেও একই পরিস্থিতি থাকবে বলে আমার ধারণা।
ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (ডিসিসিআই) সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, এই সংকটকালীন মুহূর্তে এখন যে পরিস্থিতি তাতে সার্বিকভাবে বিনিয়োগ বৃদ্ধির আশা করা কঠিন। তবে আমাদেরকেই বিনিয়োগ বাড়াতে নতুন কিছু সুযোগ তৈরি করতে হবে। সেখানে বিনিয়োগ হবে। যেমন স্বাস্থ্য খাত। এ খাতে একটা মৌলিক পরিবর্তন আসতে পারে বলে আমি মনে করি। বিদেশে চিকিৎসা নিতে অনেক অর্থ ব্যয় করে থাকি। এ ব্যবসাটা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারলে খুব ভালো হবে। সার্বিকভাবে আমার মনে হয় ‘নিউ নরমাল’ (নতুন স্বাভাবিক) পরিস্থিতি না এলে বিনিয়োগের ধারা স্বাভাবিক হবে না। এ ক্ষেত্রে নতুন সুযোগ যেগুলো আসবে, তা আমাদের কাজে লাগাতে হবে।
বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) করা একটি জরিপে অংশ নেয়া ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের ৪৩ শতাংশ বলেছে, করোনাকালে তাদের উৎপাদন উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে।