
সব খাদ্যপণ্যই মধ্যবিত্তের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। ছবি: সংগৃহীত
শীতের আগমনী বার্তা বাতাসে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং চলে যাওয়ার পর আবহাওয়ায় শীতের আভাস পাওয়া যাচ্ছে। এর মধ্যেই বাজারে চলে এসেছে শীতের সবজির প্রথম চালান। ফুলকপি, টমেটো, গাজর, শিমসহ অন্যান্য সবজিতে পরিপূর্ণ রাজধানীর কাঁচাবাজার। সবজির প্রাচুর্যতা থাকলেও দামের কারণে বেশিরভাগ সবজিই সাধারণ ক্রেতাদের হাতের নাগালের বাইরে। সবজির বাজারে রীতিমতো আগুন লেগেছে।
আগের সপ্তাহের তুলনায় সবজির দামও বেড়েছে বলে দাবি ক্রেতাদের। তবে বিক্রেতাদের দাবি, সিত্রাংয়ের প্রভাবে কিছু সবজির দাম বাড়লেও বেশিরভাগের দাম আগের মতোই রয়েছে। মাছের বাজারেও দাম বেশির অভিযোগ ক্রেতাদের। রাজধানীর বাজারগুলো ঘুরে প্রাপ্ত তথ্যে এ চিত্র উঠে আসে।
রাজধানীর প্রাণকেন্দ্র মতিঝিলের কাঁচাবাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় সব সবজির দামই ৫০ থেকে ১৪০ টাকার মধ্যে। এর বাইরে কাঁচা পেঁপের দাম শুধু ৩০ থেকে ৩৫ টাকায় দেখা গেল। এ ছাড়া শীতকালীন সবজি যেমন ফুলকপির দাম কেজিপ্রতি ৮০ টাকা, টমেটো ও গাজরের দাম ১২০ থেকে ১৪০ টাকা, শিম ১০০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া বারোমাসি সবজি হিসেবে পরিচিত ঢেঁড়স বা ভেন্ডি ৬০ থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বেগুন মানভেদে ৫০ থেকে ৮০ টাকায়, বরবটি ৯০ থেকে ১০০ টাকায়, করলা বড় ৬০ টাকা, করলা ছোট ৮০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, চিচিঙ্গা ৮০ টাকা, লাউ পিসপ্রতি ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা।
মতিঝিলে বাজার করতে আসা মো. সুলাইমান বলেন, ‘গত সপ্তাহের তুলনায় এ সপ্তাহে বাজারে সব সবজির দামই বাড়তি মনে হচ্ছে। প্রতিটি সবজিই ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি দাম চাচ্ছে। সব কিছুতে ঘূর্ণিঝড়ের অজুহাত দেওয়া হচ্ছে। এভাবে খুব বেশিদিন চলা যায় নাকি? চাল, ডাল, আটা, তেল, চিনি সব কিছুর দাম অতিরিক্ত। ডিম তো ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে অনেক দিন ধরে।’
এ বাজারের ব্যবসায়ী মো. আনাস ভূঁইয়া বলেন, ‘বাজারে কোনো কিছুর দামই বাড়েনি। আমরা লসে বিক্রি করছি। কাঁচা সবজি পচে যায়, ভয়ে বেশিদিন সংরক্ষণ করা যায় না। এর মধ্যে বৃষ্টি হয়ে হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় বাজার এবং গুদাম। এতে করে প্রচুর সবজি কেনা দামের চেয়ে কম দামে বিক্রি করে দিতে বাধ্য হয়েছি। তারপরও ক্রেতারা খুশি না। তাদের ফ্রি দিলে মনে হয় খুশি হবে। এ ছাড়া খুশি হওয়ার আর কোনো উপায় নাই।’
এদিকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকায় থাকা পেঁয়াজের দাম আরও ৫ টাকা বেড়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। গত সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। গতকাল আরও ৫ টাকা বেড়ে ৫৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ভারতীয় পেঁয়াজ দেশি পেঁয়াজের তুলনায় ৫ টাকা কমে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
অপরদিকে আদা ও রসুনের দাম আগের সপ্তাহের মতোই রয়েছে বলে দাবি করেন তারা। গতকাল মানভেদে আদা ৯০ টাকা থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হয়। আর রসুন দেশি ও চায়না প্রকারভেদে ৮০ থেকে ১১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।
চলতি সপ্তাহে ডিমের দামও বাড়েনি বলে দাবি ডিম ব্যবসায়ীদের। গতকাল ৫০ টাকা হালিতে ডিম বিক্রি হয়। ডাল বিক্রি হচ্ছে একই দামে। অ্যাঙ্কর ডাল বিক্রি হচ্ছে ৫ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায়। এ ছাড়া মসুর ডাল, মুগ ডাল ও ছোলার ডাল আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে বলে জানান ক্রেতারা।
আগের সপ্তাহের তুলনায় চাল, আটা ও তেলের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে বলে জানা যায়। তবে চিনির দাম বেড়েছে। চিনির সঙ্কটের অজুহাতে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা বলে অভিযোগ ক্রেতাদের। বিক্রেতাদের দাবি, চিনি পাওয়া যায় না পর্যাপ্ত। আমরা বেশি দামে কিনে আনছি। তাই চিনি মানভেদে ১১০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি করছি।
এদিকে আজ থেকে বাজারে আসবে ইলিশ মাছ। এ কারণে অন্যান্য মাছের দাম কিছুটা কম বলে দেখা যাচ্ছে। রুই মাছ বড় আগের সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৩৫০ টাকা কেজিতে। সেই মাছ গতকাল ৩০০ থেকে ৩২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এ ছাড়া নিম্ন আয়ের মানুষের আমিষের চাহিদা পূরণ করা পাঙাশ বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। তেলাপিয়াও একই দামে বিক্রি হচ্ছে। বাজারে সবচেয়ে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে সামুদ্রিক মাছগুলো। ছোট এবং মাঝারি সাইজের রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৬৫০ টাকা দরে। বড় সাইজের রূপচাঁদা বিক্রি হচ্ছে ৯০০ থেকে ১০০০ টাকা দরে। এ ছাড়া কোরাল ৭৫০, বড় বোয়াল ৭০০, কাতল ৫৫০, শিং ৬০০ এবং চিংড়ি আকারভেদে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা যায়।