কখন কোন পরিস্থিতি থেকে শুরু করছেন তা বড় কথা নয় ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে লাগে কেবল পরিশ্রম, সাহস এবং দৃঢ়তা। এরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত তুষার জৈন। ব্যর্থতা যেখানে বেশির ভাগ মানুষকে মানসিক ভাবে ভেঙে ফেলে, তাঁরা আর নতুন করে সাফল্যের সিড়ি বেয়ে উপরে ওঠার সাহস হারিয়ে ফেলেন, তুষার জৈন তাঁদের সামনে অনন্য নজির। সাফল্যের শিখর থেকে শূন্যে নেমে আসার পর কী ভাবে শূন্য থেকে শুরু করে ফের শিখরে পৌঁছনো যায়, তা দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি।

তুষার এমন একজন ব্যক্তি যিনি জীবন শুরু করেছিলেন রাস্তায় রাস্তায় ব্যাগ বিক্রি করা দিয়ে। কিন্তু এখন তিনি যে কোম্পানির মালিক সেটির বার্ষিক টার্নওভার ২৫০ কোটি টাকা।

তুষার জৈন ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দা। তার বাবা ছিলেন ব্যবসায়ী। ১৯৯২ সালে স্টক ব্রোকার হর্ষদ মেহতা কেলেঙ্কারির শিকার হয়ে সর্বস্ব খুইয়ে একপ্রকার পথে বসেছিলেন তার বাবা মূলচাঁদ জৈন। হঠাৎই সমস্ত টাকা এভাবে ডুবে যাওয়ায় চরম দারিদ্র্যের শিকার হন মূলচাঁদ এবং তার পরিবার। দিন গুজরানের জন্য রাস্তায় রাস্তায় ব্যাগ বিক্রি করতে শুরু করেন তিনি। পড়াশোনার পাশাপাশি ব্যবসার কাজে বাবাকে সাহায্য করতেন তুষার জৈন।

ধীরে ধীরে সেই ব্যবসা থেকেই ঘুরে দাঁড়াতে শুরু করেন তুষার ও তার পরিবার। ১৯৯৯ সালে ৩০০ জন রিটেলারের সাথে করে শুরু করেন ব্যবসা। ২০০৬ সালে তিনি চলে আসেন মুম্বাই, সেখানেই প্রথম তিনি স্থাপন করেন প্রায়োরিটি নামক একটি নতুন ব্র্যান্ড। যা পরবর্তী ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। এরপর ২০১২ সালে হাই স্পিরিট কমার্শিয়াল ভেঞ্চারস প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। আর এই কোম্পানি থেকেই কার্যত তুষারের উত্থানের শুরু। ২০১৪ সাল আসতে না আসতেই তার এই কোম্পানি প্রতিদিন ১০-২০ হাজার ব্যাগ তৈরি করতে শুরু করে।

তুষার এই সংস্থার সহ-প্রতিষ্ঠাতা তার বাবা। বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ তৈরি করে থাকে সংস্থাটি। এই মুহূর্তে ভারতের চতুর্থ বৃহৎ ব্যাকপ্যাক এবং ব্যাগ বিক্রির সংস্থা এটি। মুম্বইয়ে আছে এর সদর দফতর। সারা দেশে বিভিন্ন জায়গায় মোট ১০টি আলাদা অফিস রয়েছে।

সম্প্রতি তুষারের প্রতিষ্ঠান ট্রাওয়ার্ল্ড নামে একটি নতুন ব্র্যান্ড লঞ্চ করে। বলিউড অভিনেত্রী সোনম কপূর যার ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসাডর। তুষারের লক্ষ্য আগামী পাঁচ বছরের মধ্যে সংস্থাকে আরও বড় করে তোলা। সংস্থার টার্নওভার এক হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়া। প্রতি বছর ২৫ লক্ষ ব্যাগ তৈরি করা।

জীবনে বহু বাধার সম্মুখীন হতে হয়েছে তাঁকে। সমস্ত পেরিয়ে আজ তিনি আড়াইশো কোটি টাকার সংস্থার মালিক। কয়েক হাজার মানুষকে জীবনধারণের রসদ জুগিয়ে চলেছেন। সম্প্রতি তুষার জৈন বিহারের পাটনায় একটি নতুন প্ল্যান্ট স্থাপন করছেন, যেখানে বছরে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ ব্যাগ তৈরি করা হবে। তুষারের স্বপ্ন একদিন তার কোম্পানির বার্ষিক টার্নওভার দাঁড়াবে হাজার কোটি টাকা।