ভারত থেকে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির সময় ২৭ দিন বাড়ানো হয়েছে। চাল আমদানির জন্য বরাদ্দ পাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ পর্যন্ত ভারত থেকে চাল আমদানি করতে পারবেন। গত ৬ জানুয়ারি খাদ্য মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারত থেকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে গত দুই মাসে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল আমদানি হলেও বেনাপোলসহ যশোরের বাজারে এর কোনও প্রভাব নেই। স্থানীয় বাজারে চালের দাম তো কমেনি বরং কেজিতে ৪ থেকে ৫ টাকা বেড়েছে।
খাদ্য মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. লুৎফর রহমান স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, বেসরকারিভাবে নন-বাসমতি সিদ্ধ চাল ও আতপ চাল আমদানির জন্য বরাদ্দপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে বরাদ্দ করা চাল আমদানির লক্ষ্যে এলসি (লেটার অব ক্রেডিট) খোলার সময়সীমা চাল আমদানির স্বার্থে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নির্দেশক্রমে বাড়ানো হলো।
আমদানিকারকরা বলছেন, ভারতে চালের দাম বেশি। তাই আমদানিকৃত চালের দামও বেশি। সেজন্য বর্তমান সময়ে চালের দাম কমার কোনও সম্ভাবনা দেখছেন তারা। এখন ধান-চালের ভরা মৌসুম, কৃষকের ঘরে উঠেছে আমন ধান। তারপরও সাধারণ মানুষকে বেশি দামেই চাল কিনে খেতে হচ্ছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা বলছেন, চালের দাম এমন পর্যায়ে পৌঁছে গেছে যে, সাধারণ খেটে খাওয়া মানুষদের ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। বর্তমানে দ্রব্য মূল্যের ঊর্ধ্বমুখীর কারণে স্বল্প আয়ের মানুষদের খেয়ে না খেয়ে দিন পার করতে হচ্ছে। প্রায় প্রতিদিনই বাড়ছে চালের দাম। বাজারে এমন কোন পণ্য নেই যে তার দাম বাড়েনি।
সরকার ভারত থেকে চাল আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের ঘোষণা দেওয়ার পর গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে এ বছরের ১৬ জানুয়ারি দুইমাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। সরকার গত ১৭ নভেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত অনুমোদন দেয় তিন লাখ ৯২ হাজার মেট্রিক টন চাল আমদানির। এ সময়ের মধ্যে আশানুরূপ চাল আমদানি না হওয়ায় সময় বৃদ্ধি করে চলতি মাসের ১৫ জানুয়ারি করে। সেখানে ও দেশের বাজারে চালের দাম না কমায় ভারত থেকে আমদানির জন্য আবারো ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত একমাস সময় বৃদ্ধি করেছে সরকার।
বেনাপোল চেকপোস্ট কার্গো শাখার রাজস্ব কর্মকর্তা আবু তাহের জানান, মাহবুবুল আলম ফুড প্রডাক্ট, অর্ক ট্রেডিং, সর্দার এন্টারপ্রাইজসহ ৮টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান বেনাপোল বন্দর দিয়ে এ চাল আমদানি করেছে। গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি পর্যন্ত ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল বেনাপোল দিয়ে আমদানি হয়েছে। এ পর্বে বেসরকারিভাবে চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয় ৯২টি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠানকে। এতে দুই লাখ ৭৩ হাজার মেট্রিক টন সেদ্ধ চাল এবং এক লাখ ১৯ হাজার মেট্রিক টন আতপ চাল আমদানির অনুমতি দেওয়া হয়। অনেক প্রতিষ্ঠান এই স্বল্প সময়ের মধ্যে চাল আমদানি করতে পারেনি। সরকার মাত্র ২৫ দিন সময় নির্ধারণ করে দেয় আমদানিকৃত চাল বাজারজাত করার জন্য। পরে তা ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত সময় বাড়ায়। ধীরগতিতে চলছে চাল আমদানি। তবে পর্যাপ্ত পরিমাণে চাল ভারত থেকে আমদানি না হওয়ায় আবারও একমাস সময় বাড়িয়েছে সরকার। এ সময়ের মধ্যে পর্যাপ্ত চাল আমদানি হলে হয়তো চালের দাম কমে আসবে।
অটোরাইস মিল মালিক ও ধান ব্যবসায়ীরা বলছেন, চলতি মৌসুমে ধানের দাম বেশি, যে কারণে কমছে না চালের দাম। এছাড়া ভারতে চালের দাম বেশি, এ কারণে আমদানিকৃত চাল কম দামে বাজারে বিক্রি করা সম্ভব হচ্ছে না।
শার্শা উপজেলা কৃষি অফিসার দীপক কুমার সাহা জানান, গত আমন মৌসুমে ধান চাষের এই উপজেলায় লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২১১৫০ হেক্টর, চাষ হয়েছে ২১ হাজার ৩৫০ হেক্টর জমিতে। এবার ধানের বাজার চড়া। ১৩৫০ থেকে ১৪৫০ টাকা মণে দাম পাচ্ছেন কৃষকরা।
সরেজমিনে এ অঞ্চলের অটোরাইস মিল ঘুরে দেখা যায়, এখনো ধান কিনতে পারেননি মিল মালিকরা। কৃষকরা তাদের ধান বাজারজাত করতে পারেননি এখনো। তবে মিল মালিকরা অন্য জেলা থেকে ৩২-৩৪ টাকা কেজি দরে ধান কিনে আনছেন। এসব ধান থেকে মোটা চাল প্রস্তুত করতে খরচ পড়ছে ৫২ টাকা এবং চিকন চাল প্রস্তুত করতে কোনোটা ৬৩ টাকা আবার কোনোটা ৭৩ টাকা পড়ছে।
বাজারের পাইকারি চাল ব্যবসায়ী ইকবাল হোসেন জানান, বর্তমানে মোটা চাল ৫২ টাকা, হীরা চাল ৪৮ টাকা, উনপঞ্চাশ চাল ৫৬ টাকা, আঠাশ চাল ৫৮-৬০ টাকা, জিরা মিনিকেট ৭৫, রড মিনিকেট ৬৫ টাকা, ইন্ডিয়ান মিনিকেট ৭৫ টাকা, বাসমতি ৯০, পাইজাম ৫৬ টাকা, স্বর্ণা ৫৫ টাকা ও নাজিরশাইল ৮০ টাকা কেজি দরে খুচরা বাজারে বিক্রি হচ্ছে।
উলাশীর খাজুরা সাজাহান অটো রাইস মিলের মালিক রুহুল আমিন বলেন, হাইব্রিড মোটা চাল ৫১ টাকা ও স্বর্ণা মোটা চাল ৫৩ টাকা কেজি পাইকারিতে বিক্রি হয়েছে। নতুন ধানের চাল বাজারে আসতে শুরু করেছে। অপর দিকে ভারত থেকে ও আমদানি স্বাভাবিক রয়েছে। এখন থেকে চালের দাম কমতে থাকবে। যদিও এবার অতিবৃষ্টির কারণে চালের উৎপাদন কমেছে। সে কারণে চাল আমদানি চলমান থাকবে।
বেনাপোল বাজারে চাল কিনতে আসা ভ্যানচালক ইয়াসিন আলী বলেন, বাজারে চালের দাম বেশি। আমরা গরিব মানুষ, দাম না কমলে কীভাবে খাবো? হয়তো সিন্ডিকেটের কারণে দাম কমছে না। তাই আমি মনে করি, প্রশাসন বাজারে নজরদারি করলে দাম অনেকটা কমে যাবে।
বেনাপোল বন্দরের পরিচালক মামুন কবীর তরফদার বলেন, গত বছরের ১৭ নভেম্বর থেকে চলতি বছরের ১৬ জানুয়ারি দুইমাসে বেনাপোল বন্দর দিয়ে শুল্কমুক্ত সুবিধায় ৯ হাজার ৬৬২ মেট্রিক টন চাল আমদানি হয়েছে। যেহেতু চাল একটি নিত্যপণ্য এবং দেশের বাজারে চাহিদা ব্যাপক, সেহেতু আমদানিকৃত চাল বন্দরে আসা মাত্র আমরা দ্রুত ছাড় করণের ব্যবস্থা করছি। চালের দাম নিয়ন্ত্রণে সরকার চাল আমদানির সময়সীমা ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বৃদ্ধি করেছে।
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh