
বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশন (এফবিসিসিআই) আয়োজিত এক আলোচনায় সরকারের নীতি-নির্ধারকরা বলেছেন, করোনাভাইরাস মহামারি মোকাবিলায় স্বাস্থ্যখাতের উন্নয়ন ও অর্থনীতি সচল রাখার নানা উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
এর পাশাপাশি করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটাকে কার্যকর করতে সরকার ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।
গতকাল রবিবার (৭ জুন) এফবিসিসিআই সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়ন, বিনিয়োগ আকর্ষণ ও করোনার প্রেক্ষিতে অর্থনীতি পুনঃরুদ্ধারে উপায় শীর্ষক ভার্চুয়াল আলোচনা সভার আয়োজন করে। রাজধানীর মতিঝিল ফেডারেশন ভবন থেকে ওয়েবিনার পরিচালনা করেন সংগঠনের সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।
আলোচনায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন, কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন, বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি ও জাতীয় সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম, বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) নির্বাহী চেয়ারম্যান পবন চৌধুরী, ঢাকায় জাতিসংঘের মিশন প্রধান মিয়া সেপ্পো, বিশ্বব্যাংকের আবাসিক প্রধান মার্সি টেম্বনর, এডিবির আবাসিক প্রধান মনমোহন প্রকাশ, এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি এ কে আজাদ ও আব্দুল মাতলুব আহমাদ, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহউদ্দিন আহমেদ, পলিসি এক্সচেঞ্জের চেয়ারম্যান ড. মাশরুর রিয়াজ, সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন, এফবিসিসিআই পরিচালক মুনির হাসানসহ বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা আলোচনায় অংশ নেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এম এ মোমেন বলেন, করোনা মহামারির পরিস্থিতিতে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকর্ষণের যে সুযোগ তৈরি হয়েছে, সেটাকে আমরা কার্যকরভাবে কাজে লাগাতে চাই। এর জন্য সরকার কাজ করছে, তবে এর পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোক্তাদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আমি আশা করি নতুন যেসব সুযোগ তৈরি হচ্ছে, সেগুলোকে আমরা সমন্বিতভাবে কাজে লাগাতে পারব।
তিনি বলেন, সরকার ঘোষিত বিভিন্ন প্রণোদনা প্যাকেজগুলো যদি কার্যকর হয়, তাহলে করোনা মহামারির ক্ষতি আমরা শিগগিরই কাটিয়ে উঠতে পারব। এছাড়া দেশের কৃষি খাতের মতো গুরুত্বপূর্র্ণ খাতগুলোকে কাজে লাগাতে হবে।
অনুষ্ঠানে কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, করোনা মহামারির মধ্যে অর্থনীতি যেন সচল থাকে এজন্য কৃষিখাতকে এবার বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। কৃষিখাতে অতিরিক্ত কর্মসংস্থান তৈরির উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, যাতে করে কর্মহীন মানুষের বড় একটি অংশের সেখানে কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়।
শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন বলেন, অর্থনীতি সচল রাখার স্বার্থে শিল্প মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সকল শিল্প-কারখানাসহ অন্যান্য দফতর চালু রাখা হয়েছে। এর পাশাপাশি সরকার কর্মহীন মানুষের জন্য সামাজিক সুরক্ষা কর্মর্সূচি সম্প্রসারণ করেছে। বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যাক্তিগত যোগাযোগকে কাজে লাগাতে পারে।
বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, কখনো কখনো বড় সমস্যা নতুন সুযোগ তৈরি করে দেয়। আমি আশা করি তেমনিভাবে করোনা মহামারি আমাদের সামনে বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ তৈরি করেছে। চীন থেকে যেসব বিনিয়োগ স্থানান্তর হবে, সেটাকে আমাদের দেশে কিভাবে আনা যায়, তা নিয়ে সরকার কাজ শুরু করেছে।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি খুব শিগগিরই সব সংকট কাটিয়ে দেশকে আবার উন্নয়নের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবো।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্পও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার সারাদেশে সরকারি হাসপাতালগুলোতে আধুনিক সরঞ্জমাদি ও চিকিৎসকসহ জনবল বাড়ানো হচ্ছে। ইতোমধ্যে ৫ হাজার নতুন চিকিৎসক ও ৩ হাজার টেকনিশিয়ান নিয়োগ দেয়া হয়েছে। পাশাপাশি দেশব্যাপী বিস্তৃত ইন্টারনেট সেবাকে কাজে লাগিয়ে টেলি মেডিসিন সেবা চালু করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, করোনা পরিস্থিতির কারণে সারাবিশ্বে পিপিই রফতানির সুযোগ তৈরি হয়েছে। আমাদের পোশাক ব্যবসায়ীরাদের এ সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। জাপানসহ আরো কয়েকটি দেশ চীন থেকে বিনিয়োগ স্থানান্তরকে দেশে নিয়ে আসার জন্য কর ব্যবস্থা আরো সহজীকরণের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
এফবিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নে শক্তিশালী তদারকি প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর সমন্বয়ে একটি উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গঠনের আহ্বান জানান তিনি।
আলোচনায় অংশ নিয়ে ব্যবসায়ী নেতারা বলেন, বড় প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণ সুবিধায় এগিয়ে থাকলেও ক্ষুদ্র ও মাঝারি প্রতিষ্ঠানগুলো বঞ্চিত হচ্ছে। ব্যাংকের নানা ধরণের নিয়ম ও নীতিমালার কারণে তারা এই সুবিধার বাইরে রয়ে যাচ্ছে। প্রণোদনার সুবিধায় তাদের কার্যকর অন্তর্ভূক্তকরণের উদ্যোগ নেয়ার আহ্বান জানান তারা। -বাসস