১৫ লাখের মধ্যে ১০ লাখ রিটার্ন শূন্য: এনবিআর চেয়ারম্যান

চলতি করবর্ষে ১৫ লাখ আয়কর বিবরণীর মধ্যে ১০ লাখই ‘শূন্য রিটার্ন’ বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান।

সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনবিআর কার্যালয়ে অর্থনৈতিক রিপোটার্স ফোরামের (ইআরএফ) সঙ্গে প্রাক-বাজেট আলোচনায় তিনি এ কথা বলেন।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “১৫ লাখ ই-রিটার্নের মধ্যে প্রায় ১০ লাখ করদাতার করযোগ্য আয় নেই। এই পরিস্থিতি পেপার রিটার্নের ক্ষেত্রেও একই ছিল।”

এর অর্থ, ১০ লাখ করদাতা তাদের আয়কর বিবরণীতে যে বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন, তার বিপরীতে কোনো কর তাদের দিতে হয়নি।

বৈঠকে ইআরএফ বর্তমান মুদ্রাস্ফীতির চাপের কথা বিবেচনা করে করমুক্ত আয়ের সীমা সাড়ে তিন লাখ থেকে পাঁচ লাখ টাকা করার প্রস্তাব করে।

জবাবে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “ডিজিটাল সিস্টেমে স্থানান্তরের পরও পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। যদি কর সীমা চার লাখ বা তার বেশি করা হয়, তাহলে শূন্য রিটার্ন দাখিলকারীর সংখ্যা আরও এক লাখ বাড়তে পারে। আসল সমস্যা হল, গুণগত করদাতার সংখ্যা যথেষ্ট কম। যদি আমরা কর সীমা সামান্য বাড়াই, তবে আমরা অবশ্যই এই বিষয়ে আলোচনা করব।”

এই পরিস্থিতিকে একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে চিহ্নিত করে এনবিআর প্রধান বলেন, “এটি একটি চ্যালেঞ্জ-অত্যন্ত গুরুতর না হলেও, এটি চিন্তা করার মতো কিছু। আমাদের এটি সমাধান করা সম্ভব কি না তা মূল্যায়ন করতে হবে, এবং আমি বিশ্বাস করি, ইনশাআল্লাহ, আমরা এটি সমাধান করব।”

তিনি আরও বলেন, “দেশে বহু গুরুত্বপূর্ণ কর ফাঁকি দেওয়ার ঘটনা রয়েছে এবং এগুলো অনেক সময় অগোচরে থেকে যায়। নিয়মিত করদাতাদের প্রায়ই অনুসন্ধান করা হয়। এই বিষয়ে মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”

এনবিআরের গোয়েন্দা বিভাগগুলো কর ফাঁকি দাতাদের খোঁজে তাদের প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করেছে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

চেয়ারম্যান আরও বলেন, “যে সব করদাতা বর্তমানে কম করহার উপভোগ করছেন, তারা আগামী অর্থবছরে নিয়মিত করের হারে কর দিতে বাধ্য হবেন।”

তবে তিনি নিশ্চিত করেছেন, সম্পূর্ণ কর মওকুফ করা হবে না।

“কম করহার এর দাবি তোলার কোনো যৌক্তিকতা নেই। বরং, আপনাকে করযোগ্য আয় অনুযায়ী কর পরিশোধ করতে হবে। যদি করযোগ্য আয় না থাকে, তবে কর দেওয়ার প্রয়োজন নেই।”

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কর মওকুফ দিয়ে থাকি, কিন্তু অনেক ব্যবসায়ী এই সুবিধাগুলো বারবার বাড়ানোর জন্য চেষ্টা করেন বা অপব্যবহার করেন।”

কর ব্যবস্থার কিছু বিদ্যমান বৈষম্য আগামীতে সমাধান করা হবে বলে জানান এনবিআর চেয়ারম্যান।

আগামী বছরের করনীতিতে আয়কর বিধির ক্ষেত্রে বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “আসন্ন বাজেটে ছোট আমানতকারীদের এবং ঋণগ্রহীতাদের জন্য এক্সাইজ শুল্ক না রাখার জন্য কাজ করছে এনবিআর।”

তিনি আরও স্বীকার করেছেন যে, এনবিআরের কর নীতির লক্ষ্য বর্তমানে রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধি হলেও, পরিচালন দক্ষতা এবং কর ফাঁকি শনাক্তকরণের দিকে যথেষ্ট মনোযোগ দেওয়া হয়নি। এই বিষয়ে তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে বলে তিনি জানান।

তবে, এনবিআর মূল্য সংযোজন কর (ভ্যাট) সংগ্রহ এবং রাজস্ব সংগ্রহ বৃদ্ধির জন্য একটি ক্ষেত্রভিত্তিক প্রয়োগ কৌশল চালু করতে পারে বলে জানান।

ইআরএফ সভাপতি দৌলত আক্তার মালা সংস্থাটির বাজেট প্রস্তাবে ৩৫ টি দাবি তোলেন। প্রস্তাবগুলোর মধ্যে ছিল নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, শিক্ষা ও চিকিৎসা উপকরণে কর হার ৫ শতাংশে সীমিত রাখা, তামাকের কর বাড়ানো।





সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন

মন্তব্য করুন

Epaper

সাপ্তাহিক সাম্প্রতিক দেশকাল ই-পেপার পড়তে ক্লিক করুন

Logo

ঠিকানা: ১০/২২ ইকবাল রোড, ব্লক এ, মোহাম্মদপুর, ঢাকা-১২০৭

© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh