রাজধানীর পুরান ঢাকার সরকারি কবি নজরুল কলেজের শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ওয়াসিম রানার ঝুলন্ত মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গতকাল শুক্রবার (২ জুন) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে অচেতন অবস্থায় রানাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

রানার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

তিনি জানান, ওয়াসিম রানাকে অচেতন অবস্থায় ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। আমরা জানতে পেরেছি তিনি গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। তবে কী কারণে আত্মহত্যা করেছেন প্রাথমিকভাবে সেটি জানা যায়নি। মরদেহ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মর্গে রাখা হয়েছে। বিষয়টি বংশাল থানাকে জানানো হয়েছে।

রানা কবি নজরুল কলেজের ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ছিলেন। তিনি রাজধানীর নিমতলীর চাঁনখারপুল এলাকায় থাকতেন। তার বাড়ি বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলায়।

রানার বন্ধু ইমরান হোসেন বাবু বলেন, রানা সব সময় হতাশাগ্রস্ত থাকত। তবে কী কারণে হতাশাগ্রস্ত থাকত তা কখনো জানতে পারিনি। অনেকবার তাকে এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করেছিলাম। এক বছর আগে তার বাবা মারা যায়। তার আর এক ভাই ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। গত নভেম্বরে সে ছাত্রলীগের সভাপতি হয়েছে। তিন বছর কষ্ট করার পরে সে এই পদ পেয়েছিল। অথচ সে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করল। ও আমার অনেক কাছের বন্ধু ছিল। বিষয়টি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বৈবাহিক দাম্পত্যের কলহের জেরে ভিডিও কলে স্ত্রীকে রেখে চানখারপুলে একটি বাসায় আত্মহত্যা করেন তিনি। তার স্ত্রী সানজিদা আক্তার (জান্নাতি) কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাবেক ছাত্রী বিষয়ক সম্পাদক।

সানজিদা আক্তারের প্রতিবেশি মাইদুল ইসলাম বলেন, সানজিদা আপুকে আমরা জান্নাতি আপু বলে ডাকি। রানা ভাইয়ের সাথে তার বিয়ে হয়েছে অনেক দিন হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক কারণে সেটা সবাইকে জানানো হয়নি। জান্নাতি আপু ডেমরা রূপগঞ্জের তারাবোর একটি বাসায় থাকতেন। সামান্য মতবিরোধে রানা ভাই এতো বড় কাজ করে বসলেন।

এদিকে রানার স্ত্রী সানজিদা আক্তারকে ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালের মর্গের সামনে রাত দেড়টার সময় আহাজারি করতে দেখা যায়।

এসময় সানজিদা আক্তার জানান, আমাদের বিয়ে হয়েছে সাত বছর। এতোদিন পলিটিক্যাল কারণে জানানো হয়নি। তিনি আমাদের বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করতেন। গত এক সপ্তাহ আগে ছোট একটা ঘটনাকে কেন্দ্র করে রানা আমার গায়ে হাত তোলেন। আমার বাবা মা তখন ওর কাছে যেতে নিষেধ করে। শুক্রবার রাতে ও আমাকে ওর বাসায় আসতে বলে। না আসলে আত্মহত্যা করার হুমকি দেয়। ও এমনটা করবে আমি ভাবতেই পারিনি।

বংশাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মজিবুর রহমান বলেন, নাজিমুদ্দিন রোডে শেখ বোরহান উদ্দিন পোস্ট গ্র্যাজুয়েট কলেজের পেছনে একটি বাসায় ভাড়া থাকতেন রানা। সেখানে গলায় ফাঁস নিয়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। ঠিক কি কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন সে বিষয়ে এখনো কিছু জানা যায়নি। আমরা তদন্ত করে বিস্তারিত বিষয়গুলো জানার চেষ্টা করছি।