দুর্ঘটনা প্রতিরোধে অক্টোবরে শুরু হচ্ছে কারখানা পরিদর্শন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৪:৫২

নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুডের সেজান জুস কারখানায় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফাইল ছবি
শিল্প কারখানায় দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আগামী অক্টোবর মাস থেকে মাঠ পর্যায়ে পরিদর্শন শুরুর পরিকল্পনা করছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নেতৃত্বে গঠিত কমিটি।
নারায়ণগঞ্জে হাশেম ফুডের সেজান জুস কারখানায় বড় ধরনের অগ্নিকাণ্ডসহ বড় বড় দুর্ঘটনার প্রেক্ষাপটে গত ১৫ জুলাই প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে অনুশাসন জারি করে কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে বড় ধরনের সংস্কারমূলক পদক্ষেপ নেয়ার কথা জানান হয়।
প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিদের নিয়ে ২৪ সদস্যের একটি জাতীয় কমিটি করা হয়। পাশাপাশি বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ বিডার নেতৃত্বে এফবিসিসিআই, বিজিএমইএসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি কর্তৃপক্ষের সমন্বয়ে অবিলম্বে সব শিল্প কলকারখানা সরেজমিনে পরিদর্শনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুশাসন জারি করা হয়।
এসব পরিদর্শনের আলোকে শিল্প কলকারখানাগুলোর অবকাঠামোগত এবং অগ্নি-দুর্ঘটনা ও অন্যান্য দুর্ঘটনা নিরোধের বিদ্যমান অবস্থা পর্যালোচনা ও করণীয় নির্ধারণে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়নের জন্য বিডা সুনির্দিষ্ট দায়িত্ব দেয়া হয়।
ওই নির্দেশনা জারির প্রায় দুইমাস পর বিডার পরিচালক (মনিটরিং অ্যান্ড ইভালুয়েশন কমপ্লায়েন্স) মোহাম্মদ আরিফুর রহমান বলেন, ওই অনুশাসনের পর কোভিড পরিস্থিতির বেশ অবনতি হয়েছিল। কোভিডের মধ্যেও কাজের বেশ খানিকটা অগ্রগতি হয়েছে।
অনুশাসন বাস্তবায়নে বিডার নির্বাহী সদস্য অভিজিৎ চৌধুরীকে প্রধান করে একটি কেন্দ্রীয় সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে যেখানে আরিফুর রহমান সদস্য সচিব হিসাবে রয়েছেন। গত এক মাস ২০ দিনে এই কমিটি নিজেদের মধ্যে তিনটি ও বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যানের সঙ্গে দুটি বৈঠক করেছে।
সারাদেশে পরিদর্শন করার মতো ছোট-বড় ৪৬ হাজার কারখানা রয়েছে উল্লেখ করে আরফিুর রহমান বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ে দেশীয় বাজারভিত্তিক কারখানাকে গুরুত্ব দেয়া হবে। কারণ আরএমজি ও অন্যান্য রপ্তানিমুখী কারখানাগুলোর কমপ্লায়েন্স অনেকটা সিকিউর্ড। তাই লোকাল দিয়েই আমরা শুরু করবো। তারাই বেশি ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে।
বিডার নেতৃত্বে সরকারি-বেসরকারি প্রনিধিদের নিয়ে গঠিত কমিটির সুপারিশের আলোকে জাতীয় কমিটির কাজও নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় থেকে জারি করা প্রজ্ঞাপনে। এগুলো হলো :
১. কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে দুর্ঘটনারোধ এবং নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্তৃপক্ষ/কমিটি কর্তৃক সরেজমিন পরিদর্শনে পাওয়া পর্যবেক্ষণ ও সুপারিশমালা পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ।
২. কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের সাথে সংশ্লিষ্ট আইনানুগ কর্তৃপক্ষগুলোর কার্যক্রম পরিবীক্ষণ।
৩. কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর অবকাঠামোর বিষয়ে প্রায়োগিক আইন/বিধি/নীতিমালা/গাইডলাইন/নির্দেশনাগুলো পর্যালোচনা করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
৪. সংশ্লিষ্ট আইন/বিধি/নীতিমালা/গাইডলাইন/নির্দেশনাগুলো পরিপালনের বিষয়টি পরিবীক্ষণ।
৫. কল-কারখানা, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোতে অগ্নিকাণ্ড/দুর্ঘটনা সম্পর্কে কর্মী ও ব্যবস্থাপনার সাথে সংশ্লিষ্ট সবাইকে প্রশিক্ষণের আওতায় নিয়ে আসার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ।
সালমান এফ রহমানকে সভাপতি করে গঠিত কমিটিতে সদস্য সচিব করা হয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিবকে।
সদস্য হিসেবে রয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, গৃহায়ণ ও গণপূর্তমন্ত্রী/প্রতিমন্ত্রী, সংশ্লিষ্ট সংসদীয় এলাকার সংসদ সদস্য, সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন/ পৌরসভার মেয়র, জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত সচিব, বাণিজ্য সচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, শিল্প সচিব, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-বিডা এর নির্বাহী চেয়ারম্যান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউক এর চেয়ারম্যান, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন), গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থাপত্য অধিদপ্তরের প্রধান স্থপতি, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের মহাপরিদর্শক, এফবিসিসিআই সভাপতি ও বিজিএমইএর সভাপতি।