Logo
×

Follow Us

অর্থনীতি

পোশাকখাতে ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে সংকট

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৬ নভেম্বর ২০২২, ১০:৫৩

পোশাকখাতে ক্রমেই গাঢ় হচ্ছে সংকট

এক পোশাককর্মী কর্মস্থলে কাজ করছেন। ছবি: সংগৃহীত

দেশের পোশাক রপ্তানিকারকরা ব্যাংকে ডলার সংকট দেখা দেওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন। একদিকে তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় ও জরুরি জিনিসপত্র আমদানির জন্য ঋণপত্র খুলতে পারছেন না, আরেকদিকে পণ্য সরবরাহ করতে না পারায় ক্রেতাদের হারানো ভয়ে আছেন তারা। সবমিলিয়ে ডলার সংকটের প্রভাবে অস্তিত্ব হুমকির মুখে পড়েছে পোশাক ব্যবসায়ীদের।

পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক কোম্পানি আইএফএস টেক্সওয়ার লিমিটেড সাধারণত আল-আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক ও প্রিমিয়ার ব্যাংকে ঋণপত্র বা এলসি খুলে থাকে। আইএফএস টেক্সওয়ারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা জানান, ব্যাংক দুটিতে ঋণপত্র খোলার জন্য পর্যাপ্ত ডলার পাচ্ছেন না তারা। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক সালাহ উদ্দিন আহমেদ শামীম বলেন, ‘ডলার সংকটে আমদানির উদ্দেশ্যে কোনো ঋণপত্র খোলা সম্ভব হচ্ছে না। ব্যাংকে ১০০ শতাংশ মার্জিন দিলেও এলসি খুলছে না।’ তিনি বলেন, ‘ভালো ক্লায়েন্টের সাথে কাজ করতে গেলে অনেক ধরনের সার্টিফিকেট দরকার পড়ে। সার্টিফিকেট নবায়ন করতে গেলেও ডলারে পেমেন্ট করতে হয়। এছাড়া বিভিন্ন ধরনের এক্সেসরিজ বাইরে থেকে আনতে হয়। কিন্তু ডলার সংকটে ব্যাংক আমাদের নিরুৎসাহিত করছে।’

নারায়ণগঞ্জের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ফোর ডিজাইন লিমিটেড ব্যবস্থাপনা পরিচালক আতাউর রহমান জানান, তারা যে ব্যাংকের সাথে লেনদেন করেন, সেখানে ডলার সংকটের জন্য এলসি খুলতে পারছেন না। তিনি বলেন, ‘আগে দুই লাখ ডলার চাইলে পাওয়া যেত। এখন এ পরিমাণ চাইলে ব্যাংক ৬০-৭০ হাজারে বেশি ডলার দিচ্ছে না। ব্যাংকগুলো চাহিদার ৫০ শতাংশ ডলারও দিতে পারছে না।’

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ পোশাক রপ্তানিকারকদের কাঁচামাল আমদানি করতে হয়। এতোদিন অনেকেই রপ্তানি আয় দিয়েই আমদানি ব্যয় মেটাতেন। কিন্তু এখন রপ্তানিতেও কালো মেঘের ঘনঘটা। ফলে রপ্তানি আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে, যা সংকটকে আরো ঘনীভূত করেছে।

নারায়ণগঞ্জের লাইথ গ্রুপ সব ধরনের নিট পণ্য রপ্তানি করে। এই গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কবির মোহিউদ্দিন বলেন, ‘আমরা রপ্তানি করি, ফলে আমাদের কাছে ডলার থাকে। আমদানি করার সময় সেই ডলার ব্যয়ের সুযোগ আছে। কিন্তু গত তিন মাস ধরে তার কোম্পানির ৬০ শতাংশ রপ্তানি কমে গেছে। আগে যেখানে প্রতি মাসে রপ্তানি করতেন এক কোটি ডলার, সেখানে এখন করছেন ৪০ লাখ ডলার। ফলে রপ্তানির আয় দিয়ে আমদানি ব্যয় মেটানো কঠিন হয়ে পড়েছে।’

উল্লেখ্য, এতোদিন বাংলাদেশ ব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রার সঞ্চয়ন বা রিজার্ভ থেকে বেসরকারি ব্যাংকগুলোকে ডলারের জোগান দিয়ে এলেও, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তারাও হাত গুটিয়ে নিয়েছে। ব্যাংকগুলোকে এখন নিজেদের ডলার দিয়ে চলতে হচ্ছে। কিন্তু প্রবাসী আয় ও রপ্তানিতে টান পড়ায় সেই সক্ষমতাও হারাতে বসেছে তারা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যাংকের ট্রেজারি প্রধান বলেন, ‘কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা পাচ্ছে না বেসরকারি ব্যাংকগুলো। ফলে এলসি খোলার জন্য প্রতিদিন আমদানিকারকরা এলেও অতি প্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া তা হচ্ছে না।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে ডলার সহায়তা চাওয়ার বিষয়টি জানতে চাইলে একজন ট্রেজারি প্রধান জানান, গত তিন মাস ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কাছে এলসি খোলার জন্য ডলার চাইছে তার ব্যাংক। কিন্তু মিলেছে চাহিদার মাত্র ১০ শতাংশ।

এর আগে রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রিতে নতুন ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সব মিলিয়ে চলতি ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্রথম চার মাসেই (জুলাই-অক্টোবর) ৫০০ কোটি (৫ বিলিয়ন) ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। ফলে রিজার্ভ আরো কমেছে। গত সপ্তাহের শেষ দিন গত বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) দিন শেষে রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৩৫ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলার, যা এক বছর আগের চেয়ে প্রায় ১১ বিলিয়ন কম। গত বছরের ২ নভেম্বর রিজার্ভের পরিমাণ ছিল ৪৬ দশমিক ৪৯ বিলিয়ন ডলার। তার আগে ১২ আগস্ট অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে রিজার্ভ ৪৮ বিলিয়ন ডলারের মাইলফলক অতিক্রম করেছিল।

নিট পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিকিএমইএ) নির্বাহী সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা কাপড়ের এলসি খুলতে পারছেন না। রপ্তানি বাড়াতে মূলধনি যন্ত্রপাতি আনা জরুরি। কিন্তু এজন্যও ঋণপত্র খোলা যাচ্ছে না।’ 

তিনি আরো বলেন, ‘বস্ত্র শিল্পের জন্য দেশের বাইরে থেকে তুলা আমদানি করতে হয়। তুলা আমদানি করা না গেলে সুতা তৈরি হবে না। সুতা তৈরি না হলে কাপড় শিল্পের অগ্রগতি ব্যাহত হবে। কিন্তু তুলা আমদানিতেও এলসি খোলা যাচ্ছে না।’

মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘গত ২৬ অক্টোবর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক সার্কুলারে আমদানি বিলের দায় পরিশোধে এক দিন দেরি হলেও ব্যাংকের এডি লাইসেন্স বাতিলসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। আমি মনে করি এ সার্কুলার এ সময়ে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। কারণ গ্যাস সংকটে আমরা উৎপাদন করতে পারছি না। রপ্তানি করতে পারলেই না ব্যাক টু ব্যাক পেমেন্ট আসবে। এরপর আমি দায় পরিশোধ করতে পারব।’

Logo

সম্পাদক ও প্রকাশক: ইলিয়াস উদ্দিন পলাশ

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয়: ফেয়ার দিয়া ১১/৮/ই, ফ্রি স্কুল স্ট্রিট (লেভেল-৮), বক্স কালভার্ট রোড, পান্থপথ, ঢাকা ১২০৫