Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

কলা-রুটিতেও ত্রাহি অবস্থা নিম্ন আয়ের মানুষের

Icon

মাহমুদ সালেহীন খান

প্রকাশ: ০২ জুন ২০২২, ১৫:০৬

কলা-রুটিতেও ত্রাহি অবস্থা নিম্ন আয়ের মানুষের

বেড়েছে কলা ও পাউরুটির দামও। ছবি: সাম্প্রতিক দেশকাল

চাল, ডাল, তেল, দুধ, ডিমের সাথে বাড়ছে কলা পাউরুটি ও বিস্কিটের দামও। খেটে খাওয়া শ্রমজীবী মানুষের প্রতিদিনের চায়ের স্টলের ভরসা পাউরুটি ও কলার দামও বেড়েছে ২ টাকা থেকে ৫ টাকা করে। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন রিকশাচালক, ভ্যানচালক বা গাড়ির ড্রাইভারসহ নিম্নবিত্ত শ্রমজীবীরা। তারা বলছেন, যেভাবে জিনিষপত্রের দাম বাড়ছে তাতে করে ঘরে কোনোরকম খেয়ে দিন কাটছে পরিবার নিয়ে, এমনকি এখন দুপুরেও বেশিরভাগ সময় না খেয়ে থাকতে হচ্ছে তাদের।  

আজ বৃহস্পতিবার (২ জুন) রাজধানীর গুলিস্তান, শাহবাগ, ফার্মগেট, আসাদ গেট, মোহাম্মদপুর টাউনহল বাজার ঘুরে শ্রমজীবী মানুষের সাথে কথা বলে জানা গেছে, তারা আর জীবন চালাতে পারছেন না। আসাদ গেটে কথা হয় রিকশা চালক মুন্সী মিয়ার সাথে। তার গ্রামের বাড়ি ভোলায়। ঢাকায় রিকশায় চালাচ্ছেন এক মাস হলো। 

তিনি জানালেন, ভোলার চর ফ্যাশনে তার বাড়ি। অভাবের তাড়নায় ঢাকায় রিকশা চালাচ্ছেন। খাবার নিয়ে পড়েছেন সমস্যায়। গত পরশু দুপুরে যে রুটি আর কলা কিনে খেয়েছেন ৮ টাকা আর ১০ টাকা করে। আজকে সেই কলা আর ক্রিম রুটি সকালে কিনে খেয়েছেন ১৫ টাকা দিয়ে। অনেক সময় রাতে না খেয়েও থাকেন। এর কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, জিনিষপত্রের যে দাম। আমাদের মতো মানুষের কোনো রকম খেয়ে থাকাটাও কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে। 

মোহাম্মদপুর টাউন হলে কথা হয় গাড়ির ড্রাইভার আব্দুস সালামের সাথে। গাড়ি পার্কিংয়ে রেখে কলা আর রুটি নিয়ে খেতে বসলেন চায়ের দোকানে। তখন দুপুর ১২টা। তিনি বলেন, দুপুরে একটা কলা খাচ্ছি ১৫ টাকা দিয়ে, কোনো দিন এত দামে কলা খাইনি। এত ছোট রুটি ১৫ টাকা। এটা ভাবতে পারেন। আগের চেয়ে রুটির সাইজ ছোট হয়েছে, দামও বাড়িয়ে দিয়েছে ৫ টাকা। সারাদিন কষ্টের কাজ করতে হয়। সকালে উঠে একটা কেক বা বনরুটি দিয়ে চা খাই। 

সব ধরনের পাউরুটি, কেক ও বিস্কুটের দাম কেজিতে ২৫-৩০ টাকা বাড়ানো হয়েছে। শ্রমজীবী মানুষের নিত্যদিনের আহার্য চায়ের দোকানে ছোট এক পিস বনরুটির দাম ৫ টাকা বাড়িয়ে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, পাউরুটি, কেকের দাম ৫ থেকে ৭ টাকা করে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।  খোলা পাউরুটি, কেক যেগুলো আগে ৮ টাকায় পাওয়া যেত, সেগুলো বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকায়। ১০ টাকার ড্রাই কেক বিক্রি হচ্ছে ১৫ টাকা। এসব কেক বা রুটির আকারও ছোট হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেছেন ক্রেতারা।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিং বিভাগে কাজ করেন মো. শফিক। সারাদিন তাকে শহর ঘুরে ঘুরে কোম্পানির অর্ডার নিতে হয়। তিনি বলেন, ‘সরকার তো রুটি-কেকের দাম বাড়ায়নি। কারখানার লোকেরা তাদের ইচ্ছেমতো দাম বাড়িয়ে নিচ্ছে। এজন্য খাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছি।’

মোহাম্মদপুরে একটি দোকানে চা-বিস্কুট-কেক ও পান-সিগারেট বিক্রি করেন খলিল উল্লাহ। তিনি বলেন, ‘রুটি-কেক যারা খাবে, তারা তো চিল্লাইতেছে। মাল তো কোম্পানি দিয়ে যাচ্ছে; কিন্তু বেশি দামের জন্য গালাগালি শুনতে হচ্ছে আমাদের। রিকশাওয়ালা কেক খাওয়ার পর বলে আপনার দোকান থেকে আর কোনো দিন খামু না। রুটিতে ৫ টাকা দাম বেশি রাখায় মারামারি অবস্থা। এই লম্বা রুটি ১৫ টাকা করেছে। এত টাকা দিয়ে খাবেন? আমাদের ১২ টাকা কেনা, ১৫ টাকায় বিক্রি করছি। আগে ৮ টাকায় কিনতাম, ১০ টাকায় বিক্রি করতাম।

এদিকে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে গমের দাম বেড়েছে। এই গম দিয়ে ময়দা তৈরি হয়। সেই ময়দা দিয়ে আমরা বিস্কুট, কেক, পাউরুটি বানাই। এছাড়া পাউরুটি ও বিস্কুট তৈরিতে যে উপকরণ লাগে সেগুলোর দামও বেড়েছে। তবে আমরা অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কাউকে দাম বাড়াতে বলিনি। কোনো কোম্পানি বা ব্যবসায়ী যদি এগুলোর দাম বাড়িয়ে থাকে, তা হলে সেটা তাদের ব্যাপার। 

তিনি আরো বলেন, বেকারি পণ্যের দাম নির্ধারণে দেশে কোনো সংস্থা নেই। ফলে সেই সুযোগ নিচ্ছে মালিকরা। আনুপাতিক হারে বাড়ালে সমস্যা ছিল না। তেল-গমসহ আনুষঙ্গিক যেসব জিনিসের দাম বেড়েছে, তুলনামূলকভাবে তার চেয়ে অনেক বেশি বেড়েছে বেকারি পণ্যের দাম। এটা কোনোভাবেই যুক্তিসঙ্গত নয়। অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম বাড়ার সাথে সাথে বেকারি মালিকরা এই সুযোগটি নিয়েছে। বেকারির পণ্য উৎপাদনে মান নিয়ন্ত্রণ করে বিএসটিআই; কিন্তু দাম নির্ধারণ করার ক্ষেত্রে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। 

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫