Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে ১৬০ দেশে

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ নভেম্বর ২০২০, ১৯:০০

বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হচ্ছে ১৬০ দেশে

দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা নিয়ে শত বিতর্ক থাকলেও ওষুধশিল্পের সুনাম বিশ্বজুড়ে। গুণগত মান ও কার্যকারিতার কারণে বাংলাদেশের ওষুধ ছড়িয়ে পড়েছে বিশ্ববাজারে।

দেশের চাহিদা মিটিয়ে ওষুধ রফতানি হচ্ছে ১৬০টি দেশে। শুধু তাই নয়, বিশ্বের ৪৮ দেশের মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে বাংলাদেশের ওষুধ। আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে বাংলাদেশে ওষুধের বাজার হবে ৬ বিলিয়ন ডলারের বেশি।

ডাবলিন-ভিত্তিক বাজার বিশ্লেষণ সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটস এ তথ্য জানিয়েছে। সংস্থাটির ‘বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল মার্কেট ফিউচার অপারচিউনিটি আউটলুক ২০২৫’ শীর্ষক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওষুধের বাজার চমৎকার প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে। আশা করা হচ্ছে, ২০১৯ থেকে ২০২৫ সাল পর্যন্ত বার্ষিক প্রবৃদ্ধির হার ১২ শতাংশের ওপরে থাকবে।’

প্রতিবেদন মতে, বিগত বছরের মতো এই প্রবৃদ্ধিতে অবদান রাখছে ৯০ শতাংশ দেশীয় প্রতিষ্ঠান।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাজারে প্রাপ্ত ৯০ শতাংশ ওষুধই স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো উৎপাদন করছে।

আইএমএস হেলথ কেয়ার প্রতিবেদন মতে, এই খাতে বিনিয়োগকারীরা বলছেন- ২০১৯ সালে স্থানীয় বাজারের আকার ছিল ২৫ হাজার কোটি টাকা বা তিন বিলিয়ন ডলার। এর আগে ২০১২ সালে ছিল ৯ হাজার ৩৯০ কোটি টাকা ও ২০১৭ সালে ছিলো ১৮ হাজার ৭৫৫ টাকার বেশি।

সংশ্লিষ্টদের মতে, প্রযুক্তি ও দক্ষতার মাধ্যমে বাংলাদেশের ওধুষ বিশ্ববাজারে প্রশংসা অর্জন করেছে। বর্তমানে দেশের জিডিপিতে এই খাতটি অবদান রেখেছে ১ দশমিক ৮৩ শতাংশ।

বাংলাদেশ ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট অথরিটির (বিআইডিএ) বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, দেশের ওষুধশিল্প ব্যাপক সম্ভাবনাময়। বিদেশে চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাংলাদেশিরা বছরে ২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে থাকেন। যা দেশের জিডিপির ১ দশমিক ৯৪ শতাংশ।

রিসার্চ অ্যান্ড মার্কেটসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে বৈজ্ঞানিক গবেষণার উন্নয়ন ও উদ্ভাবনীর কারণে বিদেশিরা এ দেশের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে।

আগামী দিনগুলোতে বাংলাদেশ সরকার অনুকূল নীতি গ্রহণের মাধ্যমে ওষুধশিল্পের দ্রুত প্রবৃদ্ধির জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলেও আইরিশ সংস্থাটি মনে করে।

রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) পরিসংখ্যানে দেখা যায়, দেশীয় ৪৬ কোম্পানির ৩০০ ধরনের ওষুধপণ্য বিশ্ববাজারে রফতানি হয়। শুধু ওষুধ রপ্তানিতে বিশ্ববাজার থেকে বিলিয়ন ডলারের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের স্বপ্ন দেখছে বাংলাদেশ। স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা বা এলডিসি হিসেবে ওষুধশিল্পে মেধাস্বত্ব ছাড় ১৭ বছর বৃদ্ধি পেয়েছে। ফলে বাংলাদেশের ওষুধশিল্প খাতে ২০৩৩ সাল পর্যন্ত মেধাস্বত্ব ছাড় পাচ্ছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ওষুধ রফতানির আকার বাড়াতে চায় বাংলাদেশ। বিশ্ববাজারে এখন ওষুধের বার্ষিক ব্যয় ৯৫ হাজার ৬০০ কোটি মার্কিন ডলার।

ইপিবির তথ্য বলছে, সর্বশেষ ২০১৯-২০ অর্থবছরে ওষুধ রফতানি হয়েছে ১৩ কোটি ৫৭ লাখ ডলারের। আগের বছরের চেয়ে ওষুধ রফতানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৪ দশমিক ৪৯ শতাংশ। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ ওষুধ রফতানি করেছে ১৩ কোটি ডলারের, যা ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিলো ১০ কোটি ৩৫ লাখ ডলার। করোনায় ওষুধের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ার দামের পালেও হাওয়া লেগেছে। মে ও জুনের শেয়ার লেনদেনে ওষুধ খাত ব্যাপকভাবে ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যমতে, জাতীয় অর্থনীতিতে ওষুধশিল্পের অবদান বাড়ছে। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে জিডিপিতে ওষুধ খাতের অবদান ছিলো ১ দশমিক ৮৫ শতাংশ। বর্তমানে ২৫৭টি অনুমোদিত কোম্পানির মধ্যে উৎপাদনে রয়েছে ১৫০টি। সর্বশেষ ২০১৯ সালে ইবিএল সিকিউটিরিজের ওষুধশিল্প খাত নিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ওষুধশিল্পের বাজার ২০ হাজার ৫১১ কোটি টাকার। গত পাঁচ বছরে এ শিল্পের প্রবৃদ্ধি গড়ে ১৫ দশমিক ৬ শতাংশ। পরবর্তী পাঁচ বছরে গড়ে ১৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

তথ্যমতে, চার দশক ধরে ওষুধশিল্পে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। ওষুধের বৈশ্বিক বাজারের হিসাবে দেখা যায়, ২০১৮ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী ওষুধের বাজার ছিলো ১ হাজার ২০৫ বিলিয়ন ডলারের, যেখানে প্রবৃদ্ধি ছিলো ৪ দশমিক ০৮ শতাংশ। ২০২৩ সালে এটা ১ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।

ওষুধশিল্প সমিতির তথ্যানুযায়ী, গত দুই বছরে ১ হাজার ২০০ ধরনের ওষুধ রপ্তানির অনুমোদন নেয়া হয়েছে। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশে তৈরি ওষুধ বিশ্বের ১৪৭টি দেশে রফতানি হয়। রপ্তানিতে শীর্ষ সাত দেশ হচ্ছে মিয়ানমার, শ্রীলঙ্কা, ফিলিপাইন, ভিয়েতনাম, আফগানিস্তান, কেনিয়া ও স্লোভেনিয়া। মোট ওষুধ রফতানির ৬০ দশমিক ৩২ শতাংশ যাচ্ছে এ দেশগুলোয়। আর বাকি ৩৯ দশমিক ৬৮ শতাংশ অন্যান্য দেশে রফতানি হয়।

দেশের ২৫০টি ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ফার্মাসিউটিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ (বিএপিআই) সাধারণ সম্পাদক এসএম শফিউজ্জামান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা দিনে দিনে বাড়ছে। প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের বিস্তৃতি বাড়াচ্ছে। গবেষণা ও উন্নয়নে বিনিয়োগ করছে। এসব কারণে এই খাতটি বিকশিত হচ্ছে।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫