নগদের মালিকানা নিলেও ঋণের দায়ভার নেবে না ডাক অধিদপ্তর

ডেস্ক রিপোর্ট
প্রকাশ: ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১১:৫৪

মোবাইল ব্যাংকিং সেবা ‘নগদ’
মোবাইল ফোনে অর্থ লেনদেনের আলোচিত প্রতিষ্ঠান নগদের মালিকানায় ডাক অধিদপ্তরকে আনার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ফলে ডাক অধিদপ্তর নগদের ৫১ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবে। বাকি ৪৯ শতাংশ শেয়ার থাকবে নগদ লিমিটেডের হাতে।
নগদের মালিকানায় থাকা থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস ইতিমধ্যে নাম পরিবর্তন করে নগদ লিমিটেড হয়েছে।
এছাড়া ডাক বিভাগ কীভাবে কোম্পানি গঠন করবে, এ বিষয়ে গতকাল মঙ্গলবার (৫ অক্টোবর) সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয়ের এক বৈঠকে সেই নিয়ম ঠিক করা হয়েছে। এই সভায় ডাক অধিদপ্তর, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরের (রেজেসকো) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
তবে কর্মকর্তারা বলেছেন, নগদের বড় অংকের যে ঋণ রয়েছে, তার দায়ভার ডাক বিভাগ নেবে না। এই ঋণ সমন্বয় করার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংক ছয় মাসের দিয়েছে।
এদিকে নগদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, ঋণের বিষয় নিয়ে মালিকানা ভাগাভাগি করে কোম্পানি গঠনের ক্ষেত্রে কোনও জটিলতা নেই।
আগের মতো এই সভাতেও সিদ্ধান্ত হয় যে নগদ পরিচালনায় নতুন করে ‘নগদ বাংলাদেশ পিএলসি’ নামে পৃথক কোম্পানি গঠন করা হবে। এর মালিকানার ৫১ শতাংশ আসবে ডাক অধিদপ্তরের অধীনে আর ৪৯ শতাংশ বেসরকারি উদ্যোক্তাদের হাতে থাকবে। এজন্য আলাদা যে কোম্পানি হবে, সেটির পরিচালনা পর্ষদ হবে ৯ সদস্যের। এর মধ্যে চেয়ারম্যানসহ পাঁচজন হবেন সরকারের প্রতিনিধি, বাকি চারজন বেসরকারি খাতের।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ সিরাজ উদ্দিন বলেছেন, তাদের এই বৈঠকে কোম্পানির একটি কাঠামো ঠিক করা হয়েছে। ডাক বিভাগ থেকে একজন চেয়ারম্যান ও চারজন সদস্য এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নগদের চারজন সদস্য নিয়ে পরিচালনা বোর্ড থাকবে। এই বোর্ডে পদাধিকার বলে চেয়ারম্যান হবেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সচিব।
তিনি বলেন, নগদের ঋণের দায়ভার ডাক বিভাগ নেবে না। কোম্পানি হওয়ার আগে তাদের দায় এবং দায়িত্ব নিয়ে তো আমরা কোম্পানি করব না। তারা (নগদ লিমিটেড) বেসরকারি প্রতিষ্ঠান হিসাবে যদি ঋণ নিয়ে থাকে, সেটা তাদের দায় ও দায়িত্ব তা পরিশোধ করা।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক উল্লেখ করেছেন, নগদের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই ১৭৩ কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে বলে আমাদের জানিয়েছে। এখন বাকিটা শোধ করতে সময় দেয়া হয়েছে।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সূত্রে জানা গেছে, গ্রাহকের টাকার বিপরীতে বিভিন্ন ব্যাংক থেকে ৫০০ কোটি টাকা ঋণ নেয়া হয়েছে। এর একটা অংশ শোধ করার পর ঋণের পরিমাণ এখন আছে ৩২৮ কোটি টাকা।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক ঋণের টাকা শোধ করার জন্য ছয় মাস সময় দিয়েছে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেছেন, কোম্পানি গঠনের আগে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে নগদকে ঋণ পরিশোধ করতে হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে তারা ঋণ নিয়েছিল। সেটা আমাদের নোটিশে আসার পর তাদের পরিশোধের জন্য নির্দিষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। নগদ এখন যে পর্যায়ে এসেছে, সেখানে অন্য ব্যক্তির অর্থের বিষয় আছে। সেজন্য কোম্পানি গঠনের আগে তাদের ঋণ শোধ করে আসতে বলা হয়েছে।
তবে ঋণের পরিমাণ ঠিক কত - সেটা বলতে রাজি নয় নগদ কর্তৃপক্ষ। নগদের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেছেন, আমরা লিমিটেড কোম্পানি। একটা প্রাইভেট কোম্পানি যেভাবে লোন নেয়, সেভাবে লোন নিয়েছে ও তা পরিশোধ হচ্ছে। এটা নিয়মিত বিষয় হলেও এনিয়ে গুজব ছাড়ানো হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, এ নিয়ে কোম্পানি গঠনে জটিলতার কিছু নেই।
থার্ড ওয়েভ টেকনোলজিস নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ডাক অধিদপ্তরের সাথে একটি চুক্তি করে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের অনুমতি নিয়েছিল ২০১৭ সালে। সেই চুক্তি অনুযায়ী বেসরকারি প্রতিষ্ঠাটির সাথে ডাক বিভাগের মুনাফা ভাগাভাগি হয়েছে। কিন্তু ডাক বিভাগের মালিকানা ছিল না। প্রতিষ্ঠানটি নগদ নামে বাজারে লেনদেন শুরু করে ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। গত বছর প্রতিষ্ঠানটিরই নাম পরিবর্তন করে থার্ড ওয়েভের পরিবর্তে নগদ করা হয়েছে।
শুরুতে নগদের মালিকানায় যারা ছিলেন, তাদের অনেকে ছেড়ে দেয়ায় মালিকানায় আওয়ামী লীগের দুইজন সংসদ সদস্য যুক্ত হন।
ডাক অধিদপ্তরের মহাপরিচালক জানিয়েছেন, এখন প্রচলিত আইন সংশোধনের মাধ্যমে কোম্পানি গঠন করা যাবে নাকি নতুন আইন করতে হবে- এ নিয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের মতামত চাওয়া হবে। ছয় মাসের মধ্যেই নগদের মালিকানা নিয়ে কোম্পানি গঠনের চেষ্টা তারা করছেন।