
জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কেটে রাখা উৎসে কর যাতে সহজে সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া যায়, সেজন্য পুরো ব্যবস্থাটিকে অনলাইনভিত্তিক বা স্বয়ংক্রিয় করা হয়েছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) গত বছরের ৬ অক্টোবর ই-টিডিএস নামের স্বয়ংক্রিয় এ ব্যবস্থাটি চালু করে। এখন পর্যন্ত দেশের মোট ৫ হাজার ৫৬০টি প্রতিষ্ঠান ই-টিডিএসে (ইলেকট্রনিক ট্যাক্স ডিডাক্ট অ্যাট সোর্স বা ইলেকট্রনিক উপায়ে উৎসে কর কর্তন) নিবন্ধন নিয়েছে।
নতুন এ ব্যবস্থা চালুর ফলে উৎসে কর জমা দিতে এখন আর আয়কর কার্যালয়ে যেতে হয় না। প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেদের কার্যালয় থেকেই অটোমেটেড চালানের (এ-চালান) মাধ্যমে উৎসে করের টাকা জমা করতে পারে সরকারি কোষাগারে। বর্তমানে ব্যাংক, বহুজাতিক কোম্পানি, বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব মিলিয়ে ৫৩টি খাত থেকে উৎসে কর আদায় করা হয়।
ই-টিডিএসের মাধ্যমে গত আট মাসে মোট ৪৭৬ কোটি টাকার উৎসে কর জমা পড়েছে।
গত সোমবার ই-টিডিএস পদ্ধতির উপর আয়োজিত এক ওয়েবিনারে করাঞ্চল-৬ এর কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদ হাসান এসব তথ্য জানান। করাঞ্চল-৬ এবং অডিট ফার্ম এসএমএসি এইচআরএস লিমিটেড যৌথভাবে ওয়েবিনারের আয়োজন করে।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক ছিলেন এনবিআরের সদস্য প্রদুৎ কুমার সরকার,বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন, ইনিস্টিটিউট অফ চার্টার্ড একাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) সভাপতি শাহাদাত হোসেন, নরডিক চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির (এনসিসিআই) সভাপতি তাহরিন আমান, ফরেন ইনভেস্টরস চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফআইসিসিআই) নির্বাহী পরিচালক নুরুল কবির প্রমূখ।
এসএমএসি এইচআরএস লিমিটেডের চেয়ারম্যান জেরিন মাহমুদ ওয়েবিনারে স্বাগত বক্তব্য দেন এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন ফার্মটির পরিচালক হিসাববিদ স্নেহাশীষ বড়ুয়া।
জাহিদ হাসান বলেন, ই-টিডিএস ব্যবস্থা চালুর ফলে উৎসে কর কর্তনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কার্যালয়ে বসেই টাকা জমা দিতে পারছে। সহজে আমরাও জানতে পারছি, কোন প্রতিষ্ঠান কত উৎসে কর জমা দিচ্ছে। পরে ওই করদাতার রিটার্নের সঙ্গেও তা মিলিয়ে দেখা যাচ্ছে। এতে পুরো উৎসে কর ব্যবস্থায় স্বচ্ছতা তৈরি হচ্ছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
উল্লেখ্য, ই-টিডিএস পদ্ধতি চালুর জন্য গতবছর এনবিআর করাঞ্চল-৬ এর কমিশনার মোহাম্মদ জাহিদ হাসানের নেতৃত্বে একটি দল গঠন করে। রাজস্ব প্রশাসনের এই দলটি মূলত আধুনিক এবং ডিজিটাল পদ্ধতিটি চালুর জন্য কাজ করে যাচ্ছে।
অনুষ্ঠানে এফবিসিসিআই সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন,সরকারের ডিজিটাল উদ্যোগসমূহ ব্যবসায়ীদের জানাতে হবে। তারা এসব বিষয়ে অবগত হলে তখন ডিজিটাল পদ্ধতি ব্যবহারে আরও মনোযোগি হবে। এর জন্য প্রশিক্ষণের পাশাপাশি এসব বিষয়ে প্রচারের উদ্যোগ নেওয়ার আহবান জানান। তিনি এনবিআরকে টিডিএস থেকে আইটেমের সংখ্যা কমানোর অনুরোধ করেন। বলেন, টিডিএস শুধুমাত্র বেতন, সুদ, ফি এবং লভ্যাংশের উপর আরোপ করা উচিত।
এনবিআরের সদস্য প্রদুৎ কুমার সরকার বলেন, অনলাইনে কর পরিশোধের বিধান ইতিমধ্যেই আইনের অংশ এবং ই-টিডিএস ব্যবহার সবার জন্য বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এই পদ্ধতি সম্পর্কে ব্যবসায়ীদের অবহিত করতে এনবিআর কল সেন্টার স্থাপন করবে বলে তিনি জানান।
অনুষ্ঠানে এনসিসিআই সভাপতি তাহরিন আমান ই-টিডিএস উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, এটি বাংলাদেশি কোম্পানিসমূহের ব্যবসা করার খরচ কমিয়ে দেবে।
আইসিএবির সভাপতি শাহাদাত হোসেন বলেন,সকল কোম্পানিকে ই-টিডিএস ব্যবস্থায় যুক্ত করা এবং দীর্ঘমেয়াদে ব্যবস্থাটি সফলভাবে পরিচালনার জন্য এনবিআরে শক্তিশালী আইটি অবকাঠামো গড়ে তোলার প্রয়োজন রয়েছে।
ওয়েবিনারে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের ৬৫০ কর্মকর্তা অংশগ্রহণ করেন। অনুষ্ঠানে ই-টিডিএস পদ্ধতি, অনলাইনে রিটার্ন দাখিলসহ পুরো সফটওয়্যারের উপর একটি উপস্থাপনা দেওয়া হয়। এক ঘন্টার প্রশ্নোত্তর পর্বে ই-টিডিএস এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তারা জানান,ব্যবসাকে আরও সহজ করার লক্ষ্যে বাংলাদেশ ট্যাক্স রেগুলেশন অনুযায়ী ই-টিডিএস পদ্ধতির কোথাও সংশোধনীর প্রয়োজন হলে, সেটা করা হবে। -বাসস