
ভোজ্য তেল। ফাইল ছবি
ভোজ্য তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয়েছে গত রবিবার (১৭ জুলাই)। নতুন মূল্য গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) থেকেই কার্যকর হওয়ার কথা, কিন্তু বাজারে তার বাস্তবায়ন নেই। সয়াবিন তেলে লিটারে ১৪ টাকা দাম কমানো হলেও তেলের বাজারে এক রকম বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। অধিকাংশ দোকানদার এখনও এক লিটার সয়াবিন তেল ১৯৮-২০০ টাকায় বিক্রি করছেন। তাদের যুক্তি, দাম কমানো হলেও নতুন মূল্যের তেল এখনও বাজারে আসেনি। আগের মূল্যে তেল কেনা থাকায় সে দামেই বিক্রি করা হচ্ছে।
এদিকে মিলমালিকরা গত রবিবার (১৭ জুলাই) ভোজ্য তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দিলেও গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্য তালিকা প্রকাশ করার কথা ছিল এবং সে মূল্য দেশের সব পাইকারি ব্যবসায়ীদের কাছে পাঠানোর কথা। তবে চূড়ান্ত মূল্য তালিকা প্রকাশ করেননি মিলমালিকরা। এ কারণে ভোজ্য তেলের বাজারে আরো বেশি বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ পাইকারি ভোজ্য তেল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি গোলাম মওলা বলেন, গত রবিবার (১৭ জুলাই) মিলমালিক, ট্যারিফ কমিশন এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের যৌথ বৈঠকে ভোজ্য তেলের দাম কমানোর ঘোষণা দেওয়া হয় এবং বলা হয় গতকাল সোমবার (১৮ জুলাই) আনুষ্ঠানিকভাবে মূল্য তালিকা প্রকাশ করা হবে, কিন্তু আমরা নতুন কোনো মূল্য তালিকা পেলাম না। সুতরাং আমরা দ্বিধাদ্বন্দ্বে পড়ে গেছি কোন দামে তেল বেচাকেনা করব। আমরা ট্যারিফ কমিশনে যোগাযোগ করেছি, তারাও আমাদের চূড়ান্ত কিছু জানাতে পারেনি।
তিনি আরো বলেন, গত রবিবার (১৭ জুলাই) বোতলজাত এক লিটার ১৮৫ টাকা, খোলা সয়াবিন ১৬৬ টাকা এবং পাম তেলের ১৫২ টাকা মূল্য নির্ধারণ করে দেওয়া হয়। কিন্তু আমরা আগে থেকেই ১৫৭-১৬০ টাকা কেজিতে বিক্রি করছি খোলা সয়াবিন তেল। আজও আমরা ১৫৭ টকা ৬১ পয়সা দরে খোলা সয়াবিন বিক্রি করেছি। তবে নতুন মূল্য নিয়ে এক রকম লুকোচুরি চলছে, দ্রুত বিষয়টি খোলাসা করা দরকার।
এ বিষয়ে জানতে ভোজ্য তেল আমদানিকারক ও পরিশোধনকারীদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও টিকে গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তফা হায়দারকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। আর সিটি গ্রুপের উপদেষ্টা অমিতাভ চক্রবর্তীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘আমি ঢাকার বাইরে আছি, এ বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারব না।
এদিকে এই বিশৃঙ্খলার মধ্যে ভোজ্য তেল কেউ বিক্রি করছেন বেশি দামে; কেউ কেউ বিক্রি করছে সরকারের নির্ধারিত ধরের চেয়ে কম দামে। বিক্ষিপ্তভাবে দাম ওঠানামা করলেও খুচরা বাজারে সরকারের দাম কমার প্রভাব পড়েনি। সংশ্লিষ্টরা বলেন, সরকারের নজরদারির অভাব এবং অসাধু ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনা না গেলে এই অস্থিরতা কমবে না। তবে এটা কেউ কেউ বাজার প্রতিযোগিতা তৈরি হয়েছে বলেও মনে করেন। ফলে প্রতিবার দাম বাড়া বা কমার আগে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীদের সমিতি থেকে নির্ধারিত ঘোষণা আসে।
রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা পর্যায়ে তেমন একটা দাম কমার প্রভাব পড়েনি। আগামী এক সপ্তাহেও এর কোনো সুফল পাওয়া যাবে বলে নিশ্চিত করা যায়নি। রাজধানীর ফকিরাপুল বাজারে গিয়ে দেখা যায়, এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ২০০ টাকা এবং ৫ লিটার তেল বিক্রি করছে ৯৮০ টাকা ধরে। গতকাল এই দর কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও খুচরা পর্যায়ে এর কোনো প্রভাব পড়েনি।
কারওয়ান বাজারে গিয়ে দেখা যায় প্রতি লিটার বোতল তেল বিক্রি করছে ২০০ টাকা এবং ৫ লিটার বোতল ৯১০ টাকা। এ বাজাররে গফুর স্টোরের বিক্রয়কর্মী জানান, নতুন দর কার্যকর হতে কমপক্ষে এক সপ্তাহের বেশি সময় লাগবে। অন্য দোকানের বিক্রয়কমী জানান, এটা এক মাসও লাগতে পারে। কারণ কোম্পানি নতুন তেল বন্দর থেকে খালাস করবে। তারপর উৎপাদনে যাবে। এরপর কারখানা থেকে ডিলার এবং ডিলার থেকে খুচরা পর্যায়ে আসবে। এরপরই দাম কমার ব্যাপার।
জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর চন্দ্রিমা ট্রেডার্সের মালিক রফিকুল ইসলাম বলেন, নজরদারির অভাবে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয় না। যেদিন কমে সেই দিন বাজারে গিয়ে কয়েকজন ব্যবসায়ীকে শাস্তির আওতায় এনে মিডিয়া ট্রায়ালে নিলে সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সহজ হতো। এ ছাড়া এসব ব্যবসায় সরকারের গুরুত্বপূর্ণ লোকজন এবং তার স্বজনরা জড়িত বলে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
তবে কারওয়ান বাজারের ব্যবসায়ী ও ইউসুফ জেনারেল স্টোরের মালিক মোহাম্মদ ইউসুফ বলেন, তেলের দাম অতিরিক্ত বেড়ে যাওয়ায় মানুষ বিকল্প ব্যবহার এবং ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববাজারের তেলের দর কমে যাওয়া এবং সরকার তেলে দাম কমিয়ে দেওয়ার গুজব ছিল আগে থেকেই ফলে প্রতিযোগিতামূলক বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। ফলে ভোজ্য তেল ব্যবসায়ীরা অন্যবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে তেলের দাম কমানোর ঘোষণা না দিলেও বাজারে তেলের দাম কমতে শুরু করেছে। কারওয়ান বাজারের জাকির হোসেন বলেন, সরকার আজ থেকে ১৪ টাকা কমানোর ঘোষণা দিলেও আমি গতকালই ৯৮০ টাকার ৫ লিটার তেল কিনেছি ৯৫০ টাকায়।
কারওয়ান বাজারের হাজী মিজান স্টোরের মালিক হাজী মো. মিজান বলেন, গত কয়েক দিন ধরে বাজারে ভোজ্য তেলের দাম কমে যাওয়ার আতঙ্ক তৈরি হয়েছে। ফলে বাজারে প্রতিযোগিতায় তৈরি হয়েছে। গতকাল এক লিটার ভোজ্য তেল বিক্রি করেছি ১৭৬ টাকা এবং ৫ লিটার বিক্রি করেছি ৮৮০ টাকা দরে। সরকার এবং মিডিয়ার আওয়াজে ব্যবসাযীদের আনুষ্ঠানিকতা ছাড়াই দাম কমতে শুরু করেছে।