বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ নিয়ে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরতে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস যুক্তরাষ্ট্রের প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন বলে জানিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন। তিনি বলেন, “আমরা এখন আমাদের করণীয়গুলো বোঝার চেষ্টা করছি।”
বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ করে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে করণীয় ঠিক করতে শনিবার সন্ধ্যায় ‘জরুরি সভা’ ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ হোসেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিন, প্রধান উপদেষ্টার হাই রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমান, প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ দূত লুৎফে সিদ্দিকী, বিডার নির্বাহী আশিক চৌধুরী, বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর, প্রধান উপদেষ্টা মুখ্য সচিব সিরাজ উদ্দিন মিয়া, প্রধান উপদেষ্টার এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক লামিয়া মোরশেদ, অর্থ সচিব ড. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান, বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই) চেয়ারম্যান জাইদী সাত্তার।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষণার পর বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্প মালিকদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। এমন অবস্থার মধ্যে এ নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকেন প্রধান উপদেষ্টা।
গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র সরকারের একটি ঘোষণায় বাংলাদেশি পণ্যে ৩৭ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়। এতদিন বাংলাদেশের পণ্য শূল্ক হার ছিল সাড়ে ১৫ শতাংশ। নতুন সিদ্ধান্তে এটি হবে সাড়ে ৫২ শতাংশ।
দ্বিগুণের বেশি শুল্ক বাংলাদেশের রপ্তানিখাতকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে বলে শঙ্কা প্রকাশ করে সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে আলোচনায় সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থার তাগিদ দেন তৈরি পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিজিএমইএর বেশ কয়েকজন নেতা।
তাদের শঙ্কার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য তৈরি পোশাকের বড় অংশ রপ্তানি হয় যুক্তরাষ্ট্রে। দেশটিতে বছরে বাংলাদেশ প্রায় ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন (৮৪০ কোটি) ডলার মূল্যমানের পণ্য রপ্তানি করে, যার বেশিরভাগ আসে তৈরি পোশাক খাত থেকে।
অবশ্য এই শুল্ক বৃদ্ধির সমস্যাটি কেবল বাংলাদেশের জন্য নয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন সরকার যে নীতিতে শুল্কারোপ করেছে, তাতে একটি সাধারণ যে বিষয় ফুটে উঠেছে, সেটি হলো, কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে যত শতাংশ শুল্কারোপ করেছে, দেশটি সেই দেশের পণ্যে তার অর্থেক শুল্ক বসিয়েছে। তবে কোনো দেশ যদি ১০ শতাংশ শুল্ক দিয়ে থাকে, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রও দেশটির পণ্যে ১০ শতাংশই শুল্কারোপ করবে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য আমদানিতে গড়ে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, কয়েকজন ব্যবসায়ী নেতা ও অর্থনীতির গবেষক বলছেন, এ নিয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
শুক্রবারই প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম সংবাদ মাধ্যমকে বলেছিলেন, সরকার দ্রুতই ব্যবস্থা নেবে।
বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক পুনর্বিবেচনা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, “জাতীয় রাজস্ব বোর্ড দ্রুত শুল্ক যুক্তিসঙ্গত করার বিকল্পগুলো চিহ্নিত করবে, যে বিষয়টি সমাধানের জন্য প্রয়োজনীয়।”
বিশ্ব ব্যাংক (ঢাকা অফিস) এর সাবেক লিড ইকোনমিস্ট জাহিদ হোসেন বলেন, “আমেরিকা বলছে, বাংলাদেশে তাদের পণ্যের ওপর সরাসরি ও পরোক্ষভাবে ৭৪ শতাংশ শুল্ক আরোপিত হয়, যার ভিত্তিতে ট্রাম্প প্রশাসন ৫০ শতাংশ ছাড় দিয়ে ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে। এখন দরকার আলোচনার মাধ্যমে এই হিসাব খতিয়ে দেখা এবং যুক্তি তুলে ধরা।
“বাংলাদেশকে মার্কিন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে যে, পরোক্ষ শুল্ক হিসাবের ভিত্তিগুলো যথাযথ কি না। পাশাপাশি, সরকার ইতোমধ্যে যে সংস্কারগুলো করেছে, সেগুলো তুলে ধরা জরুরি।”
সাম্প্রতিক দেশকাল ইউটিউব চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করুন
© 2025 Shampratik Deshkal All Rights Reserved. Design & Developed By Root Soft Bangladesh