Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

পরিত্যক্ত ইটভাটায় এবার স্ট্রবেরি চাষ

Icon

আশিক বিন রহিম, চাঁদপুর

প্রকাশ: ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১১:৩৪

পরিত্যক্ত ইটভাটায় এবার স্ট্রবেরি চাষ

ওজার্ক বিউটি স্ট্রবেরি। ছবি : চাঁদপুর প্রতিনিধি

চাঁদপুরের পরিত্যক্ত এক ইটভাটায় এবার স্ট্রবেরি চাষে ব্যাপক সাফল্য দেখালেন সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন। তার প্রতিষ্ঠিত আলোচিত ফ্রুটস্ ভ্যালি এগ্রোতে অন্যান্য বিদেশি ফলের মতো স্ট্রবেরি চাষেও সফল তিনি। 

সেখানে সম্পূর্ণ অর্গানিক পদ্ধতিতে পরীক্ষামূলকভাবে সুগন্ধিযুক্ত, সুস্বাদু ও রসালো ওজার্ক বিউটি নামের এই স্ট্রবেরির বাম্পার ফলন হয়েছে। আকারে বড় ও লম্বাটে এই স্ট্রবেরির স্বাদ এতোই চমৎকার যে আমদানিকৃত যেকোনও জাতের স্ট্রবেরিকে হার মানাবে।

পাতার দাগ ও পাতা ঝলসে যাওয়া রোগ প্রতিরোধী ও স্বপরাগায়ন জাতের ওজার্ক বিউটি হতে পারে ভবিষ্যতে এদেশের আবহাওয়া উপযোগী একটি বাণিজ্যিক জাত। স্ট্রবেরির চাষে সফলতার কথা শুনে তা সরেজমিনে দেখতে ছুটে আসছেন আশপাশের জেলা-উপজেলার নতুন উদ্যোক্তা ও বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ। এরই মধ্যে অনেক উদ্যোক্তা এই জাতের স্ট্রবেরি চাষে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।


সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চাঁদপুর সদর উপজেলার শাহমাহমুদপুর ইউনিয়নের শাহতলী গ্রামে পরিত্যক্ত একটি ইটভাটায় বালু ভরাট করে সেখানে ফ্রুটস্ ভ্যালি এগ্রো স্থাপন করেন সাংবাদিক হেলাল উদ্দিন। শুরুর পর থেকেই তিনি পরীক্ষামূলকভাবে একের পর এক বিভিন্ন প্রজাতির ফলের চাষাবাদ শুরু করেন। তারই ধারাবাহিকতায় গত বছর ফ্রুটস্ ভ্যালিতে আমেরিকান তিনটি জাতের স্ট্রবেরির চাষ করেন। কিন্তু আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে তা সফলতার মুখ দেখেনি। তবে এ বছর ওজার্ক বিউটি নামের সম্পূর্ণ নতুন জাতের স্ট্রবেরি চাষে ব্যাপক ফলন হয়েছে।

ফ্রুটস্ ভ্যালি এগ্রোর কর্মচারীরা জানান, এখানে একটি ইটভাটা ছিল। সেখানে প্রথমে বালি ও তার উপর মাটি ফেলে চাষ উপযোগী বেড তৈরি করা হয়েছে। পরে মাটি শোধন করার জন্য দানাদার কীটনাশক দেয়া হয়েছে। এখানে অন্য কোনও রাসায়নিক সার প্রয়োগ করা হয়নি। গোবর, বার্বি কম্পোস্ট, ট্রাইকো কম্পোস্ট, হাড়ের গুঁড়া ও নিম খৈল ব্যবহার করে এই বেড তৈরি করা হয়েছে। তারপর এই ওজার্ক বিউটি জাতের স্ট্রবেরির চারা রোপণ করা হয়। 


ফ্রুটস্ ভ্যালি এগ্রোর ম্যানেজার হাসান জানায়, আমরা এ বছর যে স্ট্রবেরি চাষ করেছি তা বিদেশি ভিন্ন একটি জাত। গত বছরও আমরা স্ট্রবেরির চাষ করেছিলাম। তবে আবহাওয়ার প্রতিকূলতার কারণে সেসময় সাফল্য আনতে পারিনি। তবে এ বছর আমরা সফল হয়েছি। সবচেয়ে বড় বিষয় আমরা স্ট্রবেরি চাষে কোনও প্রকার রাসায়নিক সার ব্যবহার করিনি। আশা করছি আগামী কয়েকদিনের মধ্যে ফলটি আমরা বাজারজাত করতে পারবো।

ফ্রুটস্ ভ্যালি এগ্রোর সত্ত্বাধিকারী হেলাল উদ্দিন বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন জাতের স্ট্রবেরির চাষ শুরু হয়েছে। তবে স্ট্রবেরিতে আমাদের যে মান দরকার যেমন পুষ্টিগুণ, আকার কিংবা স্বাদ এসব আমরা খুব কম লক্ষ্য করছি। তার মধ্যে ওজার্ক বিউটি জাতটি খুবই সুগন্ধিযুক্ত ও মিষ্টি ও রসালো একটি জাত। এটি যদি বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়ে তাহলে স্ট্রবেরি চাষে একটি বিপ্লব আসতে পারে।


তিনি বলেন, অর্গানিক পদ্ধতিতে যদি কেউ স্ট্রবেরি চাষ করে তাহলে চারা কেনা থেকে ফল পাওয়া পর্যন্ত মোট খরচ ১৫০ থেকে ২০০ টাকা হতে পারে। কিন্তু এই গাছটির মাধ্যমে অন্তত খরচ বাদেও ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা আয় করা সম্ভব। সেক্ষেত্রে এই চাষে অবশ্যই বাণিজ্যিকভাবে সফল হওয়া সম্ভব। স্ট্রবেরি বিশেষ পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ হওয়ায় সারা বিশ্বে এর আলাদা চাহিদা রয়েছে। 

তিনি আরও বলেন, আধুনিক চাষাবাদ পদ্ধতি ছাড়া স্ট্রবেরির ভালো ফলন আশা করা যাবে না।


চাঁদপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা নরেশ চন্দ্র দাস জানান, ফ্রুটস্ ভ্যালি এগ্রোতে বিভিন্ন প্রজাতির আয় বর্ধনশীল দেশি-বিদেশি ফলের চাষাবাদ হচ্ছে। উক্ত চাষাবাদে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে প্রযুক্তিগত সহায়তা ও উপকরণ সরবরাহ করা হচ্ছে। ভবিষ্যতেও এই ধরনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ফ্রুটস্ ভ্যালিটি অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়েছে। তা দেখতে উপজেলা ও আশপাশের জেলা থেকেও অনেকে আসছেন এবং তারা এসব ফসলাদি চাষাবাদ দেখে উৎসাহিত হচ্ছেন। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫