
বাংলাদেশ ও লেবাননের জাতীয় পতাকা। ফাইল ছবি
বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করতে অগ্রাধিকারভিত্তিক বাণিজ্য চুক্তি (পিটিএ) করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে লেবানন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব শরিফা খান এ তথ্য জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমরা লেবাননের কাছ থেকে একটি প্রস্তাব পেয়েছি। এটার বিভিন্ন দিক যাচাইয়ে আমরা তা শুল্ক বিভাগে পাঠিয়ে দিয়েছি।’
লেবাননে অবস্থানরত বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূত আবদুল মোতালেব জানান, ‘লেবানন একটি ছোট দেশ, লেবাননের জনগণের ক্রয় ক্ষমতা অনেক বেশি ও দেশটির সমাজ ব্যবস্থা স্বচ্ছল। তাছাড়া লেবাননের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যসামগ্রীর অনেক চাহিদা রয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ লেবাননের বাজারে যেসব পণ্য রপ্তানি করে তার বেশিরভাগই হলো তৈরি পোশাক, টেক্সটাইল, পাট, ব্যাটারি, কৃষি পণ্য ও হিমায়িত খাদ্য। তবে লেবাননের বাজারে আরো যেসব পণ্য রপ্তানির সুযোগ রয়েছে তা হলো- ফার্মাসিটিকেল, কেমিকেল, চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ইলেকট্রনিক্স ক্যাবল, হালকা প্রকৌশল, কাগজ ও কাগজ পণ্য এবং প্লাস্টিক পণ্য। সুতরাং লেবাননের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বৃদ্ধির সুযোগ রয়েছে।’
লেবাননের শুল্ক প্রশাসনের বরাতে জানা যায় দেশটিতে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানির পরিমাণ বার্ষিক ৪ কোটি ৬০ লাখ মার্কিন ডলার।
মোতালেব সরকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন যাবৎ বাংলাদেশ ও লেবাননের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। বাংলাদেশ ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা অর্জনের পর স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের অন্য দেশগুলোর মধ্যে লেবানন প্রথম পর্যায়ের। ১৯৭৩ সালের ২৮ মার্চ বাংলাদেশ লেবাননের সঙ্গে কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন করে।’
লেবাননের অনেক বিনিয়োগকারি বাংলাদেশে বিনিয়োগের জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছে এবং বিপুল সংখ্যক লেবাননের বিনিয়োগকারি এ দেশে তাদের বিনিয়োগ বৃদ্ধি করেছে। বিবি এনার্জি অ্যান্ড রেজার্স ক্যাপিটাল ইতোমধ্যেই বাংলাদেশে বিনিয়োগ করেছে। বিবি এনার্জি বাংলাদেশের রানার গ্রুপের সঙ্গে যৌথভাবে গ্যাস সিলিন্ডার উৎপাদনে চুক্তিবদ্ধ হয়েছে। এছাড়া বন্ড ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনাল অব লেবানন বাংলাদেশে এক কোটি ডলার বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে।
রাষ্ট্রদূত জানান, এ বছরের ২২ থেকে ২৫ এপ্রিল বন্ড ক্যাপিটাল ইন্টারন্যাশনালের তিন সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল বাংলাদেশ সফর করেছে। গত ছয় মাসে লেবাননের ১০ থেকে ১৫ জন ব্যবসায়ি বাংলাদেশ সফর করেছেন। এ মাসে লেবাননের বিশিষ্ট কিছু ব্যবসায়ি ও বিনিয়োগকারির বাংলাদেশ সফরের কথা রয়েছে।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কতৃপক্ষ ও পাবলিক প্রাইভেট পাটনারশিপ (পিপিপি) গুরুত্বের সঙ্গে এই বিনিয়োগ পর্যালোচনা করছে।
ইতোমধ্যেই দূতাবাস বিআইডিএ এবং অন্যান্য সংস্থার সঙ্গে তাদের কর্মসূচি তৈরি করেছে। দেশে বিনিয়োগ সম্ভাবনে পরিদর্শনে আরো লেবাননের ব্যবসায়ি শিগগিরই বাংলাদেশ সফর করতে যাচ্ছেন বলে রাষ্ট্রদূত জানান।
মোতালেব সরকার জানান, বাংলাদেশে লেবাননের বিনিয়োগ দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে দুই দেশের বিভিন্ন ব্যবসায়ি দল ২০ থেকে ৩০ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে আলোচনা করছে। দুই দেশের অর্থনীতিক সহযোগিতা ত্বরান্বিত করতে শিগগিরই বাংলাদেশ-লেবানন বিজনেস কাউন্সিল গঠন করা হবে। লেবাননের বাজারে বাংলাদেশের পণ্যের বাজার সম্পসারণে বাংলাদেশ দূতাবাস অক্টোবরের শেষের দিকে লেবাননের রাজধানী বৈরুতে ‘বাংলাদেশ সিঙ্গেল কান্ট্রি ট্রেড ফেয়ার’ এর আয়োজন করতে যাচ্ছে।
তিনি বলেন, এই মেলার মাধ্যমে বাংলাদেশ এবং লেবাননের ব্যবসায়িদের বাংলাদেশের সঙ্গে অর্থনীতিক এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো শক্তিশালী করতে এগিয়ে আসায় উৎসাহিত করবে। মেলার মাধ্যমে লেবাননের ব্যবসায়ি, সরকারি কর্মকর্তা এবং ভোক্তাদের মাঝে বাংলাদেশের পণ্য সম্পর্কে পরিচিত হতে সুযোগ তৈরি করবে।