Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

সুইস ব্যাংকে বেড়েই চলেছে বাংলাদেশিদের টাকা

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ২৬ জুন ২০২০, ০৮:৫০

সুইস ব্যাংকে বেড়েই চলেছে বাংলাদেশিদের টাকা

সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ হিসেব অনুযায়ী সে দেশের ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকা। বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। কালো টাকার বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান নেয়ায় ভারত-পাকিস্তানসহ প্রতিবেশী দেশগুলো থেকে সুইস ব্যাংকে আমানত অনেক কমলেও বাংলাদেশের টাকা সে হারে কমেনি।

বৃহস্পতিবার (২৫ জুন) সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করা হয়। সে প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দেশ থেকে অর্থপাচার রোধে নানা উদ্যোগ নেয়া হলেও পাচার কমছে না। নানাভাবে দেশ থেকে অর্থপাচার হয়ে যাচ্ছে। কেউ কেউ পাচারের অর্থে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে গড়ে তুলছেন দৃষ্টিনন্দন বাড়ি, রিসোর্ট। আবার কেউ কেউ জমা রাখছেন সুইস ব্যাংকে।

কিন্তু পাঁচ বছরের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ভারতের নাগরিকদের গচ্ছিত সম্পদের পরিমাণ অর্ধেকে নেমেছে ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। আর পাকিস্তানের নাগরিকদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণও পাঁচ বছরের ব্যবধানে কমেছে এক-তৃতীয়াংশ। কিন্তু বাংলাদেশের নাগরিকদের কমেছে মাত্র ১৩০ কোটি টাকা।

প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরেও বাংলাদেশিদের আমানত ছিলো পাঁচ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। আর ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে এই আমানতের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। সে হিসাবে সুইস ব্যাংকগুলো থেকে এক বছরের ব্যবধানে মাত্র ১৩০ কোটি টাকা তুলে নিয়েছেন বাংলাদেশিরা।

একইভাবে ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কাসহ দক্ষিণ এশিয়ার অন্য দেশগুলোও কালো টাকার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছে, যা ভারত-পাকিস্তানে কার্যকর হলেও বাংলাদেশে এই নীতি মোটেই কার্যকর প্রমাণিত হয়নি। অথচ বাংলাদেশ সরকার গত পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দিয়ে আসছে। 

আগামী ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে বিনা প্রশ্নে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ প্রদানের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এমনকি শেয়ারবাজার, জমি, ফ্ল্যাটসহ আবাসন খাতে অবাধে বিনিয়োগের সুযোগ দেয়া হয়েছে কালো টাকা। এরপরও দেশ থেকে অর্থপাচার কাঙিক্ষত হারে কমছে না।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে সুইজারল্যান্ডে বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ; বাংলাদেশি মুদ্রায় পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। ঠিক এক বছর আগে, এ অঙ্ক ছিলো ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ বা পাঁচ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা। আগের বছরের তুলনায় বাংলাদেশিদের আমানত মাত্র ১৩০ কোটি টাকা কমলেও দক্ষিণ এশিয়ার অন্য সব দেশের আমানত কমেছে অনেক। পাঁচ বছরে ভারতীয়দের জমা কমেছে অর্ধেক। মাত্র দুই বছরে পাকিস্তানিদের আমানত কমেছে এক-তৃতীয়াংশ।

সুইস ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্যমতে, বাংলাদেশিদের আমানত বাংলাদেশি মুদ্রায় ২০১৪ সালে ছিলো চার হাজার ৫৮ কোটি টাকা, ২০১৫ সালে চার হাজার ৪১৭ কোটি টাকা, ২০১৬ সালে পাঁচ হাজার ৫৬৬ কোটি টাকা, ২০১৭ সালে চার হাজার ৬৯ কোটি টাকা, ২০১৮ সালে পাঁচ হাজার ৫৫৩ কোটি টাকা এবং ২০১৯ সালের ডিসেম্বর শেষে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ কিছুটা কমে দাঁড়িয়েছে পাঁচ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা।

আর দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে গচ্ছিত অর্থের পরিমাণ ভারতের সবচেয়ে বেশি- ৮৯ কোটি ২০ লাখ সুইস ফ্রাঁ এবং বাংলাদেশের অবস্থান দ্বিতীয়- ৬০ কোটি ৩০ লাখ সুইস ফ্রাঁ। সবচেয়ে কম রয়েছে শ্রীলঙ্কার নাগরিকদের- মাত্র ৪ কোটি সুইস ফ্রাঁ।

ধনীদের অর্থ, গোপনে গচ্ছিত রাখার জন্য বহুযুগের খ্যাতি সুইজারল্যান্ডের। প্রায় দু’শ বছর ধরে, এই ধরনের ব্যাংকিং সেবার কেন্দ্র ইউরোপের দেশটি। ৮০ লাখ মানুষের দেশে, ব্যাংকের সংখ্যা ২৪৬টি। গ্রাহকের নাম-পরিচয় গোপন রাখতে কঠোর তারা। ধারণা করা হয়, অবৈধ আয় ও কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা রাখা হয়, সুইস ব্যাংকে।

সুনির্দিষ্ট গ্রাহকের তথ্য না দিলেও, কয়েক বছর ধরে দেশভিত্তিক আমানতের পরিমাণ প্রকাশ করছে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ঘোষণা অনুযায়ী, কোনো বাংলাদেশি, নাগরিকত্ব গোপন রেখে অর্থ জমা রেখে থাকলে, ওই টাকা এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত নয়। গচ্ছিত রাখা স্বর্ণ বা মূল্যবান সামগ্রীর আর্থিক মূল্যমানও হিসাব করা হয়নি এই প্রতিবেদনে।

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫