
চিনি। ছবি: সংগৃহীত
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির খড়গ দেশবাসীর কাঁধ থেকে কবে নামবে তা বলা মুশকিল। বাড়তি পণ্যমূল্যের ভার বহন করেই দৈনন্দিন জীবন পাড়ি দিচ্ছেন জনসাধারণ। একদিকে পণ্যের বাড়তি দাম আরেক সেই পণ্যের সরবরাহ কম এটাও দেশবাসীর কাছে সয়ে গেছে। কিন্তু এবার বাজার থেকে রীতিমতো একটি পণ্য উধাও হয়ে গেছে। রাজধানীর খুচরা বাজার থেকে চিনি যেনো একরকম উধাও হয়ে গেছে। কোনো দোকানে মিললেও সেখানে চাওয়া হচ্ছে আকাশচুম্বী দাম।
গতকাল রবিবার (১৩ নভেম্বর) রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রায় ৯০ শতাংশ দোকানেই চিনি মিলছে না। ক্রেতারা চিনি কিনতে গিয়ে হতাশ হয়ে ফিরে যাচ্ছেন। কোনো কোনো দোকানে পাওয়া গেলেও প্রতিদিনের দামের চেয়ে কয়েক গুণ বেশি দাম চাওয়া হচ্ছে। ক্রেতার শেষে হতাশ হয়ে চিনি না কিনেই বাড়ি ফিরছেন।
উল্লেখ্য, গেল এক মাসে লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে পণ্যটির মূল্য। বছর শেষে যা দাঁড়িয়েছে ২২ শতাংশে।
চিনি শিল্প বেসরকারিখাতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় এই পরিস্থিতি, দাবি কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশনের। যদিও উৎপাদন বাড়ানোর আশ্বাস শিল্প করপোরেশনের। সবকিছুর লাগামহীন দামে যখন নিম্ন-মধ্যবিত্তের নাভিশ্বাস, তখন কষ্ট আরো বাড়িয়েছে, গেল এক মাসের চিনির সংকট।
বাজার থেকে যেন একরকম উধাও এই নিত্যপণ্য। রাজধানীর বেশ কয়েকটি বাজার ঘুরে অল্প কয়েকটি দোকানে চিনি মিললেও দাম চড়া। ফলে প্রভাব পড়েছে মিষ্টিজাত পণ্যের দামেও।
এক্ষেত্রে এক ক্রেতা জানান, কোনো দোকানই খোলা চিনি বিক্রি করছে না। প্যাকেট চিনি চাইলেও পাচ্ছি না।
এদিকে এক মিষ্টি বিক্রেতা বলেন, চিনির দাম বাড়ায় মিষ্টির দাম প্রতি কেজিতে ২০ টাকা করে বাড়াতে হয়েছে।
টিসিবির তথ্য বিশ্লেষণে দেখা যায়, বছর শেষে চিনির দাম বেড়েছে প্রায় ২২ শতাংশ। আর এ পরিস্থিতির জন্য খুচরা বিক্রেতারা দায়ী করছেন কম সরবরাহকে।
এ বিষয়ে এক খুচরা বিক্রেতা জানান, ডিলারের কাছ থেকে আমরা চিনি পাচ্ছি না। তাই ক্রেতারা এলে আমরা বলি চিনি নাই।
তবে ডিলাররা দুষছেন মিল মালিকদের। তারা বলছেন, গ্যাস সংকট, ডলার ও পরিবহন খরচ বাড়ার অজুহাতে, আমদানি নির্ভর এই পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন মিল মালিকেরা।
মিল মালিকদের একজন বলেন, জ্বালানি সংকট থাকায় চাহিদার আলোকে রিফাইনিং হচ্ছে না।
দাম নিয়ন্ত্রণে অভিযান চলছে বাজার ও মিলগুলোতে। তবে কনজ্যুমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) বলছে, বর্তমানে চিনি শিল্প বেসরকারি খাতের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় অস্থির হয়ে উঠেছে বাজার।
ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, যদি ব্যবসায়ীরা দায়িত্বশীলতার পরিচয় না দেন, তাহলে সরকারকে সরাসরি চিনি আমদানি করে বাজার স্থিতিশীল করতে হবে।
চলমান পরিস্থিতিতে আমদানি নির্ভরতা কমিয়ে চিনির দেশীয় উৎপাদন আরো বাড়ানোর আশ্বাস শিল্প করপোরেশনের।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, আমরা প্রোডাকশন বাড়ানোর চেষ্টা করছি, যাতে অন্তত ১০ ভাগ মার্কেট শেয়ার আমরা নিতে পারি। আশা করি,পাঁচ বছরের মধ্যে আমরা আমাদের টার্গেট পূরণ করতে পারব।
বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশনের তথ্যমতে, দেশে পরিশোধিত চিনির চাহিদা বছরে প্রায় ১৮ লাখ টন। যার প্রায় ৯৮ শতাংশই আমদানি করতে হয়।