বিনিয়োগে মুশকিল-আসান ক্রাউডফান্ডিং

মাথায় ভিন্নধর্মী, দারুণ কোনো আইডিয়া ঘুরছে; কিন্তু পর্যাপ্ত অর্থাভাবে কাজটি করতে পারছেন না। এই সমস্যার সমাধান হতে পারে ক্রাউডফান্ডিং। এটি এমন এক পদ্ধতি যেখানে বন্ধু, পরিবার, গ্রাহক, এমনকি সম্পূর্ণ অপরিচিত মানুষদের কাছ থেকেও অর্থ সংগ্রহ করা যায়। ক্রাউডফান্ডিং আমাদের প্রথাগত বিনিয়োগ প্রক্রিয়া থেকে সম্পূর্ণ আলাদা একটি বিষয়। কারণ এখানে অর্থের পরিমাণ খুব অল্প হয়ে থাকে এবং অনেক মানুষ বিনিয়োগ করে থাকেন। এই ফান্ডিং সব সময় লাভের আশায় হয় না। 

ধরুন, অনেক সময় অসুস্থ কোনো বন্ধুর চিকিৎসার জন্য সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচার চালিয়ে টাকা সংগ্রহ করি। আবার জাতীয় দুর্যোগেও (বন্যা, ঘূর্ণিঝড়) অনেক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনকে অনুরূপ টাকা সংগ্রহ করতে দেখা যায়। সমাজের দুস্থ ও নিঃস্ব মানুষদের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে অনেকে প্রচার চালান। এসব প্রক্রিয়া কিন্তু ক্রাউডফান্ডিংয়েরই অংশ। এক কথায়, অনেকের কাছ থেকে অল্প অল্প করে জোগাড় করা প্রয়োজনীয় অর্থকে ক্রাউডফান্ডিং বলা হয়। 

ক্রাউডফান্ডিং সাধারণত তিন ধরনের হয়ে থাকে। সেগুলো হলো-দান-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং (Donation-Based Crowdfunding), পুরস্কার-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং (Reward-Based Crowdfunding) ও সমতা-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং (Equity-Based Crowdfunding)। 

দরিদ্র জনগণের জন্য স্কুল/মসজিদ/মন্দির নির্মাণ, দরিদ্র রোগীর চিকিৎসার খরচ সংগ্রহ, প্রাকৃতিক দুর্যোগে সাহায্যার্থে যেসব অর্থ সংগ্রহ করা হয় সেগুলো সাধারণত ‘দান-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং’ হয়ে থাকে। এ ধরনের প্ল্যাটফর্মে মানুষ কোনো প্রাপ্তি বা ব্যক্তিগত লাভের আশা না করেই প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগ করে। ‘পুরস্কার-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং’ প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগকারীরা প্রকল্পে অর্থ প্রদানের বিনিময়ে বিভিন্ন পুরস্কার (যেমন-অর্থ, পণ্য, পরিষেবা) পেয়ে থাকেন। এখানে টাকার বা পুরস্কারের পরিমাণ আগে থেকে উল্লেখ থাকে না। সাধারণত নতুন স্টার্টআপগুলো তাদের প্রকল্পের ক্ষেত্রে এই পদ্ধতি ব্যবহার করে থাকে। আর ‘সমতা-ভিত্তিক ক্রাউডফান্ডিং’ প্ল্যাটফর্মে বিনিয়োগকারীরা প্রকল্পে অর্থ বিনিয়োগের বিনিময়ে স্টার্টআপ কোম্পানির ইক্যুইটি (শেয়ার) পান। সাধারণত, এ পদ্ধতিতে সবচেয়ে বেশি অর্থ সংগ্রহ করা যায়। তবে এর ঝুঁকিও বেশি থাকে। 

ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে ফান্ড রাইজিংয়ের উপায় : ক্রাউডফান্ডিং নতুন উদ্যোক্তাদের জন্য তহবিল সংগ্রহের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার হতে পারে।GoFundMe, Kickstarter, Indiegogo, Patreon, AngelList, SeedInvest প্রভৃতি ক্রাউডফান্ডিয়ের কিছু জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম। এসব প্ল্যাটফর্ম থেকে তহবিল সংগ্রহে সফল হওয়ার জন্য ভালোরকম প্রস্তুতি দরকার। প্রস্তুতির প্রয়োজনীয় পদক্ষেপগুলো হলো-

বাজার গবেষণা : ক্রাউডফান্ডিংয়ের মাধ্যমে তহবিল সংগ্রহে প্রতিযোগীদের বিশ্লেষণ করতে বাজার (Marketplace) গবেষণা করুন।

প্রচারে কৌশল : ফেসবুক কিংবা যে কোনো প্ল্যাটফর্মেই ফান্ডিংয়ের টার্গেট করুন না কেন, সুন্দর ও সাবলীল ভাষায় সেখানে আইডিয়া উপস্থাপন করুন এবং লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। প্রয়োজনে ভিডিও তৈরি করুন।

সঠিক প্ল্যাটফর্ম : ক্রাউডফান্ডিংয়ের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে গবেষণা করুন। এরপর ধারণার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ একটি প্ল্যাটফর্ম বেছে নিন।

সমর্থকগোষ্ঠী (Follower) গড়ে তুলুন : নিজস্ব সাপোর্টার গড়ে তুলুন। এজন্য সোশ্যাল মিডিয়া মার্কেটিং ব্যবহার করুন এবং প্রয়োজনে ই-মেইল মার্কেটিংয়ের সাহায্য নিন।

মুদ্রার যেমন দুই পিঠ আছে, তেমনি ক্রাউডফান্ডিংয়েরও কিছু সুবিধা ও অসুবিধা আছে। অনেকগুলো সুবিধার একটি হচ্ছে ব্যাংক লোনের জটিল প্রক্রিয়ার বিপরীতে ক্রাউডফান্ডিং প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পৃথিবীর যে কোনো প্রান্ত থেকে দ্রুত অর্থ সংগ্রহ শুরু করা যায়। আর ক্রাউডফান্ডিংয়ের সবচেয়ে বড় অন্তরায় সময় ও ধৈর্য। সফল ফান্ডিং প্রচার তৈরি ও পরিচালনা করতে অনেক সময় ও পরিশ্রম লাগে। 

বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ক্রাউডফান্ডিংয়ে কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তথাপি বাংলাদেশ বর্তমানে ক্রাউডফান্ডিংয়ের জন্য আশাব্যঞ্জক অবস্থায় আছে। মানুষের দান বা বিনিয়োগের প্রবণতা, ইন্টারনেটের উচ্চ ব্যবহার এবং উদ্যোক্তাদের আগ্রহ-এসবই ক্রাউডফান্ডিংয়ের জন্য ইতিবাচক ভূমিকা পালন করে থাকে। তাই উদ্যোক্তাদের যথাযথ সহায়তা ও প্রশিক্ষণ নিশ্চিত করতে পারলে ক্রাউডফান্ডিং দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2024 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh

// //